ঢাকা     বুধবার   ০৮ মে ২০২৪ ||  বৈশাখ ২৫ ১৪৩১

পরীক্ষায় জালিয়াতি ঠেকাতে বার কোড ও ড্রেস কোড

মো. আরিফুল ইসলাম || রাইজিংবিডি.কম

প্রকাশিত: ১৫:৩৩, ৬ অক্টোবর ২০১৫   আপডেট: ০৫:২২, ৩১ আগস্ট ২০২০
পরীক্ষায় জালিয়াতি ঠেকাতে বার কোড ও ড্রেস কোড

প্রশ্নপত্র ফাঁসের বিরুদ্ধে শিক্ষার্থীদের আন্দোলন

মো. আরিফুল ইসলাম : মেডিক্যাল ভর্তি পরীক্ষায় প্রশ্ন ফাঁসের অভিযোগে আবারও প্রশ্নবিদ্ধ শিক্ষাব্যবস্থা। এরই মধ্যে দরজায় কড়া নাড়ছে পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তি পরীক্ষা।চিন্তিত অভিবাবক, চিন্তিত ভর্তিচ্ছুরা।পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়েও কি ভর্তি পরীক্ষার প্রশ্ন ফাঁস হবে, এমন প্রশ্ন এখন দেশের লাখো শিক্ষার্থী ও তাদের অভিবাকদের মনে।

 

পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তি পরীক্ষার প্রশ্নফাঁসের সংস্কৃতি নেই বললেই চলে।এদিক থেকে সরকারি যেকোনো প্রতিষ্ঠানের চেয়ে পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়গুলো জনগণের কাছে বেশি আস্থা অর্জন করেছে। সেই অজপাড়া গাঁ থেকে এসে একজন মধ্যবিত্ত এমনকি নিম্নবিত্ত পরিবারের ছেলেমেয়ের পক্ষেও মেধার জোরে ভর্তি পরীক্ষায় প্রথম হওয়া কেবল পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়েই সম্ভব।

 

তবে ভর্তি পরীক্ষায় ডিজিটাল জালিয়াতি নতুন কিছু নয়।যদিও কঠোর নজরদারিতে জালিয়াত চক্রগুলোকে বেশিরভাগই  ব্যর্থ হতে দেখা যায়।

 

সাধারণত পরীক্ষা শুরুর পর জালিয়াত চক্রগুলো কিছু অসাধু কর্মকর্তা-কর্মচারীর সহায়তায় কেন্দ্র থেকে প্রশ্ন ফাঁস করে।শুরু হয় বিশেষ শিক্ষকদের দিয়ে প্রশ্নের সমাধান। পরীক্ষা কেন্দ্রে উত্তর পাঠানো হয় মোবাইল অথবা ডিজিটাল ঘড়ির মাধ্যমে।অনেক সময় জালিয়াত চক্রগুলো সফল হওয়ার মাধ্যমে ভর্তি পরীক্ষাকে প্রশ্নবিদ্ধ করে।তাই বিশ্ববিদ্যালয় ভর্তি পরীক্ষায় ডিজিটাল জালিয়াতি রোধ করতে নিম্নোক্ত দুটি পদ্ধতি অনুসরণের প্রস্তাব করছি।

 

১. বার-কোড : এ পদ্ধতিতে মূলত ভর্তি পরীক্ষায় একাধিক প্রশ্নের সেট করা হয়। সাধারণত ১৫ থেকে ২০টি প্রশ্নের সেট তৈরি করতে দেখা যায়। এক শিক্ষার্থীর প্রশ্নপত্রের সঙ্গে অন্য শিক্ষার্থীর প্রশ্নপত্রের সিরিয়ালে কোনো মিল না থাকায় শিক্ষার্থীরা একজন অন্যজনকে সহযোগিতা করতে ব্যর্থ হয়। প্রশ্নপত্রে যে বার কোড দেওয়া হয়, সে বার কোডটি আবার ওএমআর শিটেও দেওয়া হয়। ওএমআর মেশিনের মাধ্যমে বার কোড মিলিয়ে যাচাই করা হয়  উত্তরপত্র।এ পদ্ধতিতে কোনো পরীক্ষার্থীই জানতে পারে না তার সেট কোড কী? কারণ, প্রশ্নে প্রকাশ্য কোনো সেট কোড ব্যবহার করা হয় না। বিকল্প প্রশ্নের ক্ষেত্রে আলাদা সেটে সঠিক উত্তরের স্থানটিও পরিবর্তন করা হয়। যেমন : বাংলাদেশের রাজধানীর নাম কী? এই প্রশ্নের সঠিক উত্তর একটি সেটে ‘ক’ হলে আরেকটি সেটে ‘খ’ হবে।

 

এ পদ্ধতি অনুসরণের পরও যদি প্রশ্নপত্র কেন্দ্রের বাইরে চলে যায়, তখন সেট কোড না থাকায় জালিয়াত চক্রের পক্ষে সঠিক উত্তর পাঠানো সম্ভব নয়। উল্লেখ্য, বুয়েট এবং গত বছর থেকে ঢাকা ও জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়ে বার-কোড পদ্ধতিতে ভর্তি পরীক্ষার সফলতা সবার নজর কেড়েছে।

 

দুই. ড্রেস-কোড : ভর্তি পরীক্ষায় জালিয়াতি ঠেকাতে প্রথবারের মতো ড্রেস কোড অনুসরণ করার চিন্তা করছে জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ।মোবাইল ফোনসহ ইলেকট্রনিক ডিভাইস নিয়ে কেউ যাতে পরীক্ষার হলে ঢুকতে না পারে, সেজন্য পরীক্ষাকেন্দ্রে ছেলেদের ফুলহাতা শার্ট ও জুতা-মোজার পড়ার ওপর নিষেধাজ্ঞা আরোপ হচ্ছে। মেয়েদের স্কার্ফ ও হিজাব ব্যবহারের ক্ষেত্রেও থাকবে কড়া নজরদারি।এমন খবর প্রকাশের পর অনেককে বিরুপ মন্তব্যও করতে দেখা গেছে।তবে একজন রোভার স্কাউট সদস্য হিসেবে ভর্তি পরীক্ষায় নিজ  বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রধান ফটকে দায়িত্ব পালনের ব্যক্তিগত অভিজ্ঞতা থেকে ড্রেস কোডের সফলতা বিচার করা চেষ্টা করছি।

 

গত বছর জবি ভর্তি পরীক্ষার আগেই প্রধান ফটক দিয়ে যাওয়ার সময় এক ভর্তি পরীক্ষার্থীকে আমার সন্দেহ হয়।পাজামা-পাঞ্জাবি পরিহিত অবস্থায় মাথায় টুপির সঙ্গে পাগড়ি।পোশাক দেখে কারো পক্ষেই বোঝা সম্ভব নয় যে, সে একটু পর ভর্তি পরীক্ষায় জালিয়াতি করতে যাচ্ছে।প্রথম সন্দেহটা হয় তার ক্লিন শেভ করা দেখে।সঙ্গে সঙ্গে তার পায়ের পেছনে হাত দেই।হাত দিয়ে পাজামা ওপরে ওঠাতেই দেখা যায়, পায়ে স্কচটেপ দিয়ে আটকানো দুটি মোবাইল। ফুলহাতা শার্টের ভাঁজ, জুতা-মোজা এবং পাজামার নিচ থেকে চোখের সামনে এমন অনেক মোবাইল ও জালিয়াতি করার ইলেক্ট্রনিক ডিভাইস জব্দ করতে দেখেছি। মেয়েদেরও ধর্মীয় পোশাকের অপব্যবহার করে জালিয়াতির চেষ্টাকালে আটকের ঘটনাও ঘটেছে।মূলত ডিজিটাল জালিয়াতি করার ডিভাইসগুলো পোশাকের আড়ালে কেন্দ্রে নেওয়ার চেষ্টা করা হয়। তাই ভর্তি পরীক্ষায় ড্রেস কোড আরোপ করে ডিজিটাল জালিয়াতের দৌরাত্ম্য অনেকাংশে রোধ করা সম্ভব হবে বলে মনে করি।

 

এখন পর্যন্ত তিনটি পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তি পরীক্ষায় বার কোড পদ্ধতি চালু রয়েছে, যা ডিজিটাল জালিয়াতি ঠেকাতে অত্যন্ত কার্যকর। যদি এ বছর জবিতে ড্রেস কোড চালু হয় তা অবশ্যই জালিয়াতি রোধে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করবে।তাই সব  পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তি পরীক্ষায় ডিজিটাল জালিয়াতি রোধ করে ভর্তি পরীক্ষায় আরো স্বচ্ছতা আনতে  বার-কোড ও ড্রেস কোড চালু করা হোক।

 

লেখক : শিক্ষার্থী, জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়।

 

 

 

রাইজিংবিডি/ঢাকা/৬ অক্টোবর ২০১৫/রফিক

 

 

রাইজিংবিডি.কম

আরো পড়ুন  



সর্বশেষ

পাঠকপ্রিয়