‘আং চামা জুম’ (আমার মেয়ে সুস্থ হোক)
আরিফ সাওন || রাইজিংবিডি.কম
আরিফ সাওন : তৃতীয় সন্তান আসছে, এই ভেবে খুবই আনন্দিত ছিলেন বাবা সিংগাও ম্রো ও মা পাইন পাও। কিছুদিন পর জন্ম নিল কন্যা শিশু চিং রুম।
নতুন অতিথির আগমনে আনন্দের পাশাপাশি কিছুটা দুশ্চিন্তাতেও পড়লেন মা-বাবা। কারণ, জন্মের পর দেখলেন মেয়ের নাকের ওপর ছোট একটি টিউমার। প্রথমে বিষয়টি গুরুত্ব দেননি তারা।
মেয়ের জন্মের ৮ থেকে ৯ মাসের মাথায় দেখলেন, টিউমারটি ধীরে ধীরে বড় আকার ধারণ করছে। প্রথমে স্থানীয় চিকিৎসককে দেখালেন। তিনি পরামর্শ দিলেন চট্টগ্রামে গিয়ে বিশেষজ্ঞ চিকিৎসক দেখানোর। চট্টগ্রাম মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালের চিকিৎসকরা শিশুটিকে ঢাকায় নেওয়ার পরামর্শ দেন।
শুক্রবার সকালে তারা ঢাকা আসেন। শনিবার সকালে শিশুটিকে ঢাকা মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালের (ঢামেক) বার্ন অ্যান্ড প্লাস্টিক সার্জারি ইনস্টিটিউটে ভর্তি করা হয়। সেখানে তাকে দেখতে আসেন যোগাযোগমন্ত্রী ওবায়দুল কাদের। তিনি শিশুটির চিকিৎসার ব্যয় বহনের দায়িত্ব নেন।
শিশুটি বর্তমানে বার্ন অ্যান্ড প্লাস্টিক সার্জারি ইনস্টিটিউটের ৬ষ্ঠ তলায় ৬০৩ নম্বর কেবিনে চিকিৎসাধীন।
ঢামেক হাসপাতালে গিয়ে কথা হয় শিশুর বাবা সিংগাও ম্রোর সঙ্গে। তিনি একজন জুমচাষী। তার বাড়ি বান্দরবানের টংকাপতি ইউনিয়নের বাগানপাড়া ষোলমাইল জিমবুব রোডে।
সিংগাও ম্রো জানান, তিনি ২০০৮ সালে বিয়ে করেন। তখন তার বয়স ছিল ১৫ বছর। এখন তার বয়স ২৪ বছর। বিয়ের সময় তার স্ত্রী পাইন পাওয়ের বয়সও ছিল ১৫ বছর। তাদের ঘরে তিন সন্তান। ছেলে পাসিং (৭) ও মেয়ে চিংপাও (৫) শিশু শ্রেণিতে পড়ে। সবার ছোট মেয়ে চিং রুম (১)। এই ছোট মেয়েটিকে নিয়েই আজ টানা হ্যাচড়া।
মেয়েটি জন্মের পর থেকেই অসুস্থ। নাকের ওপর টিউমারটি ছোট থাকতে তার চোখ দুটো ভালোভাবে দেখা যেত। এখন এক চোখ টিউমারের সঙ্গে লেগে গেছে। সে শুধু বুকের দুধ পান করে। মুখে দাঁত উঠেছে চারটি।
বার্ন অ্যান্ড প্লাস্টিক সার্জারি ইনস্টিটিউটে গিয়ে দেখা যায়, শিশুটিকে কোলে নিয়ে কেবিনের ভেতর পায়চারি করছেন তার মা। মাঝে মাঝে শিশুটি শব্দ করলে মা নিজের মুখের কাছে এনে প্রাণখোলা হাসি দিয়ে স্নেহসুলভ কথা বলছেন। কখনও জানালার কাছে গিয়ে দূরে ভবন দেখানোর চেষ্টা করছেন।
পাইন পাও জানান (স্বামী বাংলায় বুঝিয়ে দেন), প্রথমে তারা মেয়েকে স্থানীয় চিকিৎসকের কাছে নেন। ওই চিকিৎসক চট্টগ্রামে নেওয়ার পরামর্শ দিলে সপ্তাহ খানেক আগে সেখানে নেওয়া হয়। চট্টগ্রাম মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালের পেডিয়াট্রিক সার্জারি ও পেডিয়াট্রিক ইউরোলজি বিভাগের সহকারী অধ্যাপক ডা. এম এ মুশফিকুর রহমান শিশুটিকে ঢাকায় আনার পরামর্শ দেন।
এই শিশুর সঙ্গে বান্দরবান থেকে এসেছেন থানছি সদর ইউনিয়নের চেয়ারম্যান মাংসার ম্রো ও একই এলাকার অনীল ত্রিপুরা। শিশুটির চিকিৎসা শেষ না হওয়া পর্যন্ত তারা ঢাকায় থাকবেন। তারা মিরপুরে বাসা ভাড়া নিয়েছেন।
অনীল ত্রিপুরা জানান, সকালে যোগাযোগমন্ত্রী ওবায়দুল কাদের শিশুটিকে দেখতে ঢাকা মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালে আসেন। তিনি শিশুটির চিকিৎসার ব্যয় বহনের প্রতিশ্রুতি দিয়েছেন।
অনীল ত্রিপুরা আরো জানান, বেশকিছু দিন আগে শিশুটির বাবা-মা চিকিৎসা সহায়তার জন্য চেয়ারম্যানের কাছে আসেন। তখন ছবি তুলে ফেসবুকে দেওয়া হয় এবং বিভিন্ন জায়গায় যোগাযোগ করা হয়।
তিনি বলেন, ‘বৃহস্পতিবার আমরা বান্দরবান থেকে ঢাকার উদ্দেশে রওনা হই। শুক্রবার সকালে ঢাকায় পৌঁছাই। এরপর মিরপুরে বাসা ভাড়া নেই। বাসার মালিক বলেছেন, যত দিনই আমরা ঢাকায় থাকব, ততদিনই তিনি ভাড়া নেবেন না।
বার্ন অ্যান্ড প্লাস্টিক সার্জারি ইনস্টিটিউটের সমন্বয়ক ডা. সামন্ত লাল সেন বলেন, ‘আমরা ধারণা করছি, প্লাস্টিক সার্জারি করতে হবে।
মেয়ের সুস্থ হয়ে ওঠার বিষয়ে আপনি কতটা আশাবাদী, এ প্রশ্নের জবাবে মা পাইন পাও বলেন, ‘আং চামা জুম কম লেন মা নাও মি’ (আমার মেয়ে তাড়াতাড়ি সুস্থ হয়ে উঠুক, এটাই আমার চাওয়া)।
রাইজিংবিডি/ঢাকা/২৮ মে ২০১৬/আরিফ সাওন/রফিক/শাহনেওয়াজ
রাইজিংবিডি.কম
আরো পড়ুন