ঢাকা     সোমবার   ১৫ ডিসেম্বর ২০২৫ ||  পৌষ ১ ১৪৩২

Risingbd Online Bangla News Portal

রাজশাহীর মাটিতে ভারতীয় পেঁয়াজ

শিরিন সুলতানা কেয়া, রাজশাহী || রাইজিংবিডি.কম

প্রকাশিত: ১২:৩৪, ৩১ ডিসেম্বর ২০২২  
রাজশাহীর মাটিতে ভারতীয় পেঁয়াজ

দেশে উৎপাদন করা শীতকালীন পেঁয়াজ ফুরিয়ে যাওয়ার পর হু হু করে বাড়তে থাকে অতিপ্রয়োজনীয় এই খাদ্য পণ্যটির দাম। ভারত থেকে আমদানি করা পেঁয়াজ দিয়ে মেটাতে হয় চাহিদা। ফলে পেঁয়াজের দাম বাজারে বাড়তে শুরু করে। আবার আমদানি করতে গিয়ে ব্যয় হয় বিপুল পরিমাণ ডলার। তাই দেশে পেঁয়াজের উৎপাদন বাড়াতে চাচ্ছে কৃষি বিভাগ।

পেঁয়াজের উৎপাদন বাড়াতে তাই দেশেই শুরু হয়েছে ভারতীয় পেঁয়াজ চাষ। এবার বর্ষা মৌসুমে শুধু রাজশাহীতেই প্রায় চার হাজার হেক্টর জমিতে ভারতীয় নাসিক-৫৩ জাতের পেঁয়াজ চাষ হয়েছে। এই পেঁয়াজের বীজ, সার, বীজতলা করার পলিথিন, সুতলি রশিসহ অন্যান্য সব উপকরণ চাষিদের বিনামূল্যে দিয়েছে কৃষি বিভাগ। 

আরো পড়ুন:

গত সেপ্টেম্বরে চাষিরা বীজতলা করেন। এরপর বীজতলা থেকে চারা তুলে জমিতে রোপণ করেছেন। এখন পেঁয়াজ উঠছে।

কৃষি বিভাগের তথ্যমতে, চলতি ২০২২-২৩ অর্থবছরে রাজশাহীতে ১৪ হাজার ১৪৫ হেক্টর জমিতে পেঁয়াজ চাষ হয়েছে। এরমধ্যে ৯ উপজেলায় নাসিক-৫৩ জাতের পেঁয়াজ চাষ হয়েছে প্রায় চার হাজার হেক্টর জমিতে। এই পেঁয়াজ চাষে চার হাজার চাষিকে এক কেজি করে বীজ প্রণোদনা দেওয়া হয়েছিল। চলতি মৌসুমে দুই লাখ ৭৭ হাজার ৫২৪ মেট্রিক টন পেঁয়াজের উৎপাদন লক্ষ্যমাত্রা ধরা হয়েছে। হেক্টরে ১৯ দশমিক ৬২ টন ফলনের আশা কৃষি বিভাগের।

ডিসেম্বরের দ্বিতীয় সপ্তাহ থেকে নাসিক-৫৩ জাতের পেঁয়াজ উঠতে শুরু করেছে। কৃষক বিঘাপ্রতি ফলন পাচ্ছেন ৭০ থেকে ৮০ মণ। লাল রঙের বড় বড় প্রতিটি পেঁয়াজের ওজন হচ্ছে ২৫০ থেকে ৩৫০ গ্রাম। ফলন ভালো হলেও বাজারে অবশ্য পেঁয়াজের দাম এখন কম। তাই চাষিদের একটু মন খারাপ। তারপরও লাভের আশা করছেন তারা। 

রাজশাহীর গোদাগাড়ী উপজেলার ধামিলা গ্রামের কৃষক মনিরুল ইসলাম এক বিঘা তিন কাঠা জমিতে ভারতীয় পেঁয়াজ চাষ করেছিলেন। ছোটগুলো রেখে সম্প্রতি তিনি জমি থেকে পেঁয়াজ তুলেছেন ৫৮ মণ। আরও পেঁয়াজ উঠবে তাঁর জমি থেকে। 
মনিরুল বলেন, ‘বিঘাপ্রতি এই পেঁয়াজ চাষে খরচ ২০ থেকে ২৫ হাজার টাকা। দাম ভালো থাকলে লাভ হওয়ার সম্ভাবনা রয়েছে।’

তিনি আরও বলেন, এত বড় পেঁয়াজ দেখে প্রথমে ভেবেছিলাম বৃষ্টির মধ্যে জমিতে থাকতেই পচন ধরবে। কিন্তু বৃষ্টি হলেও পেঁয়াজ পচেনি। বরং, ফলন ভালো হয়েছে। পাট কিংবা আউশ ধান তোলার পরে জমিটা আগে পতিত পড়ে থাকতো। কৃষি বিভাগের পরামর্শে এবার নাসিক-৫৩ জাতের পেঁয়াজ চাষ করে বাড়তি আয় হলো। আগামী বছরও এই পেঁয়াজ চাষ করবো।’

গোদাগাড়ীর ঈশ্বরীপুর এলাকার উপ-সহকারী কৃষি কর্মকর্তা অতনু সরকার জানান, শীতকালে তাদের এলাকায় স্থানীয় ‘তাহিরপুরি’ নামের একটি জাতের পেঁয়াজ চাষ হয়। বর্ষাকালে দেশে বারি পেঁয়াজ-৫ চাষ হয়। কিন্তু এই পেঁয়াজের বীজের খুব সংকট। এ জন্য গোদাগাড়ীতে বর্ষাকালে কোন পেঁয়াজই চাষ হতো না। এবার নাসিক-৫৩ চাষ হয়েছে। পতিত পড়ে থাকা জমিতে এই পেঁয়াজ চাষ করে কৃষকেরা বাড়তি টাকা আয় করেছেন।

তিনি আরও জানান, ভারত থেকে এখনও পেঁয়াজ আমদানি হচ্ছে বলে বাজারে দাম কম। এখন বাজারে পুরনো পেঁয়াজ ৪০ থেকে ৪৫ টাকা এবং নতুন ৩০ থেকে ৩৫ টাকা কেজি দরে বিক্রি হচ্ছে। নাসিক-৫৩ চাষিরা ব্যবসায়ীদের কাছে বিক্রি করতে পারছেন ১৮ থেকে ২০ টাকা কেজি দরে। ভারত থেকে পেঁয়াজ না এলে চাষিরা আরও ভালো দাম পেতেন। আরও ১০ থেকে ১৫ দিন জমি থেকে নাসিক-৫৩ জাতের পেঁয়াজ উঠবে।

জেলা কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের উপপরিচালক মোজদার হোসেন জানান, দেশে পেঁয়াজের উৎপাদন বাড়ানো এবং আমদানিনির্ভরতা কমানো নাসিক-৫৩ জাতের পেঁয়াজ চাষের উদ্দেশ্যে। পরীক্ষামূলকভাবে রাজশাহীতে এবারই প্রথম এই পেঁয়াজ চাষ করা হয়েছে। এতে প্রত্যাশার চেয়েও ভালে ফলাফল পাওয়া গেছে। আগামীতে চাষ আরও বাড়বে।

মাসুদ

সম্পর্কিত বিষয়:

সর্বশেষ

পাঠকপ্রিয়