ঢাকা     রোববার   ১৯ মে ২০২৪ ||  জ্যৈষ্ঠ ৫ ১৪৩১

দীর্ঘ অপেক্ষার ঈদ

ফারজানা ইসলাম || রাইজিংবিডি.কম

প্রকাশিত: ১১:৩১, ৮ এপ্রিল ২০২৪   আপডেট: ১৮:০৯, ৮ এপ্রিল ২০২৪
দীর্ঘ অপেক্ষার ঈদ

ঈদকে ঘিরে বাকি সবার মতো আমারও মনে ভেসে উঠে নানা স্মৃতি। সেসব স্মৃতির মধ্যে যে কথাটি সবার প্রথমে মনে আসে সেটি হলো- প্রথম রমজান থেকে ছুটি হয়ে যেত স্কুল। আর স্কুল ছুটির নোটিশ পেতে না পেতেই যেন শুরু হতো ঈদ। প্রথম রমজানে ঠিক সন্ধ্যায় এলাকার বন্ধু-বান্ধব মিলে বাড়ির পাশের ছোট মাঠে দাঁড়িয়ে থাকতাম চাঁদ দেখার অপেক্ষায়। চাঁদের দেখা পাই বা না পাই আনন্দটা ছিল আকাশচুম্বী।

তার একটু পরেই মসজিদের মাইকে মুয়াজ্জিনের রমজানের শুভেচ্ছা জানানোর বিষয়টা আমাদের খুশিকে দ্বিগুণ করে দিত। এরপর শুরু হতো শেষ রাতে ঘুম থেকে ওঠার যুদ্ধ। একটু পর পর আম্মু, বড় আপু, মেজ আপু, বাবা সবাই এসে ডাকতো ঘুম থেকে ওঠার জন্য। আমাকে ঘুম থেকে উঠানো ছোটখাটো যুদ্ধ বলা চলে। কোনো রকম সেহরি শেষ করতাম। পরের দিন শুরু হতো আর একটা পার্ট সেটি হল- ‘আজান কখন দিবে?’ আমার এ প্রশ্ন শুনতে শুনতে আম্মু মাঝে মাঝে বিরক্ত হয়ে বলতো- ‘আজ সেহরিতে তোকে কে ডাকে সেটাই দেখব।’

কয়েকটি রোজা যেতে না যেতেই শুরু হতো ঈদের নতুন জামা কেনা। এটি নিয়েও রয়েছে হাজারও স্মৃতি। বাকি বন্ধু-বান্ধবদের মতো আমারও মনে হতো, এই জামা কেউ দেখলে আমার আর ঈদ হবে না কিংবা আমার জামা পুরাতন হয়ে যাবে। তাই জামা কিনে আলমারিতে লুকিয়ে রাখতাম, যেন কেউ না দেখে।

এসবের মধ্যে আমার অন্যতম স্মরণীয় স্মৃতি হলো, ঈদের ঠিক কিছুদিন আগে থেকে সারা বছর জমিয়ে রাখা ঈদকার্ড বিক্রি করতাম আমার সমবয়সী বন্ধুদের কাছে। বাড়ির বারান্দাটা ছিল আমার ছোট্ট দোকান। আজও মনে আছে, তখন ২০১১ সাল প্রথমবার কার্ড বিক্রি করে আমি ৫০ টাকা পেয়েছিলাম। সে টাকা পেয়ে আমার খুশি আর কে দেখে।

ঈদের আগের রাতকে আমরা চাঁদ রাত বলে থাকি। শেষ রমজানের ইফতার শেষ করেই আবারও ছুটে যেতাম সেই মাঠে ঈদের চাঁদ দেখতে। চাঁদ রাতে বন্ধু-বান্ধব মিলে নানারকম খেলাধুলা করতাম, সবাই মিলে একসাথে বসে হাতে মেহেদি লাগাতাম আর সাথে চিরচেনা সেই গান- ‘ও মোর রমজানের ঐ রোজার শেষে এলো খুশির ঈদ।’

এরপর চলে আসে কাঙ্খিত সেই ঈদ। ঈদের দিন ভোরবেলা ঘুম থেকে উঠে গোসল করে পরতাম ঈদের নতুন জামা। নতুন জামা গায়ে দিয়ে পরিবারের বড় সদস্যদের সালাম দিতাম আর চকচকা নতুন নোট সালামি পেতাম। তখন টাকার অংকটা বড় বিষয় ছিল না, কে কত সালামি পেল এটা নিয়ে বন্ধুদের সঙ্গে পাল্লা দেওয়াটাই ছিল বড়। 

এরপর পরিবারের সবাই মিলে ঈদগাহে গিয়ে ঈদের নামাজ আদায় করতাম। নামাজ শেষে সবাই একে ওপরকে বুকে জড়িয়ে কোলাকুলি করাটা আমার খুব ভালো লাগতো। ঈদগাহ থেকে বাড়ি ফিরে শুরু হয়ে যেত আত্মীয়-স্বজনদের বাড়ি ঘুরতে যাওয়া, নানা ধরনের খাবার খাওয়া, গল্প করা, খেলাধুলা করা। এভাবেই দুপুর গড়িয়ে বিকেল হয়ে যেত। বিকেলে বাবার সঙ্গে সব ভাই-বোন মিলে ঘুরতে যেতাম। বিভিন্ন ধরনের খাবার খেতাম বিভিন্ন রকম খেলনা কিনতাম। রাতে বাড়ি ফিরে বসে পড়তাম টিভির সামনে সে সময় টিভিতে সম্প্রচারিত হতো বহুল আলোচিত একটি বিনোদনমূলক অনুষ্ঠান- ‘ইত্যাদি’। পরিবারের সবাই মিলে অনুষ্ঠানটি উপভোগ করতাম আর এভাবেই কেটে যেত সেই স্মৃতি বিজড়িত ঈদগুলো। 

সব মানুষ তাদের সর্বাধিক স্মরণীয় স্মৃতিগুলো ফেলে আসে শৈশব বা কৈশোরে। আমিও তাদের ব্যতিক্রম নই। শৈশবের স্মরণীয় ঈদগুলো সময়ের ব্যবধানে এখন শুধুই স্মৃতি। এখনো মাঝে মাঝে ভাবনায় আসে সেসব দিনের কথা। যা আর কখনো ফিরে পাওয়া সম্ভব না, সে সব ফেলে আসা দিনগুলো এখন শুধু রয়ে গেছে স্মৃতির পাতায়।

-শিক্ষার্থী, ব্যবস্থাপনা বিভাগ, রাজশাহী কলেজ

আরও পড়ুন-

জলরঙের ঢেউ

আব্বুকে হারানো ঈদ

ভাইবোনের কাণ্ড

পুরোনো সেই ঈদের স্মৃতি

মধ্যবিত্ত হাসি

আনন্দ-বিষাদের ঈদ

শৈশবের ঈদ

২০ টাকা সালামি

ঈদের সেরা মুহূর্তনামা

/মেহেদী/এসবি/লিপি/

সম্পর্কিত বিষয়:

আরো পড়ুন  



সর্বশেষ

পাঠকপ্রিয়