ঢাকা     রোববার   ১৪ ডিসেম্বর ২০২৫ ||  অগ্রহায়ণ ৩০ ১৪৩২

Risingbd Online Bangla News Portal

রঙিন স্কুলে ফিরতে শিক্ষার্থীদের দীর্ঘ অপেক্ষার শেষ হচ্ছে

মাগুরা প্রতিনিধি || রাইজিংবিডি.কম

প্রকাশিত: ১৯:২০, ১১ সেপ্টেম্বর ২০২১   আপডেট: ২০:২৪, ১১ সেপ্টেম্বর ২০২১

মাগুরার মহম্মদপুর উপজেলার নহাটা মডেল সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়। বিদ্যালয়ের দেয়াল জুড়ে শিক্ষামূলক রঙিন নানা ছবি আঁকা। প্রত্যেক দেয়ালে মনিষির ছবি ও তাঁদের বাণী শেভা পাচ্ছে। শ্রেণি কক্ষের দেয়ালগুলো জাতীয় পতাকার রঙে রঙিন।

বিদ্যালেয়টির মধ্যে বঙ্গবন্ধু কর্ণার, বঙ্গবন্ধু বুক কর্ণার, শেখ রাসেল বুক কর্ণার, কাজী নজরুল ইসলাম ও রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর কর্ণার রয়েছে।  বিদ্যালয়টির মাঠে রয়েছে খেলার নানা ধরনের উকরণ।

আরো পড়ুন:

সাজানো গোছানো এমন পরিপাটি স্কুল অথচ তারপরও চারদিক হাহাকার। কারণ যাদের জন্য এতো আয়োজন সেই শিক্ষার্থীরাই নেই।

করোনা মহামারির মধ্যে প্রায় ১৮ মাস শিক্ষার্থীরা অনুপস্থিত বিদ্যালয়টিতে।  অবশেষে দীর্ঘ অপেক্ষা শেষ হচ্ছে রবিবার।  আবারো প্রাণ ফিরে পেতে চলেছে বিদ্যালয়টি।

শুধু নহাটা নয় মাগুরা জেলার চারটি উপজেলার ৫০৩টি রঙিন সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীরা (১২ সেপ্টেম্বর) স্কুলে ফিরছে।

সংশ্লিষ্ট সূত্রে জানা গেছে, জেলার চারটি উপজেলায় ৫০৩টি সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় রয়েছে।  এরমধ্যে সদর উপজলায় ১৮৩টি, মহম্মদপুর উপজেলায় ১৩৪টি, শালিখায় উপজেলায় ১০২টি এবং শ্রীপুর উপজেলায় ৮৪টি সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় রয়েছে।  

এসব বিদ্যালয়ে শিশু শ্রেণি থেকে পঞ্চম শ্রেণি পর্যন্ত প্রায় ৮৭ হাজার শিক্ষার্থী লেখাপড়া করে।  বিদ্যালয়গুলেতে ৪৩৪ জন প্রধান শিক্ষক ও ২ হাজার ৭৪০জন সহকারি শিক্ষক-শিক্ষিকা কর্মরত আছেন।

করোনা মহামারিতে বন্ধ থাকা বিদ্যালয়গুলোর জন্য মেরামত বাবদ ১ লাখ ৭৩ হাজার টাকা, বিদ্যালয় পর্যায়ে উন্নয়ন পরিকল্পনা (স্লিপ) ফান্ড ৭০ হাজার টাকা, রুটিন ওয়ার্ক ৪০ হাজার টাকা, শিশু শ্রেণি ১০ হাজার টাকা, ওয়াশ ব্লক ২০ হাজার টাকা ও প্রাকৃতিক দুর্যোগ বাবদ ৫ হাজার টাকা সরকারি সহায়তা প্রদান করা হয়।  

অথ্যাৎ বিদ্যালয় প্রতি ৩ লাখ ১৮ হাজার টাকা হিসেবে জেলার ৫০৩ স্কুলে প্রায় ১৫ কোটি ৯৯ লাখ ৫৪ হাজার টাকা সরকারি বরাদ্দ প্রদান করা হয়।

এসব বরাদ্দের টাকা দিয়ে বিদ্যালয়ের অবকাঠামো মেরামত, দেয়ালে রঙ দেওয়া, ছবি আঁকা, শিশুদের পাঠদানের জন্য আকর্ষণীয় শিক্ষা উপকরণ, ক্রীড়াসামগ্রী, আসবাবপত্র ক্রয়, স্যানিটেশন ও বিশুদ্ধ খাবার পানি সরবরাহের ব্যবস্থা নেওয়া হয়।

সরেজমিনে শনিবার (১১ সেপ্টেম্বর) পাঁচটি সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় ঘুরে দেখা গেছে, বিদ্যালয়ের দেয়ালগুলো জাতীয় পতাকার লাল-সবুজ রঙ দিয়ে সাজানো হয়েছে।  দেয়াল জুড়ে মিনা কার্টুনের মাধ্যমে নানা বিষয় তুলে ধরা হয়েছ্। বাংলা ইরেজি ও গণিতের বড় আকৃতির নানা রঙের বর্ণমালা শোভা পাচ্ছে চারদিক।  বিদ্যালয়ের দেয়াল জুড়ে মনিষিদের ছবি বাণী অঙ্কন করা হয়েছে।  স্কুলের মাঠ স্যানটেশন, খেলার মাঠ, আসবাবপত্র ও খাবার পানির ব্যবস্থা পরিস্কার পরিচ্ছন্ন করা হয়েছে। এখন সবাই অপেক্ষা করছেন সেই মাহেন্দ্র ক্ষণের।  স্কুলের প্রাণ শিক্ষার্থীদের জন্য।

মহম্মদপুর উপজেলার সদরের সূর্যুকুন্ডু সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের পঞ্চম শ্রেণির শিক্ষিার্থী সুমাইয়া, সুরমা, তাহেরা, জুলফিকার ও নাইম জানায়, বিদ্যালয়ে আসার জন্য তাদের আর তর সইছে না।  দীর্ঘদিন ছুটি কাটানোর পর তারা আবারো স্কুলে যাবে।  তাদের আনন্দ আর ধরছে না।

মহম্মদপুর উপজেলার নহাটা মডেল সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক মো. কবিরুল হাসান বলেন, ‘বিদ্যালয়কে সাজাতে তাঁরা বছর জুড়ে কাজ করছেন।  তবে তৃপ্ত হচ্ছিলেন না।  যাদের জন্য এতো আয়োজন তারাই ছিলোনা স্কুলে।  শিক্ষার্থীদের স্কুলে ফেরার খবরে সবাই খুশি। ’

সদর উপজেলার আলোকদিয়া সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক কামরুল ইসলাম বলেন, ‘আমাদের অপেক্ষা শেষ হচ্ছে।  শিক্ষার্থীরা স্কুলে আসবে। সুসজ্জিত এসব বিদ্যালয়ের সব আয়োজন ছাত্রছাত্রীদের জন্য।’

শ্রীপুর উপজেলার  বাখেরা সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক আসাদুজ্জামান শেখ বলেন, ‘সব প্রস্তুতি শেষ।  এখন আমাদের অপেক্ষা শিক্ষার্থীদের বরণ করার।’

মাগুরা জেলা প্রাথমিক শিক্ষা অফিসার (ডিপিইও) কুমারেশ চন্দ্র গাছী বলেন, ‘বিদ্যালয় খোলার সিদ্ধান্তের পর থেকেই শিক্ষকেরা স্কুলে যাচ্ছেন্। বিভিন্ন সময় সরকারি বরাদ্দের অর্থ দিয়ে শিক্ষার্থীদের জন্য নানা কাজ করা হয়েছে। স্কুলের শ্রেণিকক্ষ ও শিক্ষা উপকরণের পাশাপাশি কেনা হয়েছে মাস্ক হ্যান্ডস্যানিটাইজার ও জর মাপার যন্ত্র।  স্বাস্থ্যবিধি মেনে রবিবার থেকে পাঠদান শুরু হচ্ছে।  আমরা এই দিনটির জন্য অপেক্ষা করছি আঠারো মাস।’

শাহীন/মাসুদ

সর্বশেষ

পাঠকপ্রিয়