ঢাকা     রোববার   ১৯ মে ২০২৪ ||  জ্যৈষ্ঠ ৫ ১৪৩১

প্রথমবার সরাসরি বৈঠক করলো কেএনএফ ও শান্তি প্রতিষ্ঠা কমিটি

বান্দরবান প্রতিনিধি || রাইজিংবিডি.কম

প্রকাশিত: ১৭:০২, ৫ নভেম্বর ২০২৩   আপডেট: ১৭:০৬, ৫ নভেম্বর ২০২৩
প্রথমবার সরাসরি বৈঠক করলো কেএনএফ ও শান্তি প্রতিষ্ঠা কমিটি

পাহাড়ি সশস্ত্র সংগঠন কুকিচিন ন্যাশনাল ফ্রন্টের (কেএনএফ) সঙ্গে প্রথমবার সরাসরি বৈঠক করেছে শান্তি প্রতিষ্ঠা কমিটি।

রোববার (৫ নভেম্বর) সকাল সাড়ে ১১টার দিকে বান্দরবানের রুমা উপজেলা সদর থেকে ৫ কিলোমিটার দূরে মুনলাইপাড়া কমিউনিটি সেন্টারে এই বৈঠক শুরু হয়।

দুই ঘণ্টা ধরে চলা বৈঠকে উভয় পক্ষ প্রাথমিকভাবে একটি সমঝোতা স্বারক সই করেছে বলে জানিয়েছেন শান্তি প্রতিষ্ঠা কমিটির মুখপাত্র কাঞ্চন জয় তঞ্চগ্যা।

বৈঠকে শান্তি প্রতিষ্ঠা কমিটির চেয়ারম্যান ক্য শৈ হ্লার নেতৃত্বে মুখপাত্র কাঞ্চন জয় তঞ্চগ্যা, সদস্য মনিরুল ইসলাম, মনু লেলুং খুমী, বাসিং থোয়াই, লালজার বম ও জারলম বমসহ ৮ সদস্য অংশ নেন।

কেএনএফের পক্ষে বৈঠকে অংশ নেন সংগঠনটির ৫ সদস্য। এছাড়াও, অতিরিক্ত জেলা প্রশাসক সাইফুল ইসলাম, অতিরিক্ত পুলিশ সুপার শাহ আলম ও আইন শৃঙ্খলা বাহিনীর ঊধ্বর্তন কর্মকর্তারা উপস্থিত ছিলেন। বৈঠকে কেএনএফ প্রধান নাথান বম উপস্থিত ছিলেন না। 

এর আগে, কেএনএফ ও শান্তি প্রতিষ্ঠা কমিটি কয়েকবার ভিডিও কনফারেন্সে বৈঠক করেছে। এবার পাহাড়ে চলমান সংঘাত নিরসনে শান্তি প্রতিষ্ঠা কমিটির সঙ্গে এই প্রথম কেএনএফ সরাসরি বৈঠকে অংশ নিলো।

শান্তি কমিটির মূখপাত্র কাঞ্চন জয় তঞ্চগ্যা জানান, বৈঠককে ঘিরে মুনলাই পাড়ায় কড়া নিরাপত্তা ব্যবস্থা নেওয়া হয়। পুলিশ ও বিজিবি'র পাশাপাশি মোতায়েন ছিল আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর বিপুল সংখ্যক সদস্য। বৈঠকে কেএনএফ-এর পক্ষ থেকে পূর্বে উত্থাপিত ৬ দফা দাবিসহ শান্তি কমিটির মাধ্যমে প্রধানমন্ত্রী বরাবর পৌঁছানোর পাশাপাশি বম সম্প্রদায়ের লোকজনকে নিত্যপ্রয়োজনীয় বাজার ক্রয়ে বিধিনিষেধ তুলে নেওয়া, কেএনএফ’র আটককৃত ৬১ জনের মুক্তির দাবি জানানো হয়েছে। পরে উভয় পক্ষের মধ্যে একটি সমঝোতা স্বারক স্বাক্ষরিত হয়।

বান্দরবান পার্বত্য জেলা পরিষদ ও শান্তি কমিটির চেয়ারম্যান ক্য শৈ হ্লা জানান, কেএনএফের সঙ্গে সামনা সামনি প্রথম বৈঠক খুবই আন্তরিক ও শান্তিপূর্ণভাবে সম্পন্ন হয়েছে। আগামী ডিসেম্বর মাসে আরো একটি বৈঠক অনুষ্ঠিত হবে। এই বৈঠকের মাধ্যমে চলমান সমস্যা নিরসন হবে বলেও প্রত্যাশা করেন তিনি।

কুকিচিন-এর করা  ছয় দফা দাবি হলো- প্রান্তিক অঞ্চলের অনগ্রসর ও সুবিধাবঞ্চিত কুকি-চিন জনগোষ্ঠীর বিলীয়মান সাংস্কৃতিক বৈশিষ্ট্য রক্ষাসহ শান্তি প্রতিষ্ঠা ও সার্বিক উন্নতি সাধনের লক্ষ্যে ‌‘কুকি-চিন টেরিটোরিয়াল কাউন্সিল’ (কেটিসি) নামে স্বায়ত্তশাসিত পরিষদ গঠন করা। ভূমি ও পর্যটন‌ বিষ‌য়ক সংক্রান্ত সব কর্মকাণ্ড সমূহের সর্বময় ক্ষমতা কেটিসি'র উপর সম্পূর্ণভাবে অর্পণ করা। এসব অঞ্চ‌লে পুলিশ বাহিনীতে নিয়োগ প্রদানসহ সব ক্ষমতা কেটিসির উপর অর্পণ করা। কেএনএফ’র সশস্ত্র সদস্যসহ অন্যান্য নিরীহ ব্যক্তিদের যাদের বিরুদ্ধে মামলা, গ্রেপ্তারি পরোয়ানা, হুলিয়া জারি অথবা অনুপস্থিতিকালে বিচারে শাস্তি প্রদান করা হয়েছে, আত্মসমর্পণ ও স্বাভাবিক জীবনে প্রত্যাবর্তনের পর যত দ্রুত সম্ভব তাদের বিরুদ্ধে সব মামলা, গ্রেপ্তারি পরোয়ানা, হুলিয়া প্রত্যাহার করা এবং অনুপস্থিতকালীন প্রদত্ত সাজা মওকুফ করা। কেএনএফ'র কোনও সশস্ত্র সদস্য বা কেএনএফ’র নামে নিরীহ ব্যক্তিদের জেলে আটক থাকলে তাদেরও বিনাশর্তে মুক্তি প্রদান কর‌তে হ‌বে। ১৯৭১ সালের পর থেকে স্বাধীনতা যুদ্ধের কারণে এবং ২০২২ ও ২০২৩ সালে কুকিচিন অঞ্চলে ব্যাপক সেনা অভিযানের ফলে পার্শ্ববর্তী অঞ্চলসমূহে তথা ভারতের মিজোরাম এবং মিয়ানমারের পালেতুয়া এলাকায় পালিয়ে গিয়ে বিভিন্ন সময়ে আশ্রয়গ্রহণ করা কুকি-চিন শরণার্থীদের সসম্মানে দেশে ফিরিয়ে এনে পুণর্বাসনের ব্যবস্থা করা। কুকিচিন আর্মড ব্যাটেলিয়ন (কেএবি) নামে সশস্ত্র পদাতিক ব্যাটালিয়ন গঠন কর‌তে হ‌বে। দেশের ভূখণ্ডের স্পর্শকাতর সীমান্তিক অঞ্চলের নিরীহ জনগণ তথা পাহাড়ি-বাঙালি জানমাল রক্ষা, সন্ত্রাস দমনসহ নিরপেক্ষভাবে শান্তি প্রতিষ্ঠার উদ্দেশ্যে যাবতীয় কর্মকাণ্ড পরিচালনার স্বার্থে অত্রাঞ্চলের বিশেষ প্রয়োজনে কুকিচিন জনগোষ্ঠীদের নিয়ে পৃথকভাবে ‘কুকিচিন আর্মড ব্যাটেলিয়ন’ বা কেএবি গঠন করা। কেএবি প্রতিরক্ষা মন্ত্রণালয়ের অধীনে বাংলাদেশ সেনাবাহিনীর চট্টগ্রামের এরিয়া কমান্ডার (জিওসি) তত্ত্বাবধানে থাকবে।

চাইমং/মাসুদ

আরো পড়ুন  



সর্বশেষ

পাঠকপ্রিয়