ঢাকা     শুক্রবার   ০৫ ডিসেম্বর ২০২৫ ||  অগ্রহায়ণ ২০ ১৪৩২

Risingbd Online Bangla News Portal

প্রতিবন্ধী ছেলের যত্নে বৃদ্ধ মায়ের ক্লান্তিহীন লড়াই

তারিকুল ইসলাম, শেরপুর || রাইজিংবিডি.কম

প্রকাশিত: ১০:১০, ৯ জুলাই ২০২৫   আপডেট: ১১:৪৩, ৯ জুলাই ২০২৫
প্রতিবন্ধী ছেলের যত্নে বৃদ্ধ মায়ের ক্লান্তিহীন লড়াই

প্রতিবন্ধী ছেলে সিরাজুল ইসলামের সঙ্গে তার মা জায়েদা খাতুন

ছেলে বাক ও বুদ্ধি প্রতিবন্ধী। মায়েরও বয়স হয়েছে। তবুও ছেলের সেবাযত্নে কোনো কমতি নেই বৃদ্ধ মায়ের। প্রতিবন্ধী ছেলে সিরাজুল ইসলামকে (৫৮) ভালো রাখতে ক্লান্তিহীন লড়াই একাই করে চলেছেন শেরপুরের শ্রীবরদী উপজেলার গোসাইপুর ইউনিয়নের দক্ষিণ মাটিয়াকুড়া গ্রামের ৭৫ বছর বয়সী জায়েদা খাতুন। 

জায়েদা খাতুনের স্বামী তফিল উদ্দিন মারা গেছেন বছর ৪০ আগে। অভাব অনটনে ভাগ্যের চাকা ঘোরাতে তিন ছেলে ও এক মেয়েকে নিয়ে তিনি চলে যান ঢাকায়। সেখানে কাজ নেন গার্মেন্টসে। বেতনের টাকা দিয়ে সন্তানদের বড় করেন। মেয়ে ও ছোট দুই ছেলেকে বিয়ে করান জায়েদা খাতুন। তবে, তার বড় ছেলে সিরাজুল বাক ও বুদ্ধি প্রতিবন্ধী হওয়ায় করতে পারেনি সংসার। 

আরো পড়ুন:

বয়স হয়ে যাওয়ায় কাজ করতে না পারায় জায়েদা খাতুনকে ফিরতে হয় দক্ষিণ মাটিয়াকুড়া গ্রামে। জীবনে সঞ্চয় করা টাকা দিয়ে এক টুকরো জমি কিনে তোলেন ঘর। এখন সেই ঘরে বসবাস তাদের। 

ছেলের দাড়ি আঁচড়ে দিচ্ছেন মা জায়েদা খাতুন 


এলাকাবাসী জানান, জায়েদা খাতুনের দুই ছেলে ঢাকায় লেবারের কাজ করেন। যা আয় করেন তা দিয়ে নিজেদের সংসার চালাতেই হিমশিম খান তারা। মেয়ে শ্বশুর বাড়িতে থাকে। জায়েদা খাতুনের ছেলে সিরাজুল বয়সে বুড়িয়ে গেলেও বুদ্ধিতে শিশুর মতো। ছেলের সেবাযত্ন ও ভরণপোষণের জন্য একসময় ভিক্ষাবৃত্তি শুরু করেন তিনি। অনেক বছর ভিক্ষা করে নিজের ও সন্তানের দায়িত্ব পালন করেছেন এই মা। বর্তমানে বয়সের ভারে নুয়ে পড়ায় বাড়ি বাড়ি গিয়ে ভিক্ষা করা হয় না তার। বর্তমানে প্রতিবেশীদের দান ও দয়ায় চলে মা-ছেলের জীবন।

জায়েদা খাতুন বলেন, “আমার জীবনে সুখ বলতে কিছু নাই। পেটের পুলা (ছেলে) কই ফেলায়ে দিমু। পুলাডাও বুড়া হয়ে যাইতাছে, কিন্তু আমি আর কতদিন তারে দেখমু। আমি নিজেই চলতে পারি না। আমি মরে যাই সমস্যা নাই, পুলাডার যেন এডা গতি হয়। তাইলে আমি মরেও শান্তি পামু।”

শ্রীবরদী উপজেলা সমাজ সেবা কর্মকর্তা মো. কামরুজ্জামান বলেন, “মাকে বিধবা ও ছেলেকে প্রতিবন্ধী কার্ডের আওতায় আনা হয়েছে। তবে, এটা তাদের জীবনধারণের জন্য যথেষ্ট নয়। আরো সহযোগিতার সুযোগ আসলে তাদের দেওয়া হবে।”

শ্রীবরদী উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) শেখ জাবের আহমেদ বলেন, “আমি আপনাদের মাধ্যমে বিষয়টি জানতে পারলাম। নিজে গিয়ে তাদের দেখে আসব। তাদের জন্য প্রয়োজনীয় সহযোগিতার ব্যবস্থা করা হবে।”

ঢাকা/মাসুদ

সম্পর্কিত বিষয়:

সর্বশেষ

পাঠকপ্রিয়