কিশোরীকে সংঘবদ্ধ ধর্ষণ
অভিযুক্তদের বিচারের দাবিতে খাগড়াছড়ি ও বন্দরবানে বিক্ষোভ
খাগড়াছড়ি ও বান্দরবান প্রতিনিধি || রাইজিংবিডি.কম
খাগড়াছড়িতে ১৪ বছরের কিশোরীকে সংঘবদ্ধ ধর্ষণের ঘটনায় জড়িতদের বিচারের দাবিতে বিক্ষোভ মিছিল ও সমাবেশ হয়েছে। খাগড়াছড়ি ও বান্দরবানে শিক্ষার্থী ও বিভিন্ন সংগঠনের সদস্যরা শুক্রবার (১৮ জুলাই) সকাল থেকে দুপুর এই কর্মসূচি পালন করে।
শুক্রবার সকাল ১১টায় ধর্ষকদের শাস্তির দাবিতে খাগড়াছড়ির মানিকছড়ি উপজেলায় বিক্ষোভ মিছিল ও সমাবেশ করে পাহাড়ি ছাত্র পরিষদ। মিছিলটি মানিকছড়ি সদরের ধর্মঘর এলাকা থেকে শুরু হয়ে ধর্মঘট বটতলার নিচে গিয়ে শেষ হয়। পরে সেখানে সমাবেশ অনুষ্ঠিত হয়।
সমাবেশে বক্তরা অপরাধীদের দ্রুত বিচারের দাবি জানান।
আরো পড়ুন: খাগড়াছড়িতে কিশোরী গণধর্ষণের ঘটনায় গ্রেপ্তার ৪
সমাবেশে বক্তব্য রাখেন- পাহাড়ি ছাত্র পরিষদের (পিসিপি) কেন্দ্রীয় কমিটির সদস্য অংহ্লাচিং মারমা, খাগড়াছড়ি জেলা শাখার সাংগঠনিক সম্পাদক প্রাঞ্জল চাকমা, মানিকছড়ি উপজেলা শাখার সদস্য আনু মারমা ও হিল উইমেন্স ফেডারেশন সদস্য মনি চাকমা।
আজ দুপুরে খাগড়াছড়ি শহরের বাংলাদেশ ত্রিপুরা কল্যাণ সংসদের হলরুমে সংবাদ সম্মেলন করে ত্রিপুরাদের সাতটি সংগঠন। তারা ধর্ষকদের শাস্তির দাবি জানান। লিখিত বক্তব্যে তারা অভিযোগ করেন, একটি গোষ্ঠী ঘটনাটিকে পরিকল্পিতভাবে সাম্প্রদায়িক ও রাজনৈতিক রূপ দেওয়ার জন্য একটি দলের বিরুদ্ধে অপতৎপরতা চালাচ্ছে।
সংবাদ সম্মেলনে উপস্থিত ছিলেন- বাংলাদেশ ত্রিপুরা কল্যাণ সংসদের কেন্দ্রীয় কমিটির সভাপতি কমল বিকাশ ত্রিপুরা, বাংলাদেশ ত্রিপুরা ঐক্য পরিষদের আহ্বায়ক ক্ষনি রঞ্জন ত্রিপুরা, বাংলাদেশ ত্রিপুরা যুব কল্যাণ সংসদের আহ্বায়ক ভিক্টর ত্রিপুরা, বাংলাদেশ ত্রিপুরা যুব ঐক্য পরিষদের সভাপতি বিপিন ত্রিপুরা, বাংলাদেশ ত্রিপুরা স্টুডেন্ট ফোরামের খঞ্জন জ্যোতি ত্রিপুরা, বাংলাদেশ ত্রিপুরা যুব সংসদের সভাপতি রুপক ত্রিপুরা ও বাংলাদেশ ত্রিপুরা শ্রমিক সংসদের প্রতিষ্ঠাতা পরেশ ত্রিপুরা।
এদিকে, ধর্ষকদের বিচারের দাবিতে বান্দরবানে বিক্ষোভ মিছিল ও প্রতিবাদ সমাবেশ হয়েছে।
শুক্রবার দুপুর ৩টার দিকে ‘বান্দরবানস্থ আদিবাসী ছাত্র সমাজ’ ব্যানারে রাজার মাঠ এলাকা থেকে বিক্ষোভ মিছিল শুরু হয়। মিছিলটি শহরের মধ্যম পাড়া, উজানি পাড়া ও চৌধুরী মার্কেট এলাকা প্রদক্ষিণ করে প্রেস ক্লাবের সামনে গিয়ে শেষ হয়। সেখানে সংক্ষিপ্ত সমাবেশ হয়।
বক্তারা বলেন, ধর্ষণকারীদের দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি নিশ্চিত করতে না পারায় পাহাড়ে জঘন্যতম অপরাধ করেও পার পেয়ে যাচ্ছে অপরাধীরা। পার্বত্য চট্টগ্রামে বিচারহীনতা সংস্কৃতির কারণে ধর্ষণের মতো জঘন্য ঘটনা বৃদ্ধি পাচ্ছে। বক্তারা অবিলম্বে দলবদ্ধ ধর্ষণের ঘটনায় জড়িতদের সর্বোচ্চ শাস্তি দেওয়ার দাবি জানান।
সমাবেশে বিটন তঞ্চঙ্গ্যা ও তনয়া ম্রো জানান, কিছুদিন আগেও এই মঞ্চ থেকে আরেকটি ধর্ষণের ঘটনার প্রতিবাদ করা হয়েছে। বারবার বিক্ষোভ মিছিল, প্রতিবাদ যেন পাহাড়িদের রুটিন ওর্য়াকের মতো কাজ হয়ে দাঁড়িয়েছে। গতকাল বৃহস্পতিবার ধর্ষণের ঘটনা জড়িত চারজনকে পুলিশ গ্রেপ্তার করেছে। গ্রেপ্তারের পর থেকে একটি ছবি সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে ভেসে বেড়াচ্ছে। সেই ছবিতে হাসি দেখে মনে হয়, কোনো অপরাধ কিংবা অপরাধের অনুশোচনা গ্রেপ্তারকৃতদের মধ্যে নেই।
সমাবেশে উবাথোয়াই মার্মা, গোগাং ত্রিপুরা ও একস্ট্রি বম বক্তব্য রাখেন। উপস্থিত ছিলেন- হিল উইমেন্স ফেডারেশনের সভাপতি উলিসিং মার্মা, পাহাড়ি ছাত্র পরিষদের বান্দরবান জেলা শাখার সভাপতি উশৈহ্লা মার্মা ও বিভিন্ন সম্প্রদায়ের ছাত্র প্রতিনিধিরা উপস্থিত ছিলেন।
গত ২৭ জুন খাগড়াছড়িতে এক কিশোরী সংঘবদ্ধ ধর্ষণের শিকার হয়। ওই কিশোরীর পরিবার গত বুধবার ১৬ জুলাই রাতে ঘটনাটি জানতে পারে। ওই দিন রাতেই ভুক্তভোগীর বাবা থানায় মামলা করেন।
মামলার এজাহার অনুযায়ী, প্রায় তিন সপ্তাহ আগে এ ঘটনা ঘটলেও সামাজিক লজ্জা ও ভয়ভীতির কারণে ভুক্তভোগী কিশোরী প্রথমে পরিবারকে কিছু জানায়নি। মানসিক ভারসাম্য হারিয়ে গত শনিবার বিষ পান করে আত্মহত্যার চেষ্টা করেছিল সে। পরে তাকে উদ্ধার করে হাসপাতালে নিয়ে যাওয়ার পর পরিবারের সদস্যরা বিষয়টি জানতে পারে। মামলা হওয়ার পরপরই গতকাল বৃহস্পতিবার রাতে অভিযুক্ত ছয়জনের মধ্যে চারজনকে গ্রেপ্তার করে পুলিশ।
গ্রেপ্তারকৃতরা হলেন- আরমান হোসেন (৩২), ইমন হোসেন (২৫), এনায়েত হোসেন (৩৫) এবং সাদ্দাম হোসেন (৩২)। মামলার অন্য দুই আসামি হলেন- মো. মুনির ইসলাম (২৯) ও মো. সোহেল ইসলাম (২৩)। তারা পলাতক বলে পুলিশ জানিয়েছে।
খাগড়াছড়ি পুলিশ সুপার আরোফিন জুয়েল বলেন, “চার আসামিকে শুক্রবার আদালতের মাধ্যমে জেল হাজতে পাঠানো হয়েছে। বাকি দুই আসামিকে গ্রেপ্তারের চেষ্টা চলছে।”
ঢাকা/রূপায়ন, চাইমং/মাসুদ