নিহত পাইলটের বাড়ি রাজশাহী, স্বজনদের নেওয়া হলো ঢাকা
শিরিন সুলতানা কেয়া, রাজশাহী || রাইজিংবিডি.কম
ফ্লাইট লেফটেন্যান্ট তৌকির ইসলাম সাগর। ফাইল ফটো
ঢাকার উত্তরায় বাংলাদেশ বিমান বাহিনীর একটি প্রশিক্ষণ বিমান বিধ্বস্ত হয়ে নিহত হয়েছেন ফ্লাইট লেফটেন্যান্ট তৌকির ইসলাম সাগর। তার মৃত্যুর খবরে রাজশাহীতে নেমে এসেছে শোকের ছায়া।
সোমবার (২১ জুলাই) দুপুরের পর থেকে নগরীর উপশহরে তার বাসার সামনে ভিড় করছেন প্রতিবেশী ও স্বজনেরা। এ সময় অনেকেই কান্নায় ভেঙে পড়েন। কেউ কেউ হতভম্ব হয়ে চুপ করে দাঁড়িয়ে ছিলেন ‘আশ্রয়’ নামের ওই বাড়ির সামনে।
খোঁজ নিয়ে জানা যায়, রাজশাহী নগরীর উপশহরের ৩ নম্বর সেক্টরের ২২৩ নম্বর বাড়িটিতে ভাড়া থাকেন তৌকিরের বাবা তহুরুল ইসলাম, মা সালেহা খাতুন এবং ছোট বোন সৃষ্টি খাতুন।
স্থানীয়রা জানান, তৌকির ছিলেন ভদ্র ও মেধাবী। তার পরিবারও ছিল অত্যন্ত মিশুক। প্রায় ২৫ বছর ধরে রাজশাহীতে ভাড়া বাড়িতে থাকেন। সর্বশেষ ‘আশ্রয়’ নামের বাড়িটির তিন তলায় উঠেছিলেন তারা।
তৌকির ছিলেন দুই ভাই-বোনের মধ্যে বড়। তার ছোট বোন সৃষ্টি খাতুন রাজশাহীর ইসলামী ব্যাংক মেডিকেল কলেজে এমবিবিএসের তৃতীয় বর্ষের শিক্ষার্থী। বিকেলে বাসার সামনে উপস্থিত ছিলেন তৌকিরের মামা রফিকুল ইসলাম।
তিনি জানান, বিমান বিধ্বস্ত হওয়ার পর চিকিৎসাধীন তৌকিরকে দেখতে পরিবারের সদস্যরা বিমানযোগে ঢাকায় যাওয়ার ইচ্ছা পোষণ করেন। পরে র্যাবের একটি গাড়িতে তৌকিরের মা-বাবা, বোন সৃষ্টি খাতুন, তার স্বামী ডা. তুহিন ইসলাম এবং আরেক মামা মোহাম্মদ আলীকে নিয়ে যাওয়া হয়। বিকেলে রাজশাহীর হযরত শাহ মখদুম (রহ.) বিমানবন্দর থেকে তাদের বিমান বাহিনীর একটি বিশেষ ফ্লাইটে ঢাকায় নেওয়া হয়।
তৌকিরের স্ত্রী ঢাকায় সরকারি কোয়ার্টারে বসবাস করেন। তিনি ব্র্যাক বিশ্ববিদ্যালয়ের একজন লেকচারার। বছর খানেক আগে তৌকির বিয়ে করেন।
রফিকুল ইসলাম বলেন, ‘‘তৌকিরের মতো ভালো ছেলে আমি আর দেখিনি। তার মতো পরিশ্রমী, ভদ্র, মেধাবী ছেলেকে এভাবে হারিয়ে ফেলব ভাবতেই পারিনি।’’
স্বজনেরা জানান, তৌকিরের বাবা তহুরুল ইসলাম চাঁপাইনবাবগঞ্জ জেলার বাসিন্দা হলেও প্রায় ২৫ বছর ধরে পরিবার নিয়ে রাজশাহীতেই বসবাস করছেন। পেশায় তিনি একজন ব্যবসায়ী।
তৌকির রাজশাহীর নিউ গভ. ল্যাবরেটরি স্কুলে ষষ্ঠ শ্রেণি পর্যন্ত পড়াশোনা করে পাবনা ক্যাডেট কলেজে সপ্তম শ্রেণিতে ভর্তি হন। তিনি ওই কলেজের ৩৪তম ব্যাচের ছাত্র ছিলেন। ২০১৬ সালে উচ্চ মাধ্যমিক পাস করে বাংলাদেশ বিমান বাহিনীতে যোগ দেন।
তৌকিরের মৃত্যুর খবরে বাড়ির সামনে ছুটে এসেছেন পাবনা ক্যাডেট কলেজে তার সাবেক প্রশিক্ষক মোস্তাক আহমেদ।
তিনি বলেন, “তৌকির খুবই মেধাবী, ভদ্র এবং শান্ত স্বভাবের ছেলে ছিল। সে ছোটদের স্নেহ করত, বড়দের সম্মান দিত। ওর সঙ্গে আমার অনেক স্মৃতি জড়িয়ে আছে।”
গত বছর রাজশাহীর সপুরায় নিজস্ব জমিতে তিন তলা একটি বাড়ি নির্মাণের কাজ শুরু করেছিলেন তৌকির। কিন্তু, কাজ এখনো শেষ হয়নি।
এর আগে, সোমবার দুপুর ১টা ৬ মিনিটে বিমান বাহিনীর একটি ‘এফ-৭ বিজেআই’ প্রশিক্ষণ বিমান উড্ডয়নের পরপরই বিধ্বস্ত হয়।
বিমানটি উত্তরার মাইলস্টোন স্কুল অ্যান্ড কলেজের একটি অ্যাকাডেমিক ভবনের গেইটে আছড়ে পড়ে এবং তাতে আগুন ধরে যায়। এ ঘটনায় হাসপাতালে চিকিৎসাধীন অবস্থায় মারা যান ফ্লাইট লেফটেন্যান্ট তৌকির ইসলাম সাগর।
ঢাকা/রাজীব