ঢাকা     সোমবার   ০৮ ডিসেম্বর ২০২৫ ||  অগ্রহায়ণ ২৩ ১৪৩২

Risingbd Online Bangla News Portal

জুড়ী নদী যেন ময়লার ভাগাড়

আব্দুল আজিজ, মৌলভীবাজার  || রাইজিংবিডি.কম

প্রকাশিত: ১২:৫৯, ৮ ডিসেম্বর ২০২৫   আপডেট: ১৩:১২, ৮ ডিসেম্বর ২০২৫
জুড়ী নদী যেন ময়লার ভাগাড়

স্রোতস্বিনী জুড়ী নদী এখন ময়লার ভাগাড়ে পরিণত হয়েছে

ভারত থেকে বয়ে আসা জুড়ী নদী মিলিত হয়েছে হাকালুকি হাওরে। জুড়ী উপজেলার দুই বাজারের ময়লা-আর্বজনা, প্লাস্টিক ও পলিথিন ফেলা হচ্ছে এই নদীতে। সেগুলো ভেসে যাচ্ছে হাকালুকি হাওরে। এতে নষ্ট হচ্ছে হাওরের জীববৈচিত্র্য। মাছের পেটে যাচ্ছে মাইক্রোপ্লাস্টিক। সেগুলো ঘুরে আসছে মানুষের খাবার টেবিলে। 

স্থানীয়রা জানিয়েছেন, ডাম্পিং স্টেশন না থাকায় মৌলভীবাজারের জুড়ী উপজেলা সদরের ব্যবসায়ীরা নদীতে ময়লা-আবর্জনা ফেলে দেন। ফলে, স্রোতস্বিনী জুড়ী নদী এখন ময়লার ভাগাড়ে পরিণত হয়েছে। দ্রুত ডাম্পিং স্টেশন স্থাপন না করলে নষ্ট হবে পরিবেশ, মরে যাবে ওই নদী। 

মৌলভীবাজারের জুড়ী উপজেলা সদরের কামিনিগঞ্জ ও ভবানিগঞ্জ বাজারের মাঝখান দিয়ে বয়ে যাচ্ছে জুড়ী নদী। দুই পাশ দিয়েই ময়লা ফেলা হয়। এই নদী উজানের পাহাড় টিলা বেয়ে এসে মিলিত হয়েছে হাকালুকি হাওরে। নদীতে ফেলে দেওয়া বর্জ্য শেষ পর্যন্ত হাওরে গিয়ে পড়ছে। এতে ক্ষতি হচ্ছে জলজ উদ্ভিদ ও প্রাণীর।

পরিবেশবাদীরা আশঙ্কা করছেন, ময়লা ফেলার বিকল্প ব্যবস্থা না করলে জুড়ী নদী মরে যাবে। এতে প্রাকৃতিক বিপর্যয় ঘটতে পারে ওই এলাকায়। 

স্থানীয়রা জানিয়েছেন, নিষেধ অমান্য করে রাতের আঁধারে নদীতে ময়লা ফেলেন ব্যবসায়ীরা।   

কামিনিগঞ্জ বাজারের ক্ষুদ্র ব্যবসায়ী হাসান আহমদ বলেছেন, “জুড়ী নদী অনেক বড় ছিল। এখন বাজারের পলিথিন, ময়লা-আর্বজনা সবকিছু নদীতে ফেলে দেওয়া হয়। নদী ভরাট হয়ে যাচ্ছে।”

সরেজমিনে গেলে কথা হয় জুড়ী মডেল উচ্চ বিদ্যালয়ের দশম শ্রেণির শিক্ষার্থী রাইয়ান আহসানের সাথে। সে বলে, বিদ্যালয়ে আসা-যাওয়ার পথে প্রতিদিন দুর্গন্ধ পোহাতে হয়, যা পরিবেশ ও আমাদের জন্য বিরক্তিকর। 

বাজারের প্রবীণ ব্যক্তি মানিক মিয়া বলেন, জুড়ী নদী তার ঐতিহ্য হারাচ্ছে। মানুষ অসচেতনভাবে ময়লা ফেলে নদীর সর্বনাশ করেছে। এই নদী মরে যাচ্ছে।  

ভবানিগঞ্জ বাজার সমিতির সভাপতি এম এ মহসীন মুজিব বলেন, আমরা চেষ্টা করছি, ডাম্পিং স্টেশন স্থাপনের জন্য। সম্প্রতি উপজেলা প্রশাসনের আইনশৃঙ্খলা-সংক্রান্ত সভায় সিদ্ধান্ত হয়েছে, ডাম্পিং স্টেশন স্থাপনের জন্য জমি দেখা হবে। যদি এ চেষ্টা ব্যর্থ হয়, তাহলে বাজারের ময়লা ফেলার আর কোনো ব্যবস্থা করা যাবে বলে আশা নেই। 

পরিবেশ আন্দোলনের অন্যতম নেতা খুরশেদ আলম জানিয়েছেন, ডাম্পিংয়ের জন্য নির্দিষ্ট স্থান না থাকায় নদীতে সেতুর কাছে ময়লার ভাগাড় হয়েছে। নদীতে স্রোত আসলে এই ময়লা হাওর হাকালুকিতে যাচ্ছে। হাওরের মাছ খাদ্য হিসেবে এই বর্জ্য গ্রহণ করছে। 

সম্প্রতি এক গবেষণায় দেখা গেছে, মাছের পেটে মাইক্রোপ্লাস্টিকের অস্তিত্ব পাওয়া যাচ্ছে, যা আমাদের শরীরে প্রবেশ করে স্বাস্থ্যঝুঁকিতে ফেলে দিচ্ছে। ডাম্পিং স্টেশন স্থাপন করে নদী ও পরিবেশ রক্ষা সময়ের দাবি।

জুড়ী উপজেলার নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) বাবলু সুত্রধর বলেছেন, পৌরসভা বা সিটি করপোরেশন থাকলে কাজে অনেক সুবিধা হয়। আমরা চেষ্টা করছি, এলাকার বিশিষ্ট ব্যক্তিবর্গকে নিয়ে যদি জমি পাওয়া যায়, তাহলে ডাম্পিং স্টেশন স্থাপনের ব্যবস্থা করা যেতে পারে। 

ঢাকা/রফিক

সর্বশেষ

পাঠকপ্রিয়