ঢাকা     শুক্রবার   ২৬ এপ্রিল ২০২৪ ||  বৈশাখ ১৩ ১৪৩১

ঘুরে এলাম মধুকবির সাগরদাঁড়ি

শাহরিয়ার সজীব || রাইজিংবিডি.কম

প্রকাশিত: ১৭:৩৫, ১৭ সেপ্টেম্বর ২০২০   আপডেট: ১৭:৩৮, ১৭ সেপ্টেম্বর ২০২০
ঘুরে এলাম মধুকবির সাগরদাঁড়ি

সাগরদাঁড়ি। সবুজের মায়ায় ঘেরা ছোট্ট একটা গ্রাম। কপোতাক্ষের তীর ঘেঁষে বহুকাল ধরে দাঁড়িয়ে আছে শ্যামল মায়ের গ্রাম সাগরদাঁড়ি। মহাকবি মাইকেল মধুসূদন দত্তের জন্মভূমি এটি। এমন কোথাও যদি আপনি ঘুরতে যেতে চান, যেখানে আপনার জন্য সৌন্দর্য, সাহিত্য এবং ইতিহাসের সমাহার থাকবে তাহলে সাগরদাঁড়ি গ্রাম থাকবে আপনার পছন্দ তালিকার শীর্ষে।

গ্রামটি যশোর জেলার কেশবপুর থানার অন্তর্গত। মাইকেল মধুসূদন দত্তের বাবা রাজনারায়ণ দত্ত ছিলেন তৎকালীন জমিদার। বিশাল জায়গাজুড়ে থাকা জমিদারবাড়িটি এখনো তার জৌলুসের জানান দিচ্ছে। সাগড়দাঁড়ির এই বাড়িতেই মধুকবির ছেলেবেলা কাটে। বাড়ির পূর্বপাশ দিয়ে বয়ে চলেছে বিখ্যাত কপোতাক্ষ নদ। এই নদের মন ভোলানো সৌন্দর্যে মুগ্ধ না হয়ে পারা যায় না। এই নদের কালো জলে যখন বিকেলের সূর্যের স্নিগ্ধ আলো পড়ে তখন আপনার চোখ সেই দৃশ্যে বিমোহিত হয়ে উঠবে। এই নদ নিয়েই লেখা কবির সনেট হয়েছিল পৃথিবীখ্যাত।

‘সতত হে নদ তুমি পড় মোর মনে
সতত তোমার কথা ভাবি এ বিরলে’

গ্রামের শুরুতেই একটি প্রাচীন মসজিদ চোখে পড়বে। এখানেই মহাকবি আরবি, ফারসি এবং উর্দুসহ বেশকিছু বিদেশি ভাষা শিখেছেন। কিছুটা পথ এগিয়ে গেলেই দেখা যায় পদ্মপুকুরসহ জমিদার বাড়ি। এখন পুরো বাড়িটি ঘিরেই তৈরি করা হয়েছে পুরাতত্ত্ব জাদুঘর। এই জাদুঘরে দেখা যাবে কবির নিজ হাতে লেখা ঈশ্বরচন্দ্র বিদ্যাসাগরসহ বিভিন্ন গুণীজনদের কাছে পাঠানো চিঠিপত্র।

তৎকালীন জমিদারদের ব্যবহার্য দ্রব্যাদি প্রমাণ করে তারা তখনকার সময়ে কতটা সমৃদ্ধ ছিলেন। বাড়ির ঠিক মাঝখানে রয়েছে একটা দূর্গামন্দির। প্রতিবছর খুব জাঁকজমকপূর্ণভাবে দুর্গা পূজা করা হতো এখানে। বিশাল পদ্মপুকুরের পাশেই কাছারিঘর। এখানে বসেই মধুসূদন দত্তের বাবা জমিদারি কার্য পরিচালনা করতেন। পরবর্তীতে এই কাছারিঘরকে লাইব্রেরিতে রূপান্তর করা হয়।

এই লাইব্রেরিতে মহাকবির লেখা বেশ কিছু বইয়ের সংগ্রহ রয়েছে। বাড়ির দক্ষিণ পাশেই মাইকেল গবেষকদের পৃষ্ঠপোষকতায় গড়ে উঠেছে আরও একটি জাদুঘর। এখানে শোভা পাচ্ছে মাইকেলের জীবনের দূর্লভ আলোকচিত্রসমূহ, নিজ হাতে লেখা ডায়েরির খণ্ডাংশ, অর্থ সাহায্য চেয়ে কবির লেখা চিঠি এবং কবির পরবর্তী প্রজন্মের ইতিহাস।

কবির বাড়ির আশেপাশে গড়ে উঠেছে তার বিশালাকার কিছু মূর্তি। মার্বেল পাথর খচিত কিছু কবিতা। পুরো জমিদার বাড়িটি বিভিন্ন ফুল এবং পাতাবাহার গাছে সুসজ্জিত রয়েছে। পাওয়া যাবে বিদায় ঘাট। এখান থেকে তিনি পরিবারের কাছ থেকে বিদায় নিয়ে পাড়ি জমিয়েছিলেন ফ্রান্সে। এছাড়া কপোতাক্ষ নদের দুইপাশে বসানো হয়েছে বিভিন্ন প্রাণীমূর্তি। এগুলো শিশুদের বিনোদনের একটা মাধ্যম হয়ে উঠেছে।

প্রতিবছর মাইকেল মধুসূদন দত্তের জন্মদিনে বিশাল মেলা বসে এখানে। তখন দেশ-বিদেশের লাখো পর্যটকের কোলাহলে মুখরিত থাকে এই জায়গাটা। এই মেলায় পুতুলনাচ, সার্কাস, জাদুখেলাসহ নানাভাবে তাদের মনোরঞ্জনের আয়োজন করা হয়। হরেক রকম খাবাবের বিরাট পসরা সাজানো হয় মেলার সময়ে। এই মেলা সাধারণত সাতদিন ধরে উদযাপিত হয়, যেখানে প্রতিদিনই আয়োজন করা হয় মনোজ্ঞ সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠানের।

দেশের বিখ্যাত সংগীতশিল্পী, নৃত্যশিল্পী ও আবৃত্তিশিল্পীসহ বরেণ্য ব্যক্তিবর্গ উপস্থিত থাকেন মেলায়। তাছাড়া বাংলার ঐতিহ্য হস্তশিল্পের একটা বিরাট অংশ এখানে দেখতে পাবেন দর্শকরা। বিভিন্ন প্রজাতির জীবজন্তুর সমাহার নিয়ে তৈরি করা হয়েছে একটি চিড়িয়াখানা। রয়েছে কপোতাক্ষ পার্ক। এই পার্ক আপনার ভ্রমণের আনন্দকে দ্বিগুণ করে তুলবে। ভ্রমণে এত আনন্দ একসঙ্গে পেতে পারেন তা এখানে না আসলে বুঝতে পারবেন না কেউ।

প্রকৃতির মায়া ঘেরা এই গ্রাম খুব সহজেই আপনার মনে জায়গা করে নেবে। কোথাও ভ্রমণের পরিকল্পনা থাকলে ঘুরে আসতে পারেন সাগরদাঁড়ি থেকে।

লেখক: শিক্ষার্থী, সমাজকর্ম বিভাগ, জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়।

জবি/মাহফুজ/মাহি

আরো পড়ুন  



সর্বশেষ

পাঠকপ্রিয়