ঢাকা     শুক্রবার   ২৬ এপ্রিল ২০২৪ ||  বৈশাখ ১৩ ১৪৩১

রাষ্ট্রকেই দিতে হবে নারীর নিরাপত্তা  

সিয়াম আহমেদ || রাইজিংবিডি.কম

প্রকাশিত: ১৬:৩৫, ১ অক্টোবর ২০২০   আপডেট: ১৭:০৬, ১ অক্টোবর ২০২০
রাষ্ট্রকেই দিতে হবে নারীর নিরাপত্তা  

নারী-পুরুষ মিলেই সমাজ। সমাজের সার্বিক উন্নতি চাইলে নারী ও পুরুষ উভয়কেই এর সমান অংশীদার করতে হবে। কাউকে নিষ্ক্রিয় রেখে বা অবজ্ঞা করে সমাজের প্রকৃত উন্নয়ন সম্ভব নয়। 

বলা হয়ে থাকে, একটি দেশের জনগণ কতটা সমৃদ্ধ ও নিরাপদ জীবনযাপন করছে, তা ঐ দেশের নারী ও শিশুদের সামাজিক অবস্থান দেখেই বোঝা যায়। অথচ আমাদের সমাজে নারী ও শিশুদের অবস্থান মোটেই নিরাপদ নয়।

শহর-গ্রাম, স্কুল-কলেজ অথবা কর্মস্থল, সব জায়গায় নারীরা ধর্ষণ ও যৌন হয়রানির শিকার হচ্ছেন। ধর্ষণ যেন প্রতিদিনের স্বাভাবিক ঘটনায় পরিণত হয়েছে। ধর্ষকের নীল থাবা থেকে আমাদের শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানগুলোও আর নিরাপদ নয়। সম্প্রতি সিলেটের এমসি কলেজের ছাত্রাবাসে এক তরুণী গণধর্ষণের শিকার হন। এর আগে ফেনীর সোনাগাজীতে ফাজিল মাদ্রাসার আলিম পরীক্ষার্থী নুসরাত জাহান রাফিকে ধর্ষণ ও পুড়িয়ে মারা হয়।

আইন ও সালিশ কেন্দ্র-আসকের তথ্য অনুযায়ী, গত ২০১৯ সালে ১ হাজার ৪১৩ জন নারী ধর্ষণের শিকার হয়েছিলেন। আর চলতি বছরের জানুয়ারি থেকে জুন, এই প্রথম ছয় মাসে ধর্ষণের শিকার হয় ৬০১ জন নারী ও শিশু। ধর্ষণের পর হত্যা করা হয়েছে ৩৭ জন নারীকে। এছাড়া ধর্ষণের শিকার হয়ে আত্মহত্যা করেন সাত জন নারী। কিছুতেই ধর্ষণ থামনো যাচ্ছে না। গণমাধ্যমে প্রতিদিনই একাধিক ধর্ষণের খবর আসছে। ধর্ষণের খবর এখন আর আমাদের মনে কোনো প্রতিক্রিয়ার সৃষ্টি করে না। এটি যেন একটি কালচারে পরিণত হয়ে গেছে।

কেবল আইন প্রণয়নের মধ্য দিয়ে ধর্ষণ নামক ‘মহামারি’ প্রতিরোধ সম্ভব নয়। আইনের সঠিক প্রয়োগ, দ্রুত বিচার ও শাস্তি কার্যকর করণ ও সর্বস্তরে সচেতনতা সৃষ্টির মাধ্যমে ধর্ষণ অনেকাংশেই কমিয়ে আনা সম্ভব। বিশেষজ্ঞদের মতে, ধর্ষণ ঠেকাতে আইনী প্রতিকারের পাশাপাশি নারীর ক্ষমতায়নের ও সচেতনতার উপরও গুরুত্ব দিতে হবে। তারা বলছেন, নারীর ক্ষমতায়ন বৃদ্ধি পেলে নারীরা যেকোন অনাকাঙ্ক্ষিত পরিস্থিতিতে আত্মরক্ষা কতে পারবে। তারা ‘না’ বলার ও প্রতিরোধ করার সক্ষমতা অর্জন করবে।

ধর্ষণ প্রতিরোধে সমাজের সর্বস্তরের জনগণকে সচেতন করতে হবে। সবাইকে এই অপরাধের ব্যাপারে সতর্ক করতে হবে। শুধু ধর্ষণ বা যৌন হয়রানিই নয় বরং ধর্ষণের মতো অপরাধের দিকে উস্কে দেয় এমন সব ব্যবস্থাপনাকেই নিষিদ্ধ করতে হবে। নারী কোনো ‘ভোগ্যপণ্য’ বা ‘যৌনসামগ্রী’ নয়। বরং সেও রক্তে-মাংসে গড়া মানুষ। পুরুষতান্ত্রীক সমাজে নারীকে যৌনবস্তু হিসেবে তুলে ধরার যে প্রবণতা, সেটি ত্যাগ করতে হবে। সমাজের সর্বস্তরে ধর্ষণবিরোধী বার্তা পৌঁছে দিতে হবে।

তাছাড়া ধর্ষণকে প্রশ্রয় দেয় এমন সব ভ্রান্ত ধারণা ও কুসংস্কার সমাজ থেকে ঝেঁটিয়ে বিদায় করতে হবে। এমনি একটি প্রচলিত ভ্রান্ত ধারণা হলো, নারীর পোশাক ও চলাফেরা তার ধর্ষণের জন্য দায়ী। এ ধরণের মন্তব্য ধর্ষণকে সমর্থনেরই নামান্তর।

নারী অধিকার নিয়ে কাজ করা সংগঠনগুলো বলছে, বিগত বছরগুলোতে ধর্ষণের হার গাণিতিকভাবে বৃদ্ধি পেয়েছে। বিপর্যয় ঠেকাতে সরকারেই কার্যকর পদক্ষেপ নিতে হবে। প্রতিটি নারীর নিরাপত্তা বিধান করতে হবে। নারীদের আত্মরক্ষার কৌশল শিক্ষা দিতে হবে, যাতে তারা আত্মবিশ্বাস ও সাহসী হয়ে ওঠে আর যেকোনো অপ্রীতিকর পরিস্থিতি মোকাবিলা করতে পারে। এছাড়া ভিকটিমকে তাৎক্ষণিকভাবে সহায়তা প্রদান নিশ্চিত করতে হবে। প্রয়োজনে ‘র্যাপিড রেসপন্স ফোর্স’ গঠন করতে হবে।

অধিকাংশ সময়েই দেখা যায়, ভিকটিম নিরাপত্তার অভাব বা সামাজিকভাবে হেয় প্রতিপন্ন হওয়ার ভয়ে ধর্ষণের বিষয়টি এড়িয়ে যেতে চান। এক্ষেত্রে ভিকটিমকে আইনী সহায়তা ও মেন্টাল সাপোর্ট দিতে হবে। তার পূর্ণ নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে হবে। অভিযুক্ত ব্যক্তি ও স্থানীয় প্রভাবশালী কর্তৃক মীমাংসা করার চেষ্টা, ‘অধিকতর প্রমাণের’ নামে হয়রানি ইত্যাদি বন্ধ কতে হবে। পাশাপাশি তদন্ত ও বিচার কার্যের অহেতুক দীর্ঘ সূত্রিতা হ্রাস করতে হবে। সর্বোপরি নারীর সঙ্গে সহমর্মিতা ও সহযোগিতামূলক আচরণ করতে হবে।

লেখক: শিক্ষার্থী, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়।

ঢাবি/মাহি

সম্পর্কিত বিষয়:

আরো পড়ুন  



সর্বশেষ

পাঠকপ্রিয়