ঢাকা     শুক্রবার   ২৬ এপ্রিল ২০২৪ ||  বৈশাখ ১৩ ১৪৩১

শুধু ফেরার অপেক্ষায়… 

মেহেরাবুল ইসলাম সৌদিপ || রাইজিংবিডি.কম

প্রকাশিত: ১৭:৩৬, ১ অক্টোবর ২০২০   আপডেট: ১৭:৫৩, ১ অক্টোবর ২০২০
শুধু ফেরার অপেক্ষায়… 

বৈশ্বিক মহামারি করোনা থামিয়ে দিয়েছে স্বাভাবিক জনজীবন। সবাইকে করে দিয়েছে একেবারে ঘরবন্দি। দীর্ঘ দিন ক্যাম্পাস বন্ধ থাকায় অনলাইনে ক্লাস চললেও আশানুরূপ ফলাফল নেই। তাত্ত্বিক জ্ঞান কিছুটা মিটলেও ব্যবহারিক ক্লাস থেকে বঞ্চিত শিক্ষার্থীরা। 

ছুটিতে দুরন্তপনা স্বভাবের শিক্ষার্থীরা হয়ে পড়েছে ঘরকুনো। বাড়ছে হতাশা। প্রায় সবকিছু খুলে দিলেও বন্ধ রয়েছে দেশের সব শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান। ক্যাম্পাসে ফেরার প্রহর গুনছে প্রতিটা শিক্ষার্থী। আশায় বুক বেঁধে আছে কবে ফিরবে প্রিয় ক্যাম্পাসে। দেশের পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়ের এমন কিছু শিক্ষার্থীর ভাবনা তুলে ধরেছেন জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থী মেহেরাবুল ইসলাম সৌদিপ।

মনিরুজ্জামান, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়

আবেগ ও ভালোবাসার আরেক নাম ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়। এখানে প্রতিদিন হাতছানি দেয় হাজারো স্বপ্ন। জ্ঞানার্জনের পাশাপাশি শিক্ষার্থীরা মেতে থাকে আড্ডা, খেলাধুলায়। ইট-পাথরের শহরে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় যেন একটি সবুজের সমারোহ। প্রতিদিন শিক্ষার্থীদের কোলাহলে মুখরিত থাকে প্রিয় ক্যাম্পাসটি। 

হল, ডিপার্টমেন্ট, টিএসসি কোনোটিই যেন ভুলে থাকার মতো নয়। তবে আজ সবই অতীত। করোভাইরাসের কারণে সবকিছুর মতো বন্ধ হয়ে যায় সদা মুখরিত ক্যাম্পাসটিও। গৃহবন্দি হয়ে যায় হাজারো স্বপ্ন। তবে এই গৃহবন্দি জীবনেও কখনো ভোলা যায় না প্রিয় বিদ্যালয়টির কথা। ভোলা যায় না প্রতিদিন সকালে সেনাবাহিনী প্রশিক্ষণের ক্লাসে যাওয়া, আর প্রেজেন্টেশন দেওয়ার কথা। সদা মনে পড়ে টিএসসির চায়ের কাপে উষ্ণ চুম্বন দেওয়ার কথা। মনে পড়ে কেন্দ্রীয় লাইব্রেরিতে লাইনে দাঁড়িয়ে থাকার কথা। কোনো প্রেয়সীর জন্য নয় বরং একটি পড়ার সিটের জন্য। ভালো থাকো প্রিয় বিশ্ববিদ্যালয়। আবারও তোমার কোলে ফিরে যাওয়ার প্রতীক্ষায় রইলাম। 

মোস্তাকিম হোসেন, জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়

মহামারি করোনাভাইরাসে (কোভিড-১৯) ক্যাম্পাস বন্ধ প্রায় ৭ মাস। একজন শিক্ষার্থী হিসেবে ক্যাম্পাস ছাড়া নিজেকে মাঝে মাঝে জেল খানার কয়েদি মনে হয়। সব শিক্ষার্থীর মতো আমার মনও উদগ্রীব ক্যাম্পাসে ফেরার ব্যাকুলতায়। ফুলের বাগানে যেমন ফুলের শোভা পায়, তেমনি শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে একজন শিক্ষার্থী তার সকীয়তা খুঁজে পায়। 

একজন ক্যাম্পাস সাংবাদিক হিসেবে ক্যাম্পাস আমার বড় আবেগের স্থান। ক্যাম্পাসের কিছু স্থান আমার খুব মনে পড়ে, তা হলো টিএসসি, বটতলা, সপ্তম ছায়ামঞ্চ, সেলিম আল দিন মুক্তমঞ্চ, শহীদ মিনার, যেখানে পায়ের স্পর্শ ছাড়া যে দিনই কাটে না আমার। আজ দূরে থেকেও এ সব স্থান ভুলতে পারি না। 

আব্দুস সবুর লোটাস, রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়

করোনায় ক্যাম্পাস বন্ধ হওয়ার পর বাসায় এস প্রথম দিনগুলো পরিবারের সবার সাথে ভালো কাটছিল। মাঝে মাঝে কাটানো দিনগুলোর কথা মনে করে ও কিছু ছবি দেখে সময় কাটছিল। দিন যত বাড়তে লাগলো, একটু করে একঘেয়েমি ও বিরক্তি আসলো বন্দিজীবনে।

প্রতিদিনই মনে হয় কবে প্রিয় ক্যাম্পাসে বন্ধুদের সঙ্গে মিলিত হবো। আবার আগের মতো স্বাভাবিক, মুক্ত, স্বাধীনভাবে জীবনযাপন শুরু হবে। এই ভেবেই অনেকটা সময় কাটে। পরিস্থিতি সবার স্বাস্থ্যের অনুকূলে আসলেই যেন দ্রুত ক্যাম্পাস খোলা হয়, এই আশায় আছি।

মুজাহিদ বিল্লাহ, জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়

অনেক দিন বিশ্ববিদ্যালয়ের বাইরে সবাই। নিজ ক্যাম্পাসটি শিক্ষার্থীদের কাছে সবচেয়ে প্রিয় জায়গা। ক্যাম্পাস জীবনে বন্ধুসহ অনেককেই মিস করছে সবাই। সব দ্রুত সুস্থ হয়ে উঠুক, প্রাণের ক্যাম্পাসে আবারও উল্লাস করতে চাইছে শিক্ষার্থীরা। 

ক্লাসের ফাঁকে আড্ডা থেকে শুরু করে টিএসসি (জবি), প্রিয় জায়গা শান্ত চত্বর, কাঁঠালতলা সব নিস্তব্ধ হয়ে ওঠা জায়গাগুলো শিক্ষার্থীদের পদচারণার অপেক্ষায় রয়েছে। রাতে কিংবা দিনে গানের আসর জমে উঠবে আবার এই প্রত্যাশায়। 

হাবিবুর রহমান হাবিব, কুমিল্লা বিশ্ববিদ্যালয়

বিশ্ববিদ্যালয় হলো প্রতিটি শিক্ষার্থীর আবেগ ও ভালোবাসার জায়গা। যেখানে প্রতিনিয়ত লালিত হয় স্বপ্নবাজদের স্বপ্ন। প্রতিটি শিক্ষার্থীর জীবনে সবচেয়ে বেশি আনন্দময় মুহূর্ত হলো ক্যাম্পাসে কাটানো মুহূর্তগুলো। 

লাল পাহাড়ের সবুজ অরণ্যে ভরপুর কুমিল্লা বিশ্ববিদ্যালয়। লাল পাহাড় আর সবুজ অরণ্যের কোল ঘেঁষে দাড়িঁয়ে আছে ছোট-বড় বেশ কয়টি ভবন। শূন্য আকাশ থেকে পাখির চোখে দেখলে মনে হবে সবুজের মাঝে সাদা বকের সারি দাঁড়িয়ে আছে। যেন প্রাকৃতিক সৌন্দর্যের লীলাখেলা কুমিল্লা বিশ্ববিদ্যালয় ক্যাম্পাস। লালমাটির আভায় লালায়িত হাজারো স্বপ্নবাজ ক্যাম্পাস ছেড়েছি বহুদিন। কিন্তু তাদের মাঝে এখন আর ক্লাস, প্রেজেন্টশন, টার্ম পেপার, অ্যাসাইনমেন্টের জন্য স্যার ম্যামদের বকুনি শুনতে হয় না। দীর্ঘ প্রতীক্ষায় রইলাম সুস্থ পৃথিবীর আশায়। 

ধীরা ঢালী, শিক্ষার্থী, গণ বিশ্ববিদ্যালয়

শিক্ষার্থী এবং শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের মাঝে সম্পর্ক যেন সন্তান এবং মায়ের মতোই আকুতিপূর্ণ। একে অপরের সম্পর্ক যেন অবিচ্ছেদ্য। অথচ এই নাড়ীর বাঁধন ছিন্ন করে আমরা আজ দীর্ঘ সাতটি মাস ঘরবন্দী আছি। আর প্রতিটি মুহূর্তে আমাদের অস্তিত্বের প্রহর গুনে চলেছে আমাদের সবার প্রিয় গণ বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রতিটি বালুকণা। 

শরতের এই দিনে বন্ধুদের সঙ্গে সাদা কাশবনে ডানা ঝাঁপটিয়ে বেড়ানোর কী যে আনন্দ, আজ তা খুব মনে পড়ে। অথচ আজ আমার প্রতিটি মুহূর্ত কাটছে বিষণ্নতা আর একাকিত্বের ভিড়ে। তবে আমি মনে করি প্রতিটি মানুষের আশাবাদী হওয়া উচিৎ। অন্ধকার কেটে যেমন একমুঠো মিষ্টি রোদকে সঙ্গী করে ভোরের সূর্য ওঠে, তেমনি আমাদের উজ্জ্বল আলোয় আবারও প্রজ্জ্বলিত হবে প্রাণের ক্যাম্পাস গণ বিশ্ববিদ্যালয়। আর আমরা ফিরে পাবো আমাদের সেই নাড়ীর বন্ধনে আবদ্ধ মাতৃসম ক্যাম্পাসকে।

রোকনুজ্জামান, চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়

দীর্ঘ সাত মাস যাবত গ্রামের বাড়িতে আছি। নির্দিষ্ট করে বললে, ঘরের মধ্যেই আছি। একঘেয়েমি চলে আসাটা অতি স্বাভাবিক। ক্রমেই দৈনন্দিন গতিময়তা হারিয়ে জীবনে অনুপ্রবেশ করছে মন্থরতা। একঘেয়েমির ফলস্বরূপ কোনো কাজেই মন বসছে না ইদানিং। দিনগুলো অনেকটা নিষ্ফল ভাবেই কেটে যাচ্ছে। আবার, এই সময়ে বাস্তবতার প্রতিকূলে যাওয়াও প্রায় অসম্ভব। ফলে, অনিচ্ছা সত্ত্বেও পরিস্থিতির শিকার হয়ে ফেরা হচ্ছে না প্রিয় ক্যাম্পাসে। 

ক্যাম্পাসের রুটিনমাফিক নাশতা, ক্লাস, আড্ডা, গ্রুপ ওয়ার্ক সবই যেন স্মৃতির পাতায় মলিন হয়ে রয়েছে। খণ্ডচিত্রগুলো পুনরায় চিত্রিত হোক প্রিয় ক্যাম্পাসের প্রিয় জায়গাগুলোতে, কায়মনোবাক্যে সেটাই চাই। 

আজাহার ইসলাম, ইসলামী বিশ্ববিদ্যালয়

ক্লান্তি-অবসাদ ভুলে মিলিত হতাম একমনে চায়ের আড্ডায়। সাধারণ ছুটিতে উৎসুক থাকি কবে বাড়ি যাবো। এবারের ছুটিতে উৎসুক কবে ফিরবো প্রাণপ্রিয় ক্যাম্পাসে। দীর্ঘ ৭ মাস ধরে বন্ধ ক্যাম্পাস। ছুটিতে বাড়িতে শুয়ে-বসে থেকে একঘেয়েমি চলে এসেছে। অননাইলে ক্লাস হচ্ছে, কিন্তু মিস করি প্রিয় বন্ধুদের সঙ্গে বসে ক্লাসরুমে এক বেঞ্চে বসে ক্লাস করা। মিস করি ক্লাসের ফাঁকে দুষ্টুমি। ক্লাস শেষ করেই ঝালচত্বরের ডালপুরি খাওয়া হয় না দীর্ঘ ৭ মাস।

প্রাণবন্ত ক্যাম্পাসে চুমুকে চুমুকে আড্ডা, বেসুরো গলায় গান গাওয়া। চা খেয়ে পুরো ক্যাম্পাস একবার চক্কর দিয়ে ফিরতাম নিজ হলে। এখন মনের কোণে একই প্রশ্ন একই আশা ‘কবে ফিরবো ক্যাম্পাসে?’

রেজওয়ান আহম্মেদ, খুলনা বিশ্ববিদ্যালয়

ছুটি মানেই সীমাহীন আনন্দ, আমরা খুঁজে পাই যন্ত্রণাময় পড়াশোনার চাপ থেকে মুক্তি। কিন্তু এ ছুটি অনিশ্চিত, অদ্ভুতরকম অনির্দেশ্য। দীর্ঘ দিন ঘরবন্দি থাকার ফলে ক্যাম্পাসের প্রতি মায়াটা যেন আরও গভীরভাবে অনুভব করছি। অদম্য বাংলার পাশের টং দোকানগুলোতে চায়ের কাপে ধোয়া ওঠে না আজ অনেক দিন, তপনদার মুখের সেই চিরচেনা হাসি নেই, ক্লাসের ফাঁকে দলবলে ক্যাফেটেরিয়ায় আড্ডা, সব যেন আজ কল্পনা। 

এখন সারাক্ষণই প্রার্থনা, আবার ঝলমলে সুন্দর সকাল হোক, প্রাণচঞ্চল হয়ে উঠুক প্রিয় ক্যাম্পাস, আবারও নৃত্য-ছন্দে মেতে উঠুক মুক্তমঞ্চ, খুব দ্রুতই যেন ফিরতে পারি প্যারা দেওয়া সেই ক্লাসরুমগুলোতে প্রিয় মুখগুলোর সাথে।

জয়নাল আবেদীন, বরিশাল বিশ্ববিদ্যালয়

প্রতিটি শিক্ষার্থী তাঁর নিজ নিজ ক্যাম্পাসের প্রতি মায়াজালে আবদ্ধ থাকে। কিছু স্মৃতিকথাও থেকে যায়। একসাথে বন্ধুদের সাথে ক্লাসরুমে ক্লাস করা। ক্যাফেটেরিয়ায় আড্ডা দেওয়া। ঘুরতে যাওয়া, খেলাধুলা ও দুষ্টুমি করা। সব মিলিয়ে এক অন্যরকম অনুভূতি কাজ করে প্রতিটি শিক্ষার্থীর। ঠিক আমারও একই অবস্থা। আগের মতো সেই আড্ডা, একসাথে ক্লাস করা হয় না। 

করোনায় জীবনকে সংকীর্ণতা করেছে। তবে এর মধ্য দিয়েও ফিরে যেতে চাই আমার প্রিয় ক্যাম্পাসটিতে। আগের মতো গাইতে চাই গান, হাসতে চাই প্রাণ খুলে। চায়ের আড্ডায় মুক্ত বাতাসে বন্ধুদের সাথে খোশগল্পে মেতে উঠতে চাই। 

জবি/মাহি

সম্পর্কিত বিষয়:

আরো পড়ুন  



সর্বশেষ