ঢাকা     শুক্রবার   ১৯ এপ্রিল ২০২৪ ||  বৈশাখ ৬ ১৪৩১

গাঙ্গাটিয়া জমিদার বাড়ি: যেখানে থমকে দাঁড়ায় স্মৃতি  

আব্দুল কাদির || রাইজিংবিডি.কম

প্রকাশিত: ১৫:৪৩, ২৭ অক্টোবর ২০২০   আপডেট: ১৫:৪৭, ২৭ অক্টোবর ২০২০
গাঙ্গাটিয়া জমিদার বাড়ি: যেখানে থমকে দাঁড়ায় স্মৃতি  

স্বাধীন বাংলাদেশের বিভিন্ন স্থানে রয়েছে বিভিন্ন ঐতিহাসিক নিদর্শন। এই ঐতিহাসিক নিদর্শনের মধ্যে অন্যতম জমিদার বাড়ি। এগুলো দেশের আনাচে-কানাচে ইতিহাসের সাক্ষী হয়ে দাঁড়িয়ে আছে। খুঁজলে মিলবে এসব জমিদার বাড়ির ভিন্ন ভিন্ন কালজয়ী ইতিহাসও।

ভারতীয় উপমহাদেশে মুঘল আমল থেকে ব্রিটিশদের শাসন আমল পর্যন্ত জমিদারি প্রথা চালু ছিল। জমিদাররা প্রজাদের উপর শাসনকার্য চালাতেন, এমন বাড়ি সাধারণ মানুষের কাছে জমিদার বাড়ি নামেই পরিচিত। এমন অনেক জমিদারির নিদর্শনের মধ্যে গাঙ্গাটিয়া জমিদার বাড়ি (মানব বাবুর) ঐতিহাসিক নিদর্শন হিসেবে সমধিক খ্যাত। 

বলছি, কিশোরগঞ্জের হোসেনপুর উপজেলার গোবিন্দপুর ইউনিয়নে অবস্থিত গাঙ্গাটিয়া জমিদার বাড়ির কথা। স্থাপনাটি দেখতে প্রতিনিয়ত দেশি-বিদেশি পর্যটক, শিক্ষক-শিক্ষার্থী, সাংবাদিকসহ বিভিন্ন শ্রেণির মানুষ ভিড় করে। জমিদার বাড়িটি সংস্কার করে দৃষ্টি নন্দন করতে পারলে এটিও হতে পারে দর্শনীয় স্থানের একটি। 

জমিদারি প্রথা উঠে গেলেও গাঙ্গাটিয়া জমিদার বাড়িটি প্রাচীন সভ্যতার নিদর্শন হয়ে এখনো পুরাতন জরাজীর্ণ স্থাপনার মাঝে দাঁড়িয়ে আছে। বাড়ির ভেতরে স্থাপনাগুলো চমৎকার কারুকাজে ভরা। সামনে রয়েছে সু-বিশাল পুকুর ও বিস্তীর্ণ মাঠ। এগুলো দেখে পথিকরা এখনো থমকে দাঁড়ায়। জমিদার বাড়ির নহবতখানা, দরবারগৃহ ও মন্দির বিশেষ স্থাপত্যের নিদর্শন। 

পর্যটকের একজন মো. সাগর মিয়া। তিনি জানান, এই জমিদার বাড়িটি অনেক পুরনো। অনেক স্মৃতি জড়িয়ে আছে এতে। প্রতিদিন এটি দেখতে দূর-দূরান্ত থেকে পর্যটকরা আসেন। তিনি বাংলাদেশ সরকারের কাছে জমিদার বাড়িটি সংস্কার করে দৃষ্টি নন্দন করার দাবি জানান।

জমিদার মানবেন্দ্র নাথ চক্রবর্তীর (মানব বাবু) সঙ্গে কথা হলে তিনি জানান, আজকাল জমিদার বাড়ি নেই বললেই চলে। যদিও থেকে থাকে, তাহলে ঐতিহাসিক নিদর্শন হিসেবে দর্শনার্থীদের মনের খোরাক ছাড়া কিছু না। 

তিনি বলেন, ‘১৯৭৪ সনের দিকে আমি উপজেলা চেয়ারম্যান ছিলাম। এখন অনেক বয়স হয়েছে। অনেক স্মৃতি জড়িয়ে থাকা নিজের ভিটামাটিও ভালোভাবে দেখতে পারি না বয়সের ভারে। মানুষের কল্যাণে কাজ করে শেষ নিঃশ্বাসটুকুন এই জমিদার বাড়িতেই ত্যাগ করতে চাই। 

খ্রিস্টীয় ষোড়শ শতাব্দীর দিকে গাঙ্গাটিয়া জমিদার বংশের পূর্ব পুরুষেরা ভারতের উত্তর প্রদেশ থেকে এসে এ দেশে বসতি স্থাপন করেন। তৎকালীন গৌড়ীয় রীতি অনুযায়ী বাড়ির পতিত ভিটায় পূজা অর্চনার জন্য একটি শিব মন্দির তৈরি করেন। শিব মন্দিরটি এখনো এই বংশের প্রথম নির্মিত মন্দির বলে এখনো দণ্ডায়মান। 

জমিদারদের ধারাবাহিকতায় এ অঞ্চলে অতুল বাবুর ঐকান্তিক প্রচেষ্টায় ইংরেজ আমলে শিক্ষা, সাহিত্য ও সংস্কৃতি ব্যাপক প্রসার লাভ করে। তাদের পরবর্তী বংশধর খ্যাতিমান সাহিত্যিক, গবেষক ও হাইকোর্টের জজ ধারনাথ চক্রবর্তী এ জমিদার পরিবারের ঐতিহ্য ধরে রাখতে আমৃত্যু নিরলস চেষ্টা করেন। ফলে, জমিদারি প্রথা বিলুপ্তির পরও এখনো এ বাড়িতে জমিদারের বংশধর মানবেন্দ্র নাথ চক্রবর্তী বসবাস করছেন। 

তাই পর্যটকরা জমিদারের ছেলের সঙ্গে কৌতুহল মেটানোর পাশাপাশি প্রাচীন সভ্যতার নিদর্শন গাঙ্গাটিয়া জমিদার বাড়িটি দেখতে দূর-দূরান্ত থেকে ছুটে আসছেন।

লেখক: শিক্ষার্থী, গুরুদয়াল সরকারি কলেজ। 

কিশোরগঞ্জ/মাহি

সম্পর্কিত বিষয়:

আরো পড়ুন  



সর্বশেষ

পাঠকপ্রিয়