ঢাকা     শনিবার   ২০ এপ্রিল ২০২৪ ||  বৈশাখ ৭ ১৪৩১

চীনের কুনমিং প্রদেশে পড়ার অভিজ্ঞতা

মো. মঈন উদ্দিন সাব্বির  || রাইজিংবিডি.কম

প্রকাশিত: ১৩:২২, ২০ ফেব্রুয়ারি ২০২১   আপডেট: ১৩:২২, ২০ ফেব্রুয়ারি ২০২১
চীনের কুনমিং প্রদেশে পড়ার অভিজ্ঞতা

উচ্চশিক্ষা গ্রহণে বিদেশে পড়তে যাওয়া শিক্ষার্থীদের পছন্দের তালিকায় চীন রয়েছে উল্লেখযোগ্য স্থানে। চীনের শিক্ষাব্যবস্থা, চমৎকার পরিবেশ এবং সার্বিক অভিজ্ঞতা নিয়ে শিক্ষার্থীদের থাকে একরাশ গল্পের ঝুলি। আজ আপনাদের সাথে শেয়ার করবো সেদেশে অবস্থানরত বাংলাদেশি শিক্ষার্থী রাজিব হাসানের কিছু কথা। 

রাজিব হাসান পড়ছেন চীনের Yunnan University তে। এটি সে দেশের শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের অধিভুক্ত ক্লাস-বি, ডাবল ফার্স্ট ক্লাস বিশ্ববিদ্যালয়ের একটি।  ১৯২২ সালে প্রতিষ্ঠিত হলেও এখানে শিক্ষা কার্যক্রম শুরু হয় পরবর্তি বছর অর্থাৎ ১৯২৩ সাল থেকে।  বিশ্ববিদ্যালয়টির দুটি ক্যাম্পাস, তবে এখানে যারা ব্যাচেলর ডিগ্রিতে পড়তে আসেন তাদের ইংলিশ মিডিয়ামে পড়ানো হয় যা কুনমিং সিটির Chenggong  এলাকায় অবস্থিত। 

তিনি জানান, ইউনান প্রদেশ হচ্ছে নাতিশীতোষ্ণ অঞ্চল অর্থাৎ গরমও নয়, শীতও নয়, মাঝামাঝি আবহাওয়া। চির বসন্তের এই শহর দেখতে যেন স্বপ্নের মত।  প্রকৃতির রঙ যেন অনেক বেশি চক্ষুশীতল করা এবং মানসিক শান্তি সঞ্চার করে। 

রাজিব বলেন, ইউনিভার্সিটি সম্পর্কে কিছু বললে হয়তো কমই বলা হয়ে যাবে। এতো সুন্দর প্রাকৃতিক দৃশ্যসমৃদ্ধ ক্যাম্পাস চায়নার খুব কমসংখ্যক ইউনিভার্সিটিতেই রয়েছে। আমার নিজের বিশ্ববিদ্যালয় দেখে একটুও বাড়িয়ে বলছিনা। আপনি যখন প্রথমবার এখানে আসবেন, আপনার মনে হতে পারে, আরো আগে কেনো এখানে আসিনি! সুন্দর কাঠামোতে তৈরি ক্যাম্পাসের বিল্ডিংগুলোতে রয়েছে চায়নার ঐতিহ্য এবং সংস্কৃতির ছোঁয়া। ক্লাসরুমগুলো সুসজ্জিত, রয়েছে সুবিশাল লাইব্রেরি ও খেলার মাঠ।  মুসলিম শিক্ষার্থীদের জন্য রয়েছে ক্যান্টিনসহ আরও অনেক সুযোগ সুবিধা মানসম্মত। চীনে প্রায় ৮০ শতাংশর অধিক আন্তর্জাতিক শিক্ষার্থী স্কলারশিপ নিয়েই পড়ালেখা করেন। ইংলিশ ও চাইনিজ দুই মিডিয়ামেই পড়াশোনা করা যায়। চীনে পড়তে আসা সব শিক্ষার্থীকে প্রথম দুই সেমিস্টার নন-মেজর সাবজেক্ট হিসেবে চাইনিজ ভাষা  ও  চাইনিজ কালচার সাবজেক্ট পড়তে হয় কারণ এটি করা বাধ্যতামূলক। চাইনিজে  কমিউনিকেশন স্কিল ডেভেলপমেন্ট করার জন্য ও চীনের কালচার সম্পর্কে আইডিয়া দেওয়ার জন্য চাইনিজ ভাষা এবং কালচার সাবজেক্ট পড়ানো হয়। ব্যাচেলর কোর্সে চায়নার প্রায় ৬০-৬৫ শতাংশ বিশ্ববিদ্যালয় এজেন্ট নির্ভর এবং বাকি ৪০-৪৫ শতাংশ নিজে নিজে আবেদন করে চান্স পাওয়া যায়।

রাজিব বলেন, এখানে আবাস এবং খাবারের ব্যবস্থা নিয়ে কোনো দুশ্চিন্তা নেই। বাইরে থেকে পড়তে আসা শিক্ষার্থীরা ডর্মে থাকেন।  একেকরুমে রয়েছে ৪ জন করে শিক্ষার্থী, ডর্মগুলো বেশ পরিস্কার-পরিচ্ছন্ন ও গোছানো। স্থানীয় বাজারে ফলমূল-শাকসবজির দাম অনেক কম হওয়ার দরুন অল্পখরচেই একমাস অতিবাহিত করা যায়। তবে অবাক করা বিষয় হচ্ছে ডর্মগুলোতে শিক্ষার্থীদের রান্না করার অনুমতি নেই। মাঝে মধ্যে বাঙালি শিক্ষার্থীরা ক্ষেত্র বিশেষে লুকিয়ে লুকিয়ে রান্না করেন, যদিও ধরা পড়লে কুকার খাবার নিয়ে যায়। বেশিরভাগ শিক্ষার্থীরা এখানে ক্যান্টিনের খাবার খেয়েই অভ্যাস্ত। তবে আশার বানী, এখানে নতুন নিয়ম প্রণয়ন করা হচ্ছে যেখানে আন্তর্জাতিক শিক্ষার্থীরা খুব তাড়াতাড়িই নতুন ডর্ম পাবেন যেখানে রান্নার অনুমতিও থাকবে। কিন্তু আমি বলব ম্যানেজ করে নেওয়ার মন মানষিকতা তৈরি করে নিতে পারলে এগুলো কোনো সমস্যাই না! 

তিনি বলেন, মেয়েদের জন্যও রয়েছে আলাদা ডর্মেটরি ব্যবস্থা। এখানে কিছু নিয়ম কানুন কোঠরভাবে মেনে চলতে হয়।  যেমন সফটওয়্যার বিভাগের শিক্ষার্থীদের প্রতিদিন রাত ১১ টার মধ্যে ডর্মে এসে Fingerprint দিতে হয়। রাত ১২ টার পর বাইরে থাকার অনুমতি নেই এবং রাতে ঘুমানোর জন্য রাত ১২ টা থেকে সকাল ৬টা পর্যন্ত রুমের আলো বন্ধ থাকতে হবে। 

রাজিব বলেন,আমি ব্যক্তিগতভাবে এই প্রদেশে আবহাওয়ার প্রেমে পড়েছি। এত চমৎকার আবহাওয়া আপনাকে সবসময়ই সতেজ বোধ করাবে। কুনমিং সিটি থেকে বাংলাদেশের দূরত্ব কম হওয়াতে যাতায়াতে প্লেন ভাড়াও কম লাগে। সর্বোপরি, পড়াশোনা এবং থাকা-খাওয়ার জন্যে খুবই ভালো একটা প্রদেশ এই ইউনান। এটি আমার অন্যতম পছন্দের একটি জায়গা এবং আমার খুব কাছের চাইনিজ বন্ধুর বাড়ি এখানেই। ২০১৯ সালের শীতের ছুটিতে তার বাড়িতে ১৩দিন ছিলাম, তারা বেশ অতিথি পরায়ণই বটে।

পরিশেষে একটা কথাই বলবো, যারা দেশ থেকে এখানে উচ্চশিক্ষা নিতে আসতে চাচ্ছেন তাদের জন্য ইউনান ইউনিভার্সিটি সামগ্রিক দিকদিয়ে খুবই পছন্দনীয় এবং মানসম্মত।

সাব্বির/সাইফ

সম্পর্কিত বিষয়:

আরো পড়ুন  



সর্বশেষ

পাঠকপ্রিয়