ঢাকা     শুক্রবার   ২৬ এপ্রিল ২০২৪ ||  বৈশাখ ১৩ ১৪৩১

একজন নাহিদ আহসানের গল্প 

দিবারুল ইসলাম দ্বীপ || রাইজিংবিডি.কম

প্রকাশিত: ১৩:২২, ৮ এপ্রিল ২০২১  
একজন নাহিদ আহসানের গল্প 

নাহিদ আহসান

রাজধানী ঢাকার মিরপুর ক্যান্টনমেন্টে ছেলেটির জন্ম, সেখানেই বেড়ে ওঠা। নৌ পরিবার শিশু নিকেতনে পড়াশোনা শুরু। এরপর প্রথম শ্রেণীতে ভর্তি হন শহীদ পুলিশ স্মৃতি স্কুলে। স্কুলজীবন কাটিয়েছেন সেখানেই। তারপর ভর্তি হন দেশের অন্যতম সেরা আদমজী ক্যান্টনমেন্ট কলেজে। 

তিনি কলেজজীবন শেষে ভর্তি হন বিজিএমইএ ইউনিভার্সিটি অব ফ্যাশন অ্যান্ড টেকনোলজিতে। বর্তমানে সেখানেই তৃতীয় বর্ষে পড়ালেখা করছেন ‘টেক্সটাইল ইঞ্জিনিয়ারিং’ নিয়ে। বলছি একজন তরুণ লেখক, সংগঠক, উপস্থাপক নাহিদ আহসানের কথা।  

একাডেমিক পর্যায়ে উল্লেখযোগ্য ভালো ফলাফলের পাশাপাশি কলেজজীবন থেকে প্রশংসা কুড়িয়েছেন সহশিক্ষা কার্যক্রমে। কলেজের বিজ্ঞান ক্লাব ‘নিউট্রিনো এসিসি সায়েন্স ক্লাব"’-এর অলিম্পিয়াড বিভাগের প্রধান হিসেবে দায়িত্ব পালন করেছেন এক বছর। সেই বছর আদমজী ক্যান্টনমেন্ট কলেজ আয়োজিত উপস্থিত বক্তৃতা প্রতিযোগিতায়ও প্রথম স্থান অধিকার করেন তিনি। 

বছরটা ছিল ২০১৭। এই বছর থেকেই একের পর এক অর্জন যোগ করেছেন নিজের ঝুলিতে। ২০১৭ সালের বইমেলায় প্রথমবারের মতো যৌথ গল্পগ্রন্থে নাহিদ আহসানের গল্প প্রকাশিত হয়। লেখালেখির সঙ্গে সেবছর থেকেই সখ্যতা গড়ে ওঠে। উপস্থিত বক্তৃতায় সফলতার পর থেকে পাবলিক স্পিকিং নিয়ে কাজ করা শুরু করেন তিনি৷ তার পাশাপাশি বিজ্ঞান ক্লাবে কাজের মাধ্যমে সাংগঠনিক দক্ষতায় দক্ষ হতে শুরু করেন।

লেখালেখির প্রতি ভালোবাসা থেকে বিভিন্ন অনলাইন নিউজ পোর্টালে কাজ শুরু করেন কলেজজীবন থেকেই। তারই ধারাবাহিকতায় ‘চ্যানেল আগামী’ নামক অনলাইন নিউজ পোর্টালে কাজ করেছেন প্রায় তিন বছর। হেড অব হিউম্যান রিসোর্স হিসেবে প্রায় এক বছর কর্মরত ছিলেন সেখানে। দেশের অন্যতম উঠতি সংগঠন নিউজ পেপার অলিম্পিয়াড; যারা তরুণদের নিয়ে কাজ করে চলেছে দেশব্যাপী পত্রিকার ভালোবাসা ছড়িয়ে দিতে। সেই ‘নিউজপেপার অলিম্পিয়াড’-এ এক বছর গাজীপুর জেলার কো-অর্ডিনেটর হিসেবে দায়িত্ব পালনের পর দায়িত্ব পান ঢাকা বিভাগীয় ডেপুটি কো-অর্ডিনেটর হিসেবে এবং বর্তমানে প্রমোশনের মাধ্যমে হেড অব ব্র্যান্ড অ্যান্ড মার্কেটিং পদে উন্নীত হয়েছেন। বিশ্ববিদ্যালয়ের ক্লাবগুলোতেও রেখে চলছেন অবিস্মরণীয় অবদান; এসিস্ট্যান্ট ইনফরমেশন অ্যান্ড প্রেস সেক্রেটারি হিসেবে দায়িত্ব পালন করছেন ‘বিইউএফটি ক্যারিয়ার ডেভেলপমেন্ট ক্লাব’-এ।

মানুষের কল্যাণে অবদান রাখার স্বপ্ন থেকেই গড়ে তোলেন স্বেচ্ছাসেবী সংগঠন ‘স্বপ্নদ্রষ্টা’, যেই সংগঠন প্রায় দীর্ঘ চার বছর যাবত নিঃস্বার্থভাবে সমাজের কল্যাণে কাজ করে চলেছে। লকডাউনে দেশের সব কিছু যখন অচলাবস্থানে চলে গিয়েছে, তখন নাহিদ আহসানের নেতৃত্বে স্বপ্নদ্রষ্টা সংগঠন দারুণ ভূমিকা রেখেছে। 

চমৎকার সব কাজের ফলে ইতোমধ্যে এটিএন বাংলায় তার সাক্ষাৎকার প্রকাশিত হয়েছে। দেশের বিভিন্ন পত্রিকায়ও এসেছে তার সাক্ষাৎকার, হয়েছে লেখালেখি।

সর্বশেষ যেই বিষয়টি তার অর্জনের খাতায় তালিকাভুক্ত হয়েছে, তা ‘মায়ের নীল শাড়ি’। নাহিদ আহসানের প্রথম গল্পগ্রন্থ ‘মায়ের নীল শাড়ি’। প্রায় ১১টি গল্প নিয়ে প্রকাশিত এই গল্পগ্রন্থ ইতোমধ্যে মানুষের কাছে সাড়া ফেলেছে। বইমেলার আগেই অভাবনীয় সাড়া ফেলেছে এই মায়ের নীল শাড়ি। বই লিখে সর্বসাধারণের প্রশংসায় ভাসছেন তিনি। সব মিলিয়ে লেখক হিসেবে আত্মপ্রকাশ করে নিজেকে আরও উচ্চতায় নিয়ে গেছেন। রকমারিসহ অন্যান্য অনলাইন বুকশপে পাওয়া যাচ্ছে বইটি।

নাহিদ আহসান বলেন, ‘মানুষের ভালোবাসায় সিক্ত হয়ে খুবই সাধারণভাবে জীবনযাপন করাই আমার জীবনের মূল লক্ষ্য। মানুষকে ভালো কিছু শেখাতে পারার চেয়ে আনন্দের কিছু নেই আমার কাছে। মানুষের উপকারেই সবসময় কাজ করে যাবো। এটাই আমার অনেক বড় স্বপ্ন। ’

তিনি আরও বলেন, ‘বাবা-মা সবসময়ই আমার সাহস, শক্তি হিসেবে পাশে আছেন। আমার অনুপ্রেরণা হিসেবে আমি নিজেকেই দেখি। কারণ দিন শেষে আমি একজন ‘নাহিদ’, অন্য কেউ হতে পারবো না।’

বই পড়ার গুরুত্ব নিয়ে তিনি বলেন, ‘যারা বেশি বেশি বই পড়ে, তারা সত্যিকারের মানুষ হয়। সঠিক জীবনবোধ তাদের মধ্যে থাকে। তারা ভুল জীবনযাপন করে না। তাই সবাইকে বই পড়ার প্রতি আগ্রহী করে তোলা উচিত। বই পড়লে, সুশিক্ষায় শিক্ষিত হলেই দেশের সামাজিক অসংগতিগুলো কমে আসবে। তাই মানুষকে বই পড়ার প্রতি আগ্রহী করা উচিত। একজন লেখক, একটা সমাজের অন্যতম সম্মানিত মানুষ। একজন লেখকের প্রতি মানুষের দৃষ্টিভঙ্গি বদলানো উচিত। সমাজের মেরুদণ্ড ঠিক রাখতে লেখকরা অন্যতম গুরুত্বপূর্ণ পালন করে।’

নাহিদ আহসান একজন উদাহরণ হিসেবে বেড়ে উঠছেন। বেড়ে উঠছেন একজন লেখক, পাবলিক স্পিকার ও সংগঠক হিসেবে। বর্তমান বিশ্ব তার মতো তরুণদের স্বাগত জানায় নির্বিঘ্নে।

লেখক: শিক্ষার্থী, আদমজী ক্যান্টনমেন্ট কলেজ।

ঢাকা/মাহি 

সম্পর্কিত বিষয়:

আরো পড়ুন  



সর্বশেষ

পাঠকপ্রিয়