ঢাকা     মঙ্গলবার   ২৩ এপ্রিল ২০২৪ ||  বৈশাখ ১০ ১৪৩১

চার শিক্ষার্থীর অন্যরকম লড়াই   

রফিক সরকার || রাইজিংবিডি.কম

প্রকাশিত: ১২:২১, ৫ মে ২০২১   আপডেট: ১২:২১, ৫ মে ২০২১
চার শিক্ষার্থীর অন্যরকম লড়াই   

নাঈম মোড়ল, সাইফ মোড়ল, সাখাওয়াত মৃধা ও নাহিদ শেখ। তাদের চারজনের বাড়িই গাজীপুরের শ্রীপুরে। পড়াশোনা করছেন বিভিন্ন বিশ্ববিদ্যালয়ে। এখন করোনাকালীন সময়ে বন্ধ রয়েছে দেশের সব শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান। কিন্তু তারা বসে নেই। বিশ্ববিদ্যালয় বন্ধ থাকায় অবসর সময়ে টিউশনের টাকায় গড়েছেন মূলধন। আর সেই মূলধন দিয়ে শুরু করেছেন ক্যাপসিকাম চাষ। উপজেলার গোসিংগা ইউনিয়নের পেলাইদ গ্রামে নিজেদের আড়াই বিঘা জমিতে এ ক্যাপসিকামের চাষাবাদ করেছেন তারা। 

তরুণ চাষিরা জানান, মহামারি করোনায় গত বছরের ১৭ মার্চ থেকে শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান বন্ধের ঘোষণা এলে ঘরবন্দী জীবন শুরু হয় তাদের। অনেকে অনলাইনে বিভিন্ন বিষয়ে কোর্স করছেন, ব্যবসা করছেন আবার অনেকে শুয়ে-বসে ও ঘুরে পার করছেন করোনার ছুটি। তাদের চিন্তা হলো তারা বসে থাকবেন না, এই সময়টা কাজে লাগাবেন- উদ্যোক্তা হবেন, যাতে শিক্ষাজীবন শেষে বেকার না থাকতে হয়।

নাঈম মোড়ল বলেন, আমরা চার বন্ধু আড্ডায় বসে সিদ্ধান্ত নিলাম নিজেদের উদ্যোগে কী চাষাবাদ করা যায়। এসময় কাওসার আর আমি ব্যাপারটি ইউটিউবের মাধ্যমে দেখেছিলাম। কারণ বহির্বিশ্বে গ্রিনহাউজ ছাড়াও খোলা মাঠে ক্যাপসিকামের বাণিজ্যিক উৎপাদন করা হয়। তারপর আমরা ক্যাপসিকাম চাষ নিয়ে আরও অনুসন্ধান করে মনোবল বাড়ালাম।

সাইফ মোড়ল বলেন, আমাদের বাড়ি গোসিংগা ইউনিয়নে হলেও শ্রীপুর পৌর শহরের কেওয়া পূর্বখণ্ড এলাকার চাষি দেলোয়ারের সঙ্গে পরিচয় ছিল। যেহেতু এই ফসলের সঙ্গে একদমই পরিচিত ছিলাম না, তাই আমরা প্রথমত তার সঙ্গে বীজ নেওয়ার জন্য কথা বলি। একদম ভালো জাতের বীজ এনে দেওয়ার ব্যাপারে তিনি আমাদের আশ্বস্ত করেন। আমরা তার কাছ থেকে পর্যাপ্ত পরিমাণ ভালো লাল, হলুদ ও সবুজ ক্যাপসিকামের বীজ সংগ্রহ করি। অতঃপর বীজতলা করে আমরা দীর্ঘ এক মাস পর জমিতে রোপণের উপযোগী চারা পাই। প্রথমত ট্রাক্টর দিয়ে ৮৫ শতাংশ জমি চাষ করি।

সাখাওয়াত মৃধা বলেন, এলাকার সুমন মিয়া নামে এক বড় ভাই, যিনি কৃষি অফিসে চাকরি করেন। যেহেতু তিনি কৃষি নিয়ে বাস্তব অভিজ্ঞতাসম্পন্ন হওয়ায় তার সহায়তায় এই জমিতে চারা রোপণ, মাটির উর্বরতা বৃদ্ধি ও সারের পরিমাণ জানতে পারি। সবশেষ ২০২০ সালের নভেম্বর মাসের শুরুর দিতে চারা রোপণ করা হয়। রোপণের ৬০ দিন পর থেকে ফল আসা শুরু করে। তবে প্রথম দফায় প্রায় ২ হাজার ১০০ কেজি বিক্রি হয়। শিলাবৃষ্টি ও পোকামাকড় খেয়ে ফেলে কিছু অংশ। তবে দ্বিতীয় দফায় প্রায় ২ হাজার ৫০০ কেজির মতো বিক্রি করা যেতে পারে।

উদ্যোক্তারা জানান, করোনায় লকডাউনে বাজার পরিধি সীমিত পরিসরে হওয়ায় ন্যায্য মূল্য পাওয়া যাচ্ছে না। যেখানে আমরা ইউটিউবে দেখলাম ২০০-৩০০ টাকা কেজি, সেখানে স্থানীয় বাজারে ৩০-৪০ টাকা কেজিতে বিক্রি করতে হচ্ছে। এতে আমাদের খরচের টাকাও উঠবে কিনা, এ নিয়ে সংশয় প্রকাশ করেন তারা।

স্থানীয় বাসিন্দা আকতার হোসেন বলেন, এই এলাকায় প্রথমবারের মতো ক্যাপসিকামের চাষাবাদ করে শিক্ষার্থীদের উদ্যোগী হওয়াটা অবশ্যই কৃষিতে ইতিবাচক সংযোজন। প্রশাসনের পক্ষ থেকে যথাযথ নজরদারি ও আর্থিক সহায়তা দিয়ে তাদের পাশে দাঁড়ানো প্রয়োজন বলে আমি মনে করি।

শ্রীপুর উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা মূয়ীদুল হাসান বলেন, শিক্ষার্থীদের এমন উদ্যোগ অবশ্যই প্রশংসার দাবি রাখে। চাষাবাদের প্রথম থেকেই কৃষি অফিস তাদের পরামর্শ ও দিকনির্দেশনা দিয়ে আসছে।

তিনি আরও বলেন, উৎপাদনের দিক থেকে তাদের জমিতে ভালো ফলন হয়েছে। কিন্তু বাজার পরিস্থিতির কারণে চাহিদা কম থাকায় ন্যায্য মূল্য থেকে বঞ্চিত হয়েছেন তারা। তবে উদ্যোক্তা হিসেবে ওই চার শিক্ষার্থীকে সরকারি কোনো প্রণোদনার আওতায় আনা যায় কিনা সেটা পর্যালোচনা করে ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষের সঙ্গে কথা বলে ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে বলেও জানান ওই কৃষি কর্মকর্তা।

চার তরুণ চাষি হলেন- নাঈম মোড়ল, উত্তরা ইউনিভার্সিটিতে বিএসসিতে (সিভিল) পড়ছেন। সাইফ মোড়ল পড়ছেন পিয়ার আলী বিশ্ববিদ্যালয় কলেজে। এদিকে টঙ্গী সরকারি কলেজে পড়ছেন সাখাওয়াত মৃধা ও শ্রীপুর রহমত আলী সরকারি কলেজে পড়াশোনা করছেন নাহিদ শেখ। একই কাজে ওই চার শিক্ষার্থীকে সহযোগিতা করছেন কাওসার অমি, মাহফুজুর রহমান রিয়া, সিজান, সুমন মোড়ল ও জুয়েল।

গাজীপুর/মাহি 

সম্পর্কিত বিষয়:

আরো পড়ুন  



সর্বশেষ

পাঠকপ্রিয়