ঢাকা     শুক্রবার   ১৭ মে ২০২৪ ||  জ্যৈষ্ঠ ৩ ১৪৩১

জবি ছাত্রীর আত্মহত্যা

বাবার কবরের পাশে চিরনিদ্রায় শায়িত অবন্তিকা

কুমিল্লা প্রতিনিধি || রাইজিংবিডি.কম

প্রকাশিত: ১৬:০০, ১৬ মার্চ ২০২৪   আপডেট: ১৬:৫৭, ১৬ মার্চ ২০২৪
বাবার কবরের পাশে চিরনিদ্রায় শায়িত অবন্তিকা

জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়ের আইন বিভাগের শিক্ষার্থী ফাইরুজ অবন্তিকা শুক্রবার (১৫ মার্চ) রাত ১০টার দিকে আত্মহত্যা করেন। আজ শনিবার বেলা ৪টার দিকে দ্বিতীয় জানাযা শেষে বাবা কুমিল্লা সরকারি কলেজের সাবেক অধ্যাপক জামাল উদ্দিনের কবরের পাশে তাকে দাফন করা হয়।

এর আগে, আজ শনিবার ময়নাতদন্ত শেষে কুমিল্লা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের মর্গ থেকে অবন্তিকার মরদেহ দুপুর ২টার আগেই বাড়িতে নিয়ে আসা হয়। তাকে ধোয়ানো শেষে দুপুর ৩টার দিকে কুমিল্লা সরকারি কলেজে প্রথম নামাজে জানাজা অনুষ্ঠিত হয়। পরে বেলা পৌনে ৪টায় কুমিল্লা শহরতলীর শাসনগাছা জামে মসজিদ প্রাঙ্গণে দ্বিতীয় নামাজে জানাজা অনুষ্ঠিত হয়।

জানাজা নামাজের পূর্বে কাঁদতে কাঁদতে অবন্তিকার ভাই অপূর্ব বলেন, যারা আমার আপুকে টর্চার করে হত্যা করেছে। তাদের বিচার করুন। এভাবে আমার আপুকে তারা টার্চার করলো, কিন্তু শিক্ষক কাছে বিচার চেয়েও ও (অবন্তিকা) বাঁচলো না। এদের সবাইকে ফাঁসি দিতে হবে।

এসময় অবান্তিকার স্কুল ও কলেজের শিক্ষক, সহপাঠী, স্বজনরা দোষীদের সর্বোচ্চ সাজা ফাঁসি দাবি করেন। 

এদিকে অবান্তিকাকে এক নজর দেখতে কুমিল্লা নগরীসহ বিভিন্ন উপজেলা থেকে হাজার হাজার মানুষ তার দ্বিতীয় জানাজায় এসে উপস্থিত হন। গতকাল থেকে তার মৃত্যুতে শোকে মূহ্যমান হয়ে পড়েছে তার গ্রামের বাড়ি কুমিল্লার লোকজন। আত্মীয়-স্বজনের আহাজারিতে ভারী হয়ে উঠেছে কুমিল্লায় নগরীর বাগিচাগাও এলাকা। 

এর আগে, জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যাললে সহকারী প্রক্টর দীন ইসলাম ও সহপাঠী আম্মান সিদ্দিককে দায়ী করে শুক্রবার (১৫ মার্চ) রাত ১০টার দিকে কুমিল্লা নগরীর বাগিচাগাঁও এলাকায় নিজ বাসায় গলায় ফাঁস নিয়ে আত্মহত্যা করেন ফাইরুজ অবন্তিকা। তিনি কুমিল্লা সরকারি কলেজের সাবেক অধ্যাপক মৃত জামাল উদ্দিন ও তাহমিনা শবনমের মেয়ে।

মারা যাওয়ার আগে ফেসবুকে দেওয়া অবন্তিকার স্ট্যাটাসটি তুলে ধরা হলো- আমি যদি কখনো সুইসাইড করে মারা যাই তবে আমার মৃত্যুর জন্য একমাত্র দায়ী থাকবে আমার ক্লাসমেট আম্মান সিদ্দিকী, আর তার সহকারী হিসেবে তার সঙ্গে ভালো সম্পর্ক থাকার কারণে তাকে সাপোর্টকারী জগন্নাথের সহকারী প্রক্টর দ্বীন ইসলাম। আম্মান যে আমাকে অফলাইন ও অনলাইনে থ্রেটের (হুমকি) উপর রাখতো সে বিষয়ে প্রক্টর অফিসে অভিযোগ করেও আমার লাভ হয় নাই। দ্বীন ইসলাম আমাকে নানানভাবে ভয় দেখায়, আমাকে বহিষ্কার করা ওনার জন্য হাতের ময়লার মতো ব্যাপার।

আমি জানি এখানে কোনো জাস্টিস (বিচার) পাবো না। কারণ দ্বীন ইসলামের অনেক চামচা ওর পাশে গিয়ে দাঁড়াবে। এই লোককে আমি চিনতামও না। আম্মান আমাকে সেক্সুয়ালি এবিউজিভ কমেন্ট করায় আমি তার প্রতিবাদ করলে আমাকে দেখে নেওয়ার জন্য দ্বীন ইসলামের শরণাপন্ন করায়। আর দ্বীন ইসলাম আমাকে তখন প্রক্টর অফিসে একা ডেকে নারীজাতীয় গালিগালাজ করে। সেটা অনেক আগের ঘটনা হলেও সে এখনো আমাকে নানাভাবে মানহানি করতেসে বিভিন্ন জনের কাছে বিভিন্ন কথা বলে।

আর এই লোক কুমিল্লার হয়ে কুমিল্লার ছাত্র কল্যাণের তার ছেলেমেয়ের বয়সী স্টুডেন্টদের মাঝে কী পরিমাণ প্যাঁচ ইচ্ছা করে লাগায় সেটা কুমিল্লার কারো সৎ সাহস থাকলে সে স্বীকার করবে। এই লোক আমাকে আম্মানের অভিযোগ এর প্রেক্ষিতে ৭ বার প্রক্টর অফিসে ডাকায় নিয়ে ".... (প্রকাশ অযোগ্য শব্দ) তুই এই ছেলেরে থাপড়াবি বলসস কেনো? তোরে যদি এখন আমার জুতা দিয়ে মারতে মারতে তোর ছাল তুলি তোরে এখন কে বাঁচাবে?

আফসোস এই লোক নাকি ঢাবির খুব প্রমিনেন্ট ছাত্রনেতা ছিল। একবার জেল খেটেও সে এখন জগন্নাথের প্রক্টর। সো ওর পলিটিক্যাল আর নষ্টামির হাত অনেক লম্বা না হলেও এতো কুকীর্তির পরও এভাবে বহাল তবিয়তো থাকে না এমন পোস্টে। কোথায় এই লোকের কাজ ছিল গার্ডিয়ান হওয়া, আর সো কিনা আমার জীবনটারেই শেষ না হওয়া পর্যন্ত মুক্তি দিলো না। আমি উপাচার্য সাদোকা হালিম ম্যামের কাছে এই প্রতিষ্ঠানের অভিভাবক হিসেবে বিচার চাইলাম।

আর আমি ফাঁসি দিয়ে মরতেসি। আমার উপর দিয়ে কী গেলে আমার মতো নিজেকে এতো ভালোবাসে যে মানুষ সে মানুষ এমন কাজ করতে পারে। আমি জানি এটা কোনো সলিউশন না কিন্তু আমাকে বাঁচতে দিতেসে না বিশ্বাস করেন। আমি ফাইটার মানুষ। আমি বাঁচতে চাইছিলাম! আর পোস্ট মর্টেম করে আমার পরিবারকে ঝামেলায় ফেলবেন না। এমনিতেই বাবা এক বছর হয় নাই মারা গেছেন, আমার মা একা। ওনাকে বিব্রত করবেন না। এটা সুইসাইড না এটা মার্ডার। টেকনিক্যালি মার্ডার। আর আম্মান নামক আমার ক্লাসমেট ইভটিজারটা আমাকে এটাই বলছিল যে আমার জীবনের এমন অবস্থা করবে যাতে আমি মরা ছাড়া কোনো গতি না পাই। তাও আমি ফাইট করার চেষ্টা করসি। এখন দেয়ালে পিঠ ঠেকে গেছে সহ্য ক্ষমতার।

/রুবেল/মেহেদী/

আরো পড়ুন  



সর্বশেষ