কপিরাইট অফিস ‘হাসপাতাল’ বানানো হোক: আসিফ
দেশের সঙ্গীতাঙ্গনে কপিরাইট নিয়ে সবচেয়ে বেশি সোচ্চার বাংলা গানের ‘যুবরাজ’খ্যাত গায়ক আসিফ আকবর। আজ বিশ্ব গ্রন্থ ও কপিরাইট দিবস। বিশ্বজুড়ে পঠন-পাঠন, প্রকাশনা ও কপিরাইটকে উৎসাহ দিতে ১৯৯৫ সালের ২৩ এপ্রিল দিবসটি উদযাপন শুরু করে ইউনেস্কো। বিশেষ এই দিনটিতে রাইজিংবিডির জ্যেষ্ঠ বিনোদন প্রতিবেদক কথা বলেছেন আসিফ আকবরে সঙ্গে। কথোপকথনে উঠে এসেছে দেশের বর্তমান কপিরাইট আইন ব্যবস্থাপনা নিয়ে এই গায়কের হতাশার কথা।
রাহাত সাইফুল: বর্তমানে কপিরাইট আইনে একজন শিল্পীর কতটুকু বুঝে পাওয়া সম্ভব?
আসিফ আকবর: সম্ভব নয়। কারণ কপিরাইট আইন অনুযায়ী কে কতটুকু পাবে সুস্পষ্ট ভাগ করা নেই। গীতিকার, সুরকার, শিল্পী কে কতটুকু পাবে তার সুস্পষ্ট নীতিমালা নেই এবং রেট উল্লেখ করা নেই।
রাহাত সাইফুল: আপনাকে বরাবরই আমরা কপিরাইট নিয়ে সোচ্চার দেখেছি। এ ক্ষেত্রে জটিলতা আসলে কোথায় বলে আপনি মনে করেন?
আসিফ আকবর: আমাদের মূল গান হচ্ছে ছায়াছবির গান। এই গানগুলো মূল প্রযোজকগণ তৃতীয় একটি পক্ষের কাছে বিক্রি করে দিয়েছেন। তিন-চারটা কোম্পানির কাছে গানগুলো কুক্ষিগত হয়ে আছে। কোটি কোটি টাকা প্রতি মাসে তারা নিচ্ছেন। অথচ কোনো শিল্পী, গীতিকার, সুরকার চুক্তি ছাড়া টাকা পাচ্ছেন না। এই টাকা পেলে তারা তাদের শিল্পকর্ম দিয়ে বাঁচতে পারতেন!
রাহাত সাইফুল: করণীয় কী?
আসিফ আকবর: এই কোম্পানিগুলোর হাত থেকে বাঁচতে হবে। কপিরাইটের প্রথম পদক্ষেপ হবে- সিনেমার গানগুলোর স্বত্ব শেয়ার হিসেবে গীতিকার, সুরকার ও শিল্পীদের দিতে হবে। এই কোম্পানিগুলোর হাত থেকে শিল্পী, সুরকার, গীতিকারদের বাঁচাতে হবে৷ কপিরাইট আইন বদলাতে হবে। কারণ আইন অনুযায়ী প্রযোজক মালিক। মূল যে প্রযোজক সে কিন্তু নেই। তৃতীয় পক্ষ কিনে প্রযোজক হয়ে গেছেন। যেটা আইন অনুযায়ী আমাদের সঙ্গে যায় না। এই রুলস কারেকশন করতে হবে।
বিষয়গুলো নিয়ে দীর্ঘদিন ধরে কথা বলে যাচ্ছি। অগ্রগতি হচ্ছে না। আমার ১৪টা গানের কপিরাইট করতে আট মাস আগে কপিরাইট অফিসে গিয়েছিলাম। এখন পর্যন্ত কপিরাইট হয়নি। এই যদি হয় অবস্থা তাহলে আমার গান আছে আড়াই হাজার- সেগুলোর কী হবে? এই গানগুলো কপিরাইট করতে লাগবে ১১৯ বছর! কপিরাইটের যে মূল কাজ তা আমাদের কপিরাইট অফিস মেনটেইন করতে পারছে না। প্রভাবশালীদের হয়ে কাজ করছে তারা। এটা অত্যন্ত হতাশাজনক।
রাহাত সাইফুল: এ বিষয়ে আপনারা কোনো জোড়ালো পদক্ষেপ নিয়েছেন কী?
আসিফ আকবর: আমি তো ১৩ বছর ধরে এ বিষয়ে কথা বলে আসছি। অন্যদেরও কথা বলতে হবে। সমস্যাগুলো দূর করার জন্য সরকারকে আন্তরিক হতে হবে। কপিরাইট অফিসে আন্তরিকভাবে কাজ করবে তেমন লোকবলও নেই!
রাহাত সাইফুল: আজ কপিরাইট দিবসে আপনার চাওয়া কী?
আসিফ আকবর: কপিরাইট দিবসে আমার একটা আবেদন- দীর্ঘদিন ধরে কপিরাইট অফিসের কোনো কর্মকাণ্ড দেখতে পাচ্ছি না। বরং যারা ক্ষমতাসীন তারাই সুবিধা নিচ্ছেন। কপিরাইট অফিসের গতি বাড়াতে হবে। আইনের পরিবর্তন আনতে হবে। শিল্পীদের জন্য আলাদা কোনো হাসপাতাল নেই৷ পুলিশ, আর্মিসহ সবার হাসপাতাল আছে। শিল্পীদের নেই। তাই কপিরাইট অফিসকে হাসপাতাল বানিয়ে দেওয়া হোক। এতে অন্তত শিল্পীরা অসুস্থ হলে সেবা পাবেন।
আরও পড়ুন :
*কপিরাইট: আইনি সুরক্ষা কোন পথে
*কপিরাইট: পাইরেসি ও চৌর্যবৃত্তি
*কপিরাইট নিয়ে ফটোগ্রাফারদের ভাবনা
*যে কারণে কপিরাইট আইন মানায় আগ্রহ কম
ঢাকা/তারা