ঢাকা     সোমবার   ২৯ ডিসেম্বর ২০২৫ ||  পৌষ ১৫ ১৪৩২

Risingbd Online Bangla News Portal

আন্তর্জাতিক বাণিজ্য মেলা শুরু ১ জানুয়ারি

বিশেষ প্রতিবেদক || রাইজিংবিডি.কম

প্রকাশিত: ১৭:২০, ২৯ ডিসেম্বর ২০২৫   আপডেট: ১৭:২২, ২৯ ডিসেম্বর ২০২৫
আন্তর্জাতিক বাণিজ্য মেলা শুরু ১ জানুয়ারি

ডিআইটিএফ ২০২৬ আয়োজন বিষয়ে সংবাদ সম্মেলন।

দেশীয় পণ্যের প্রচার, রপ্তানি সক্ষমতা তুলে ধরাসহ উদ্যোক্তাদের নতুন বাজারের সঙ্গে যুক্ত করার লক্ষ্য নিয়ে আগামী ১ জানুয়ারি শুরু হচ্ছে ৩০তম ঢাকা আন্তর্জাতিক বাণিজ্য মেলা (ডিআইটিএফ-২০২৬)।

পূর্বাচলের বাংলাদেশ-চায়না ফ্রেন্ডশিপ এক্সিবিশন সেন্টারে মাসব্যাপী এ মেলার উদ্বোধন করবেন প্রধান উপদেষ্টা অধ্যাপক ড মুহাম্মদ ইউনূস।

আরো পড়ুন:

সোমবার (২৯ ডিসেম্বর) বাংলাদেশ-চায়না ফ্রেন্ডশিপ এক্সিবিশন সেন্টারে ডিআইটিএফ ২০২৬ আয়োজন বিষয়ে সংবাদ সম্মেলনে এ কথা বলেন বাণিজ্য সচিব মাহবুবুর রহমান।

এ সময় উপস্থিত ছিলেন ইপিবি ভাইস চেয়ারম্যান হাসান আরিফ, বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ের অতিরিক্ত সচিব (রপ্তানি) আব্দুর রহিম খান, ইপিবির মহাপরিচালক বেবি রাণী কর্মকার প্রমুখ।

বাণিজ্য মন্ত্রণালয় ও রপ্তানি উন্নয়ন ব্যুরো যৌথ উদ্যোগে ১৯৯৫ সাল থেকে ঢাকা আন্তর্জাতিক বাণিজ্য মেলা আয়োজন করছে।

সংবাদ সম্মেলনে মাহবুবুর রহমান বলেন, “এবারের বাণিজ্য মেলায় অনলাইনে বিভিন্ন ক্যাটাগরির প্যাভিলিয়ন ও স্টল স্পেস বরাদ্দ দেওয়া হয়েছে। মেলায় এবারে ক্রেতা-দর্শনার্থীদের জন্য স্পটে টিকিট ক্রয়সহ ই-টিকিট পাওয়ার ব্যবস্থা করা হয়েছে। ক্রেতা-দর্শনার্থীদের যাতায়াতের সুবিধার্থে বিআরটিসির ডেডিকেটেড বাস সার্ভিসের পাশাপাশি যুক্ত হচ্ছে কনসেশনাল রেটে পাঠাও সার্ভিস।”

রপ্তানি উন্নয়ন ব্যুরোর বিভিন্ন কার্যক্রম ও রপ্তানি খাতগুলোর সক্ষমতা প্রক্ষেপণ করার লক্ষ্যে ‘Export Enclave’ তৈরি করা হয়েছে। এবারের বাণিজ্য মেলায় ৫২ এর ভাষা আন্দোলন, বাংলাদেশের মুক্তিযুদ্ধ এবং ২০২৪ এর জুলাই আন্দোলনে আহত ও শহীদের স্মরণে স্থিরচিত্র প্রদর্শনের জন্য বাংলাদেশ স্কয়ার নির্মাণ করা হয়েছে। মেলায় সম্ভাবনাময় সেক্টর ও পণ্যভিত্তিক সেমিনার আয়োজনের উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে।

বিদেশি উদ্যোক্তা ও প্রতিষ্ঠানের সুবিধার্থে থাকছে ইলেক্ট্রনিক্স ও ফার্নিচার জোন। সিনিয়র সিটিজেনদের জন্য তৈরি করা হয়েছে সিটিং কর্নার। শিশুদের নির্মল চিত্তবিনোদনের জন্য মেলায় থাকছে দুটি শিশু পার্ক। পণ্য প্রসার ও বিপণনের জন্য মেলায় থাকছে উন্মুক্ত সাংস্কৃতিক কেন্দ্র। মহিলা, প্রতিবন্ধী, বিভিন্ন শিল্পের উদ্যোক্তাদের সংরক্ষিত স্টল বরাদ্দ দেওয়া হয়েছে। এবারের মেলায় পলিথিন ব্যাগ এবং সিঙ্গেল ইউজ প্লাস্টিক ব্যবহার নিষিদ্ধ করা হয়েছে। বিকল্প হিসেবে হ্রাসকৃত মূল্যে বস্ত্র ও পাট মন্ত্রণালয়ের মাধ্যমে পরিবেশবান্ধব শপিং ব্যাগ সরবরাহ করা হবে।

এছাড়া তারুণ্যের শক্তি ও উদ্ভাবনী উদ্যোগকে উৎসাহিত করতে মাসব্যাপী মেলায় থাকছে সেমিনারসহ সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান।

পঞ্চমবারের মতো বাণিজ্য মেলা অনুষ্ঠিত হতে যাচ্ছে পূর্বাচলস্থ বাংলাদেশ-চায়না ফ্রেন্ডশিপ এক্সিবিশন সেন্টারে। মেলার লে-আউট প্ল্যান অনুযায়ী বিভিন্ন ক্যাটাগরির ৩২৪টি প্যাভিলিয়ন/স্টল/রেস্টুরেন্ট দেশীয় উৎপাদক-রপ্তানিকারক প্রতিষ্ঠানসহ সাধারণ ব্যবসায়ী প্রতিষ্ঠান এবং বিদেশি প্রতিষ্ঠানগুলোকে স্টল বরাদ্দ দেওয়া হয়েছে। দেশি বস্ত্র, মেশিনারিজ, কার্পেট, কসমেটিক্স অ্যান্ড বিউটি এইডস, ইলেকট্রিক্যাল অ্যান্ড ইলেক্ট্রনিক্সস, ফার্নিচার, পাট ও পাটজাত পণ্য, গৃহসামগ্রী, চামড়া, আর্টিফিশিয়াল চামড়া, জুতাসহ চামড়াজাত পণ্য, স্পোর্টস গুডস, স্যানিটারিওয়‍্যার, খেলনা, স্টেশনারি, ক্রোকারিজ, প্লাস্টিক, মেলামাইন পলিমার, হারবাল ও টয়লেট্রিজ, ইমিটেশন জুয়েলারি, প্রক্রিয়াজাত খাদ্য, ফাস্টফুড, হস্তশিল্পজাত পণ্য, হোম ডেকর ইত্যাদি পণ্য মেলায় প্রদর্শিত হবে এবার। সেন্টারের দক্ষিণ-পূর্ব পাশে বাংলাদেশ স্কয়ার, দক্ষিণ-পশ্চিম পাশে কালচারাল সেন্টার, রিক্রিয়েশনাল কর্নার এবং সেন্টারের উত্তর-পূর্ব পাশে দুটি শিশু পার্ক ও উত্তর-পশ্চিম পাশে নামাজ পড়ার ব্যবস্থা করা হয়েছে। ব্যাংকিং সার্ভিসের জন্য মেলায় থাকবে পর্যাপ্ত সংখ্যক এটিএম বুথ। মা ও শিশুদের জন্য মেলায় থাকবে মা ও শিশু কেন্দ্র। এছাড়া অন্যান্য প্রয়োজনীয় সেবার মধ্যে রক্ত সংগ্রহ কেন্দ্র, মসজিদ, দর্শনার্থীদের বিশ্রামের জন্য আরামদায়ক ও শোভন চেয়ার বেঞ্চ, সিনিয়র সিটিজেনদের জন্য সিটিং কর্নার ইত্যাদির ব্যবস্থা করা হয়েছে।

মেলায় সাধারণ দর্শনার্থীদের যাতায়াতের সুবিধার্থে কুড়িল বিশ্বরোড, ফার্মগেট, নারায়ণগঞ্জ ও নরসিংদী থেকে প্রতিদিন সকাল ৮টা থেকে বাণিজ্য মেলার উদ্দেশ্যে বিআরটিসির ২০০টির বেশি ডেডিকেটেড শাটল বাস চলবে। মেলা প্রাঙ্গণ থেকে শাটল বাসের সর্বশেষ ট্রিপ ছাড়বে রাত ১১টায়। নির্ধারিত ভাড়া অনুযায়ী ফার্মগেট খামারবাড়ি থেকে মেলা প্রাঙ্গণ পর্যন্ত জনপ্রতি ভাড়া ৭০ টাকা, কুড়িল বিশ্বরোড থেকে ৪০ টাকা, চাষাড়া থেকে ১২০ টাকা, মুক্তারপুর থেকে ১৩০ টাকা, নরসিংদী থেকে ১০০ টাকা এবং মেলা প্রাঙ্গণ থেকে সাইনবোর্ড পর্যন্ত ভাড়া ১০০ টাকা নির্ধারণ করা হয়েছে। এছাড়া স্বল্পমূল্যে যাত্রী পরিবহনের জন্য পাঠাও অ্যাপসের মাধ্যমেও বিশেষ উদ্যোগ গ্রহণ করা হয়েছে।

মেলার প্রাপ্তবয়স্কদের টিকিটের মূল্য জনপ্রতি ৫০ টাকা। শিশুদের (১২ বছরের নিচে) ক্ষেত্রে ২৫ টাকা। তবে মুক্তিযোদ্ধা ও প্রতিবন্ধী ও জুলাই আহত তাদের কার্ড প্রদর্শনপূর্বক বিনামূল্যে মেলায় প্রবেশ করতে পারবেন। পূর্বের ন্যায় মেলাটি মাসব্যাপী সকাল ৯টা ৫৫ মিনিটে হতে রাত ৯টা ৫০ মিনিটে পর্যন্ত চলবে। সাপ্তাহিক ছুটির দিনগুলোতে রাত ১০টা পর্যন্ত মেলা চলবে। এছাড়া পাঠাও অ্যাপসের মাধ্যমে স্বল্পমূল্যে মেলায় যাত্রী পরিবহনের উদ্যোগ গ্রহণ করা হয়েছে।

মেলার সার্বিক নিরাপত্তা এবং দর্শনার্থীদের নিরাপত্তা নিশ্চিতকরণার্থে মেলা প্রাঙ্গণে পর্যাপ্তসংখ্যক পুলিশ, আর্মড পুলিশ ব্যাটালিয়ন, র‍্যাব, গোয়েন্দা সংস্থাসহ অন্যান্য আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর সদস্য নিয়োজিত থাকবে। পুলিশ, র‍্যাব, সেনাবাহিনী মেলা প্রাঙ্গণ ও প্রাঙ্গণের বাইরে নিয়মিত টহল দেবে। এছাড়া সার্ভিস গেট ও ভিআইপি গেটের শৃঙ্খলা বজায় রাখার জন্য প্রাইভেট সিকিউরিটি গার্ড নিয়োগ করা হয়েছে। নিরাপত্তা অগ্রাধিকার বিবেচনায় মেলা প্রাঙ্গণের বিভিন্ন গুরুত্বপূর্ণ স্থান, প্রবেশ গেট, পার্কিং এরিয়া এবং সংশ্লিষ্ট সব এলাকায় প্রয়োজনীয়সংখ্যক সিসিটিভি স্থাপন করা হয়েছে। এছাড়া মেলার প্রবেশ গেটে প্রয়োজনীয়সংখ্যক আর্চওয়ে ও মেটাল ডিটেক্টরের ব্যবস্থা করা হয়েছে। একইভাবে যেকোনো ধরনের অগ্নিদুর্ঘটনা প্রতিরোধে মেলায় সার্বক্ষণিক নিয়োজিত থাকবে ফায়ার ব্রিগেড।

এবারের মেলায় পরিষ্কার পরিচ্ছন্নতার বিষয়টি অধিকতর গুরুত্বের সঙ্গে বিবেচনা করা হয়েছে। এক্সিবিশন হলে পর্যাপ্তসংখ্যক পুরুষ ও মহিলা পৃথক টয়লেটের পাশাপাশি এক্সিবিশন হলের বাইরেও পর্যাপ্তসংখ্যক টয়লেট রয়েছে। মেলা প্রাঙ্গণ পরিষ্কার-পরিচ্ছন্ন রাখার জন্য দুই শতাধিক পরিচ্ছন্নতাকর্মী সার্বক্ষণিক নিয়োজিত থাকবে। মেলায় খাদ্য দ্রব্যের মান নিয়ন্ত্রণের জন্য নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেটের নেতৃত্বে আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর সদস্যসহ গঠিত টিম মেলা চলাকালীন প্রত্যহ ভেজালবিরোধী মোবাইল কোর্ট পরিচালনা করবে।

মেলায় ৫টি প্রতিষ্ঠানকে প্রিমিয়ার রেস্টুরেন্ট/প্রিমিয়ার মিনি রেস্টুরেন্ট/কফি সপ বরাদ্দ দেওয়া হয়েছে। এছাড়া, মেলায় এক্সিবিশন সেন্টারের ভিতরে ৫০০ আসন বিশিষ্ট একটি ক্যাফেটেরিয়া রয়েছে যাতে মেলায় আগত দর্শনার্থী নির্ধারিত মূল্যে চমৎকার পরিবেশে মানসম্মত খাবার খেতে পারবেন। মেলায় আগত দর্শনার্থীদের জন্য সার্বক্ষণিক চিকিৎসক ও পেশেন্ট কেয়ার এটেনডেন্ট উপস্থিত থেকে ফ্রি প্রাথমিক চিকিৎসা ও চিকিৎসা পরামর্শ প্রদান করবে। মেলার থাকবে পর্যাপ্ত কার পার্কিংয়ের সুবিধা। ৫ শতাধিক গাড়ি পার্কিং সুবিধাসম্বলিত দ্বিতল কার পার্কিং বিল্ডিং ছাড়াও এক্সিবিশন হলের বাইরে ৬ একর জমিতে এবং রাজউক এর গরুর হাট মাঠসহ ৩টি বিস্তর পার্কিংয়ের ব্যবস্থা রাখা হয়েছে। মেলার সার্বিক কার্যক্রম মনিটরিংয়ের জন্য মেলায় স্থাপন করা হয়েছে একটি অস্থায়ী সচিবালয় ও দর্শনার্থীদের সব প্রকার তথ্য প্রদানের জন্য একটি তথ্য কেন্দ্র।

ঢাকা/নঈমুদ্দীন/সাইফ

সম্পর্কিত বিষয়:

সর্বশেষ

পাঠকপ্রিয়