ঢাকা     মঙ্গলবার   ১৬ এপ্রিল ২০২৪ ||  বৈশাখ ৩ ১৪৩১

যে পথে শুরু পরীমনি তামিম হাসানের প্রেমযাত্রা

রাহাত সাইফুল || রাইজিংবিডি.কম

প্রকাশিত: ০৮:৩৭, ১৪ ফেব্রুয়ারি ২০১৮   আপডেট: ০৫:২২, ৩১ আগস্ট ২০২০
যে পথে শুরু পরীমনি তামিম হাসানের প্রেমযাত্রা

রাহাত সাইফুল: তার হাসিতে অনেকেই প্রেমে পড়েছেন। শুধু চলচ্চিত্রের পর্দায় নয়, বাস্তব জীবনেও অনেকে তার প্রেমে মজেছেন। কেউ দূর থেকে ভালোবেসে গেছেন। আবার কেউ এক বুক ভালোবাসা নিয়ে সাহস করে প্রস্তাব দিয়ে বিফল হয়ে ফিরে এসেছেন। বলছি, ঢাকার চলচ্চিত্রের হালের ক্রেজ চিত্রনায়িকা পরীমনির কথা। কিন্তু অনেকেই জানেন না, এই লাস্যময়ী হাজারো প্রেমীক পুরুষের মন ভেঙে নিজেই একজনের প্রেমে পড়েছেন!

তিনি যার প্রেমে পড়েছেন, তিনিও আলোচিত এবং পরিচিতজন। ‘লাভগুরু’ শিরোনাম তার জন্য যথার্থ। সেই লাভগুরুর মন ভুলানো কথায় অনেক নারী মজেছেন। কিন্তু সবাইকে টেক্কা দিয়ে জয়ী হয়েছেন শুধু একজনই। তিনি পরীমনি। আর পরীমনির মনের মানুষ হলেন সেই লাভগুরু তামিম হাসান। তাদের প্রেমের সূচনা এই ভালোবাসা দিবসেই। গত কয়েক বছর ধরেই তারা চুটিয়ে প্রেম করছেন। এই খবরটি ইতিমধ্যেই অনেকে জেনেছেন। কিন্তু চিত্রনায়িকা পরীমনি ও তামিম হাসানের প্রেমের গল্পটি এখনও অনেকের অজানা। এই প্রথম বারের মতো রাইজিংবিডির প্রতিবেদকের কাছে এই প্রেমীক জুটি ভালোবাসার সত্যি গল্প অকপটে বলেছেন।  

এক ফাল্গুনে হলো দেখা

পরীমনি: ২০১৫ সালে আমার ফোনে একটা কল আসে। আমি আন-নোন নাম্বার বলে রিসিভ করিনি। এরপর এসএমএস আসে। সেখানে ব্র্যাকেটে শুধু একটাই শব্দ ছিল ‘লাভ গুরু’। আমি ভাবলাম লাভগুরু আবার কী? এরপর আমি জানতে পারলাম জনপ্রিয় রেডিও অনুষ্ঠানটির কথা। সেই অনুষ্ঠানে ‘লাভগুরু’ তিনি। আমি তখন কল ব্যাক করলাম। পরে তার অনুষ্ঠানেও গেলাম। এ ভাবেই পরিচয়। আমরা ফেসবুক ফ্রেন্ড হলাম। হাই হ্যালো হতো। তার অনুষ্ঠানে আমি আমার পরিবারের গল্প শেয়ার করেছিলাম। লক্ষ্য করলাম, সে আমার নানু (নানা) ভাইয়ের খোঁজখবর নিচ্ছে। নানুভাই আমার সবচেয়ে কাছের মানুষ। তার খোঁজখবর নিলে আমার ভালো লাগতো। এবং এই কাজটি সে গভীরভাবে করত। তখন আমার মনের মধ্যে তার প্রতি একটা সফট কর্নার তৈরি হলো। শুরু হলো সর্ম্পক।

তামিম হাসান: চিত্রনায়িকা পরীমনি। তার জনপ্রিয়তা রয়েছে। সে কথা বিবেচনা করেই আমার অনুষ্ঠানে তাকে অতিথি করার জন্য ফোন দিয়েছিলাম। এছাড়া আমাদের পত্রিকায় তার নিউজ তো হতোই। ফোন করার পর তার সাথে আমার পরিচয়।


আপনি থেকে আমরা তুমিতে নেমে এলাম

পরীমনি: একবার চকলেট-ডে উপলক্ষে সে আমাকে চকলেট উপহার দিয়েছিল। তখন আমি এফডিসিতে ‘ধুমকেতু’ সিনেমার শুটিং করছিলাম। এর মাধ্যমে দুজনের ফ্রেন্ডশিপ হলো। এরপর দুজন দুজনার খোঁজখবর নিতাম। এভাবে আপনি থেকে আমরা ‘তুমি’তে নেমে এলাম। একবার ওর জন্মদিনে আমার কোনো এক কারণে খুব মন খারাপ ছিলো। বন্ধুদের নিয়ে ও ঘুরতে গিয়েছিলো। তখন আমি বললাম, ছেলে বন্ধুদের নিয়ে ঘুরতে যাবে, মেয়ে বন্ধুদের নিয়ে যাবে না। খালি মুখে মুখেই ‘ফ্রেন্ড ফ্রেন্ড’ করো। এ কথা শোনার পর বাসার ঠিকানা চেয়ে নিল। রাতে দেখি সে সত্যি সত্যি আমার বাসায় এসে উপস্থিত। তখন আমি তাকে বললাম, আমি জানতাম না তোমার জন্মদিন। কাল আমরা কেক কাটবো। পরদিন আমি কেক কেটেছিলাম।  

তামিম হাসান: আমার অনুষ্ঠানে আসার পর থেকে ওর সাথে আমার কথা হতো। এক পর্যায়ে ও আমার ভালো বন্ধু হয়ে যায়। কীভাবে এটা হয়েছে সেটা ওর কথাতেই নিশ্চয়ই বুঝতে পারছেন।

প্রথম স্পর্শ, প্রথম ভালোলাগা তুলনাহীনা

পরীমনি: ঝগড়া দিয়ে আমাদের প্রেমের সূচনা। ২০১৬ সালের ১৪ ফেব্রুয়ারি আমার মন ভালো ছিলো না। ঘরের মধ্যে কিছু ভাঙচুর করেছি। এজন্য ও আমাকে ফোন করে। এতে আমি রেগে যাই। ও তখন বলল, আমি মায়া করে তোমাকে ফোন করলাম, আর তুমি আমার সাথে ঝগড়া করছো? আমি তখন মায়ার অর্থ বুঝিনি। আমি ভেবেছি করুণা করে ফোন করেছে। এটা মনে করে আমি আরো রেগে গিয়ে ভাঙচুর করেছি। এরপর রাতে ও বাসায় আসে। ওকে দেখে আমি পুনরায় ভাঙচুর শুরু করি। ও তখন আমাকে হঠাৎ জড়িয়ে ধরে। এরপর দুজন দুজনের দিকে তাকাতে পারছি না। কারণ এই প্রথম ওর স্পর্শ পেলাম। প্রথম ভালোলাগার অনুভূতি। আমি বোবা হয়ে গেলাম। ও কিন্তু লজ্জা পাচ্ছিল। এভাবে আমরা কিছুক্ষণ ছিলাম। তখন আমার কিছু বান্ধবী বাসায় ছিল। ওরা আমাদের প্রথম উইশ করে। তখন আমি প্রথম বুঝতে পারলাম, আমরা একে অপরকে ভালোবেসে ফেলেছি। ওরা হাততালি দিচ্ছিলো। তখন রাত আড়াইটা বাজে।

তামিম হাসান: প্রেম আনুষ্ঠানিক ঘোষণা করে হয় না। তবে আমাদের প্রেমটা বলা চলে আনুষ্ঠানিকভাবে হয়েছে। কারণ সেদিন ভালোবাসা দিবস ছিলো। আর সেদিন ওর বন্ধুবান্ধবের সামনেই আমাদের প্রেমের বিষয়টি উম্মোচিত হয়। যদিও এর আগেই আমাদের মধ্যে ভালোলাগা তৈরি হয়ে গিয়েছিলো।
 


প্রেম অভিনয়ে বাধা নাকি সহায়ক

পরীমনি: ও কাজের ক্ষেত্রে খুবই হেল্পফুল। আমরা যে জগতে কাজ করি, ভালোবাসার মানুষ সেই জগতটিকে সম্মান না করলে, মানসিক সাপোর্ট না দিলে কাজ করা অসম্ভব। এ ক্ষেত্রে আমি শতভাগ ভাগ্যবতী।

তামিম হাসান: সে তো চিত্রনায়িকা। তাকে আমি অভিনয়ে বাধা দেব কেন? সে তার কাজ অবশ্যই করবে। ও কাজের বিষয় আমার সঙ্গে শেয়ার করে। তখন আমরা আলোচনা করি। ভালোমন্দ বোঝানোর চেষ্টা করি।  এতটুকুই। 

ভালোবাসার সেরা উপহার

পরীমনি: ভালোবাসা দিবসে ও আমাকে একটা আঙটি দিয়েছিলো। এটা আমার জীবনে অমূল্য রতন। আমি এটা সবসময় হাতে দিয়ে রাখি। কখনও সিনেমায় কাজ করতে গিয়ে সমস্যা হলেও হাত ছাড়া করি না।  

তামিম হাসান: ভালোবাসা দিবসে পরীমনি আমাকে একটা আঙটি উপহার দেয়। ওর মতোই আমার অবস্থা। এটাই আমার কাছে সেরা উপহার। আমি সবসময় হাতে দিয়ে রাখি।

অভিমানী মন যে ভাঙ্গায় আগে

পরীমনি: আমাদের সিরিয়াস কোনো কিছু নিয়ে এখনও ঝগড়া হয়নি। সাধারণ বিষয় নিয়ে ঝগড়া হয়। যেমন আমি টিভি দেখছি, হঠাৎ লক্ষ করলাম ও অর্ধেক দেখেই ঘুমিয়ে গেছে। এমন বিষয় নিয়ে ঝগড়া হয়। এ বিষয়টির জন্য ও সহজে ‘সরি’ বলতে পারে না। অনেক ঘুরিয়ে সরি বলে। তবে আমার সঙ্গে আপোস করার জন্য ও অনেক কিছু করে। কিন্তু সরাসরি সরি বলে না। মাঝে মাঝে ইচ্ছা করে ওকে রাগিয়ে দেই।  

তামিম হাসান: রাগটা ও সব সময় করে। রাগ যেহেতু ও করে, ফলে আমাকেই রাগ ভাঙাতে হয়। তবে তা একটু কৌশল করে।
 


দুজনের প্রেমের বাধা

পরীমনি: চোখের দেখা অনেক কিছু ভুল হতে পারে। সেটা সরাসরি বলে সমাধান করা যায়। মানুষের সামনে সিনক্রিয়েট না করলেই হয়। চার দেয়ালের মধ্যে বসে ফাইট করুক কিন্তু পাবলিকলি সেটা যেন না হয়। এ কারণে সম্পর্কটা হালকা হয়ে যায়। যেমন ধরুন কিছু হলেই ফেসবুকে লিখে ফেলা। এটাকে বলা চলে বড় বাধা। মানুষের জীবনে একম একজন থাকা উচিৎ যে বটবৃক্ষ হবে। যেখানে গেলে সে প্রশান্তি পাবে।

তামিম হাসান: আমাদের প্রেমের ক্ষেত্রে কোনো বাধা নেই। কারণ আমাদের দুই পরিবারের লোকজন বিষয়টা জানেন।

যে কথা আজও হয়নি বলা

পরীমনি: আমি একটা কথা বলতে চাই। আমি হুটহাট রেগে যাই। অনেক চিৎকার করি। কিন্তু একটু পরই আমার এসব মনে থাকে না। পরে মনে হয়, এভাবে কথা না বললেও পারতাম। এটা নিয়ে মন খারাপ হয়। এ জন্য খুবই সরি ফিল করি। তবে আমি বলে রাখি, আমি এমনই। যা করব ওর সামনে করব। ওর সঙ্গেই চিৎকার চেঁচামেচি করব। সারাজীবন ওর সঙ্গে এভাবেই কাটিয়ে দিতে চাই। রাইজিংবিডির মাধ্যমে আজ বলতে চাই- আমি ওকে ‘তাম্মু’ ‘পুটলো’ বলি। পুটলো আমি তোমার সাথে সারাজীবন চিল্লাবো। তুমি মন খারাপ করো না। তুমি এটা মেনে নাও। তোমার এর সাথেই থাকতে হবে। আমি আমার নানুর সাথে এমন চিৎকার চেঁচামেচি করতাম। আমি যখন কলম, বই খুঁজে পেতাম না তখনও এভাবেই চেঁচামেচি করতাম। নানু মারা যাওয়ার পর আমার ফিল হয়েছে, আমি তাকে ‘সরি’ বলতে পারিনি।(কান্নায় ভেঙে পরে) কিছু কিছু মানুষকে সরি বলা যায় না।

তামিম হাসান: আমি তোমাকে অনেক ভালোবাসি।



রাইজিংবিডি/ঢাকা/১৪ ফেব্রুয়ারি ২০১৮/রাহাত/তারা

রাইজিংবিডি.কম

আরো পড়ুন  



সর্বশেষ

পাঠকপ্রিয়