ঢাকা     রোববার   ১৪ ডিসেম্বর ২০২৫ ||  অগ্রহায়ণ ৩০ ১৪৩২

Risingbd Online Bangla News Portal

চান্দের দেশের গায়িকা

|| রাইজিংবিডি.কম

প্রকাশিত: ১২:২০, ২৮ সেপ্টেম্বর ২০১৩   আপডেট: ০৮:৪৫, ১১ আগস্ট ২০২০
চান্দের দেশের গায়িকা

সুমী শবনম

লিমন আহমেদ
ঢাকা, ২৮ সেপ্টেম্বর: ‘চান্দের হাঁসি লাগে ভাল-জোসনা পরবাসে/ ললিতা কয় যাব আমি-যাব চান্দের দেশে’-গানটি সবার কাছে পরিচিত। ২০১০ সালে ইটিভিতে প্রচারিত ধারাবাহিক নাটক ‘ললিতা’র আবহ সঙ্গীত এটি। গানের শিল্পী সুমী শবনম।

মূলত সব ধরণের গানেই তার সফল পদচারণা থাকলেও ফোঁক গানের প্রতি রয়েছে আলাদা টান। আর ফোঁক গান তার গলাতে মানায়ও ভাল। তারই প্রমাণ ললিতা গানটি। বলাবাহুল্য, ললিতা ধারাবাহিক চলাকালীন ‘ললিতা’ গানটি ছিল সবার মুখে মুখে।

সুমী শবনমের জন্ম মেহেরপুর জেলার গাংনী উপজেলার মহেশপুরে। বাবা মৃত আমীরুদ্দীন বিশ্বাস আর মা রোকেয়া বেগমের পাঁচ সন্তানের মধ্যে সবার ছোট সুমী। তাই আদরের ভাগটা ছিল একটু বেশি। সুমীর পরিবার ছিল সংস্কৃতমনা। বিশেষ করে গানের প্রতি ঝোঁক ছিল সবারই। তাই সুমী গানের হাতেখড়ি নিয়েছিলেন পরিবারেই।

সুমী বলেন, বাবার হাত ধরে গানের সা রে গা মা’র আসরে বসা। অবশ্য ক্ল্যাসিক গানে তিনি তালিম নিয়েছেন মেহেরপুরের বিশিষ্ট সঙ্গীতজ্ঞ ওস্তাদ রতন সরকারের কাছে। ওস্তাদ আক্কাস বয়তীর কাছ থেকেও সঙ্গীতের নানা শাখায় দীক্ষা নিয়েছেন। সুমী মনে করেন তার সঙ্গীত জীবনের সফল পথচলায় পরিবারের মতই অবদান রয়েছে এই দুই শ্রদ্ধেয় ওস্তাদের।

ছোটবেলায় বুকের গভীরে বুনেছিলেন শিল্পী হবার বাসনা। সময়ের সাথে সাথে সে স্বপ্ন হারিয়ে যায়নি। সুমী তাকে জিইয়ে রেখেছিলেন ভালবাসার মায়ায়। পড়াশুনার পাশাপাশি চালিয়ে গিয়েছেন গানের চর্চাও। গান করতেন বিভিন্ন আচার-অনুষ্ঠানে। এভাবেই মানুষ থেকে মানুষে নাম ছড়াতে থাকে গায়িকা সুমী শবনমের।

তবে শোবিজে গানের শিল্পী হিসেবে তার আত্মপ্রকাশ ২০০১ সালে ‘চশমা কিনে দে’ শিরোনামের প্রথম একক অ্যালবাম দিয়ে। নন্দিত গীতিকার ও সঙ্গীত পরিচালক মিল্টন খন্দকারের সঙ্গীতায়োজনে সাজানো ছিল সেই অ্যালবামটি। ভিন্ন স্বাদের গানে শ্রোতাদের মনে জায়গা করে নিয়েছিলেন সুমী।

প্রথম অ্যালবামের সাফল্যের অনুপ্রেরণায় ওই বছরেই বাজারে আসে তার দ্বিতীয় একক ‘দেহযন্তর টেলিফোন’। এই অ্যালবামের ‘দেহযন্তর গানটি’ দেশের সর্বাধিক জনপ্রিয় ম্যাগাজিন অনুষ্ঠান ইত্যাদিতে সম্প্রচার করা হয়। এই সুবাদে গানটি খুব দ্রুত শ্রোতাদের কাছে জনপ্রিয়তা পায়।

তারপর একে একে বের করেছেন আরো ৮টি একক অ্যালবাম। যার মধ্যে মরমী সাধক লালনের গান নিয়ে ‘মিলন হবে কতদিনে’ ও ‘বাড়ির কাছে আড়শী নগর’ উল্লেখযোগ্য। এছাড়াও ইথুন বাবুর সঙ্গীতায়োজনে ‘ভালবাসার নাইরে দাম’ অ্যালবামটিও বেশ শ্রোতাপ্রিয়তা পায়।

সেই তুফান, ইবাদাতসহ গান গেয়েছেন বেশ কিছু চলচ্চিত্রেও। এরমধ্যে আলাউদ্দিন আলীর সুর-সঙ্গীতে  চলচ্চিত্রে কাজ করার অভিজ্ঞতা সুমীকে অনেক কিছু শিখার সুযোগ করে দিয়েছে বলে মনে করেন তিনি। জানালেন সম্প্রতি ‘চার অক্ষরের ভালবাসা’ নামের একটি ছবিতে কবির বকুলের লেখা ও সুরে এবং ইমন সাহার সঙ্গীতায়োজনে একটি গানে কন্ঠ দিয়েছন। সুমীর বিশ্বাস চমতকার কথা ও সুরের এই গান শ্রোতাদের মন ছুঁয়ে যাবে।

সুমী শবনম বেশ কিছু নাটক ও টেলিফিল্মের সূচনা সঙ্গীতে কন্ঠ দিয়েছেন। টেলিফিল্ম ‘অচিন মানুষ’ বিশেষ ভাবে উল্লেখযোগ্য। আর বর্তমানে হাতে আছে কিছু চলচ্চিত্রের প্লেব্যাকের কাজ। পাশাপাশি ব্যস্ত সময় কাটছে দেশ-বিদেশে স্টেজ পারফর্মেন্সে। আসছে ঈদে প্রবাসীদের আমন্ত্রণে গান গাইতে কাতার যাবার কথা রয়েছে তার।

গানের বাজারের বর্তমান অবস্থা নিয়ে কথা বলতে গিয়ে সুমী বলেন, ‘পাইরেসী, ডাউললোডের মত সমস্যায় জর্জরিত গানের বাজার। তাই অ্যালবাম করার ইচ্ছে হয় না। অডিও প্রতিষ্ঠানগুলোও এখন আর টাকা বিনিয়োগ করতে সাহস পায়না মুলধন হারানোর ভয়ে। যা কিছু গান হচ্ছে তার বেশিরভাগই শিল্পী নিজেই বিনিয়োগ করছেন। একটি ইন্ড্রাষ্টিতে এভাবে চলতে থাকা ইতিবাচক নয়। গানের বাজার রক্ষার্থে এ বিষয়ে সংশ্লিষ্টদের শীঘ্রই কিছু করা উচিত।’

নিজের গানের চর্চা প্রসঙ্গে সুমী বলেন, ‘আমি গানের মানুষ, গানের সাথেই চিরকাল থাকতে চাই। শ্রোতাদের জন্য ভাল গান উপহার দেয়াই আমার সঙ্গীত চর্চার অঙ্গীকার।’

ব্যক্তিগত জীবনে ব্যাংকার স্বামীর সংসারে দুই সন্তানের জননী সুমী শবনম। চার বছর বয়সী জমজ দুই ছেলের নাম অহি ও রুহি। গানের চর্চায় সুমী যতোটা নিজের প্রতি মনযোগী আর আত্মবিশ্বাসী সাংসারিক জীবনেও তিনি গোছানো এবং মমতাময়ী।

গানকে ভালবেসে পথচলা এই শিল্পীর জন্য শুভকামনা রইল। গড়পরতায় গা ভাসিয়ে নয়, সুমী শবনম শ্রোতাদের কাছে থাকতে চান একজন সত্যিকারের শিল্পী হিসেবেই।

 


রাইজিংবিডি/এলএ/ এমএএস

রাইজিংবিডি.কম

সর্বশেষ

পাঠকপ্রিয়