ঢাকা     শুক্রবার   ২৬ এপ্রিল ২০২৪ ||  বৈশাখ ১৩ ১৪৩১

‘অনার কিলিং’, বাবার হাতেই খুন চলচ্চিত্র নির্মাতা

বিনোদন ডেস্ক || রাইজিংবিডি.কম

প্রকাশিত: ১৬:৩৬, ২১ মে ২০২১   আপডেট: ১৭:৪৮, ২১ মে ২০২১
‘অনার কিলিং’, বাবার হাতেই খুন চলচ্চিত্র নির্মাতা

ইরানিয়ান চলচ্চিত্র নির্মাতা বাবাক খোরামদিন। সম্প্রতি বাবার হাতেই নির্মমভাবে খুন হয়েছেন তিনি।

পুলিশ জানিয়েছে, অনার কিলিং অর্থাৎ পরিবারের সম্মান রক্ষার জন্যেই ছেলেকে হত্যা করেছেন তার বাবা। এরপর লাশ টুকরো টুকরো করে ডাস্টবিনে ফেলেছেন। রোববার (১৬ মে) এই নির্মাতার লাশ উদ্ধার করা হয়।

৪৭ বছর বয়সী বোবাক খোরামদিন তেহরান বিশ্ববিদ্যালয় থেকে চলচ্চিত্র নির্মাণের ওপর স্নাতকোত্তর ডিগ্রি লাভ করেন। এরপর কয়েক বছর লন্ডনে থাকেন এবং স্বল্পদৈর্ঘ্য চলচ্চিত্র নির্মাণ নির্মাণ করেন। পরবর্তী সময়ে সিনেমা তৈরি শেখাতে ইরান ফিরে আসেন।

যুক্তরাজ্য ভিক্তিক সংবাদমাধ্যম মেট্রো জানিয়েছে, তেহরান ক্রিমিনাল কোর্টের প্রধান মোহাম্মদ শাহরিয়ারি জানান, বোবাক খোরামদিনের বাবা আকবর অপরাধ স্বীকার করেছেন। তিনি তার ছেলের শরীরে অ্যানেস্থেসিয়া প্রয়োগ করেন একং পেটে ছুরি চালিয়ে হত্যা করেন। পরে লাশ আবর্জনার ব্যাগে করে ডাস্টবিনে ফেলে দেন।

এই ঘটনায়, বোবাক খোরামদিনের মা-বাবাকে গ্রেপ্তার করেছে পুলিশ। বুধবার তার বাবাকে আদালতে হাজির করা হয়। এ বিষয়ে তদন্ত চলছে। যদিও পুলিশ জানিয়েছে, বোবাককে তার বাড়িতেই হত্যা করা হয়েছে এবং এর প্রমাণ তাদের কাছে রয়েছে।

বিয়ে না করা নিয়ে মা-বাবার সঙ্গে বাবাক খোরামদিনের তর্ক হয়। রোকনা নিউজ এজেন্সি জানিয়েছে বোবাকের বাবা বলেন, ‘ওই তর্কের পর আজ (রোববার) সকালে আমি তাকে হত্যা করি। প্রথমে অ্যানেস্থেসিয়া দিই। পরে পেটে ছুরি ঢুকিয়ে হত্যা করি। এরপর আমার স্ত্রীর সঙ্গে লাশ টুকরো করি ও পাশের ডাস্টবিনে ফেলে দিয়েছি।’

আকবর খোরামদিন আরো জানান, ছেলের লাশ টুকরো করার জন্য বাথরুমে নিয়ে যেতে তার স্ত্রী তাকে সাহায্য করেছে। লাশ টুকরো করার পর সেগুলো সুটকেস ও তিনটি ময়লার ব্যাগে করে ফেলে দিয়েছেন।

শুধু তাই নয়, ছেলেকে হত্যার কথা স্বীকার করার পাশাপাশি আকবর খোরামদিন জানান, তিন বছর আগে মেয়ে এবং দশ বছর আগে মেয়ের জামাইকে হত্যা করেছেন তিনি। সেগুলোও অনার কিলিং ছিল বলে জানা গেছে। তাসনিম নিউজের প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, আকবর খোরামদিন বলেন, ‘আমি যাদের হত্যা করেছি তাদের অতিমাত্রায় নৈতিক অবক্ষয় হয়েছিল।’

বোবাক খোরামদিনের মৃত্যুতে অনেকেই শোক প্রকাশ করছেন। ইরান ইন্টারন্যাশনাল টিভির সম্পাদক জ্যাসন ব্রডস্কাই। মধ্যপ্রাচ্যের বিভিন্ন বিষয়ে গবেষণা করেন তিনি। এ প্রসঙ্গে ডেইলি মেইলকে বলেন, ‘ইরানে বহুদিন ধরে চলে আসা পারিবারিক কোন্দলের নতুন সংযোজন বোবাক খোরামদিনের হত্যা। এর আগে আলী ফাজেলি মনফারেডকে তার পরিবার হত্যা করে কারণ তারা জানতে পেরেছিলেন তিনি সমকামী। এছাড়া গত বছর রোমিনা আসফ্রাফি নামের ১৪ বছর বয়সী এক মেয়েকে অনার কিলিংয়ের অংশ হিসেবে গলা কেটে হত্যা করে তার বাবা। এ বিষয়ে ইরানের সঙ্গে আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়ের আলোচনা করা উচিত।’

চলচ্চিত্র নির্মাতা ও বিশ্লেষক পারভিজ জাহেদ বলেন, ‘বাবাক একজন চলচ্চিত্র নির্মাতা এবং কয়েক বছর আগে লন্ডনে বিভিন্ন সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠানে আমার সঙ্গে তার প্রায়ই দেখা হতো। তাকে বলতে শুনেছি মা-বাবার কথা তার খুব মনে পড়ে। এরপরই তিনি ইরানে ফিরে আসেন। এখন এই ভয়ংকর খবরটি শুনলাম। অনেক ভয়াবহ একটি মুহূর্ত।’

ঢাকা/মারুফ

সম্পর্কিত বিষয়:

আরো পড়ুন  



সর্বশেষ

পাঠকপ্রিয়