ঢাকা     শুক্রবার   ০৩ মে ২০২৪ ||  বৈশাখ ২০ ১৪৩১

বইমেলায় নতুন বই ‘সুন্দরবনের দুর্ধর্ষ দস্যুদের রূপান্তরের গল্প’

বিশেষ প্রতিবেদক || রাইজিংবিডি.কম

প্রকাশিত: ১১:৪৫, ১৪ ফেব্রুয়ারি ২০২৪  
বইমেলায় নতুন বই ‘সুন্দরবনের দুর্ধর্ষ দস্যুদের রূপান্তরের গল্প’

সুন্দরবন কেন্দ্রীক পর্যটন শিল্প দিন দিন বিকাশ হচ্ছে, উপকূলীয় খেটে খাওয়া জেলে আর মাওয়ালদের কর্মময় নিরাপদ জীবন নিশ্চিত হয়েছে। এমন পরিস্থিতি এক সময় চিন্তার বাইরে ছিল। বনে না গিয়েও গডফাদাররা নিয়ন্ত্রণ করতো পুরো সুন্দরবন। এরা শুধু জেলেদের কষ্টার্জিত মাছ আহরণ নিয়ন্ত্রণ করতো না, এদের ছত্রছায়ায় বন উজাড় হচ্ছিল। এসব গডফাদারদের স্বার্থ সংরক্ষণে বিভিন্ন নামে গড়ে উঠে দস্যু বাহিনী। যাদের অত্যাচারে সাধারণ জেলে আর মাওয়ালরাই শুধু নয় পর্যটকরাও সাহস পেতো না গহীন সুন্দরবনে ঢুকতে।

কথায় আছে,‘জলে কুমির ডাঙ্গায় বাঘ।’ কিন্তু সুন্দরবনে ডাঙ্গায় বাঘের চেয়েও বড় বিপদ ছিল ‘বনদস্যুদের’ উপদ্রব। বনদস্যুদের হুংকার ছিল ‘যতদিন সুন্দরবনের গাছে পাতা থাকবে ততদিন বনদস্যুরাও থাকবে।’ সে পরিস্থিতি আজ আর নেই। সুন্দরবন আজ দস্যুমুক্ত। পর্যটকরা যাচ্ছেন, জেলেরা মাছ ধরে জীবিকা অর্জন করছেন, গোলপাতা সংগ্রহ হচ্ছে। সরকারের রাজস্ব বাড়ছে। এ অবস্থা একদিনে হয়নি। অনেক শ্রম আর ত্যাগের ফসল বর্তমান সময়ের সুন্দরবন।

‘দুস্যুমুক্ত সুন্দরবন’-শব্দটা আজ যতটা সহজে উচ্চারণ করা যায় একটা সময় ছিল তা সম্ভব ছিল না। সুন্দরবনের ভেতরে যাওয়া মানেই হয় সর্বস্ব লুট হয়ে যাওয়া অথবা মৃত্যুবরণ করা। সুন্দরবন দস্যুমুক্ত করার পেছনে যে মানুষটি নিরলস ভাবে কাজ করেছেন, যার অবদান সবচেয়ে বেশি তিনি হচ্ছেন সাংবাদিক মোহসীন উল হাকিম। জলচ্ছাসে ক্ষতিগ্রস্ত উপকূলীয় এলাকা বিশেষ করে সুন্দরবন নিয়ে পেশাগত দায়িত্ব পালন করতে গিয়ে তার চোখে জলদস্যুদের নির্যাতনের কাহিনি তুলে আনেন। এসব জলদস্যুরা নিজেদের থেকে দস্যুতায় জড়িয়ে পড়েননি। নানাভাবে নানা কারণে তাদের এ পেশায় জড়িয়ে ফেলা হয়। যেখান থেকে ফেরার কোনো পথ ছিল না। কেউ দলছুট হলে তাকে জীবন দিতে হয়েছে।

এ অবস্থায় মোহসীন উল হাকিম তার লক্ষ্যস্থির করেন কিভাবে বনদস্যুদের স্বাভাবিক জীবনে ফিরিয়ে আনা যায়। দীর্ঘ কয়েক বছরের চেষ্টায় তিনি বনদস্যুদের সঙ্গে যোগাযোগ স্থাপন করেন। তাদের স্বাভাবিক জীবনে ফিরে আসতে রাজি করান। বনদস্যুরা স্বাভাবিক জীবনে ফিরে আসবে এটা রাজি করানো যতটা সহজ ছিল তা বাস্তবায়ন করা ততটা সহজ ছিল না। এ সময় গডফাদাররা তার প্রতিপক্ষ হয়ে দাঁড়ায়। বহুবার তাকে নিতে হয়েছে জীবনের হুমকি। ছিল প্রশাসনকে রাজি করানোর মতো বড় চ্যালেঞ্জ। সবকিছু ঠিক করে তিনি বনদস্যুদের আত্মসমর্পণের ব্যবস্থা করেন। ফিরে আসে বহুসংখ্যক বনদস্যু স্বাভাবিক জীবনে। এরপরও বহু চ্যালেঞ্জ তাকে উৎড়াতে হয়েছে। সেসব চ্যালেঞ্জ এখনো আছে।

এসব অভিজ্ঞতা প্রথমে তিনি সামাজিক মাধ্যমে প্রকাশ করতে শুরু করেন। সঙ্গে সঙ্গে তা পাঠকদের ব্যাপক সাড়া মেলে। পাঠকের অনুরোধে গত বছর একুশে বই মেলায় ‘সুন্দরবনের জলদস্যুদের জীবনে ফেরার গল্প’ প্রকাশ পায়। বইটি পাঠকদের কাছে সমাদৃত হয়। এরপর পাঠকদের কাছ থেকে আরো লেখার দাবি আসে। তারই প্রেক্ষিতে এবারের বইমেলায় প্রকাশ পাচ্ছে ‘সুন্দরবনের দুর্ধর্ষ দস্যুদের রূপান্তরের গল্প।’ দেশের প্রখ্যাত প্রকাশনী সংস্থা ইউপিএল বইটি প্রকাশ করছে। 

লেখক মোহসীন উল হাকিম রাইজিংবিডিকে জানিয়েছে, চলতি সপ্তাহের মধ্যে বইটি মেলায় আসার সম্ভাবনা বেশি। কোনো কারণে তা সম্ভব না হলে আগামী সপ্তাহের প্রথম দিকেই বইটি পাঠকদের হাতে তুলে দিতে পারবেন।

/হাসনাত/সাইফ/

সম্পর্কিত বিষয়:

আরো পড়ুন  



সর্বশেষ

পাঠকপ্রিয়