অধ্যাপক ড. মুনিম খান স্মরণে
ড. নাঈমা খানম || রাইজিংবিডি.কম
ইতিহাসে খ্যাতিমান তারাই হয়ে থাকেন যারা নিজ মেধা, মননশীলতা, অসাধারণ প্রতিভা ও কর্মগুণে দেশ, জাতি তথা মানবতার কল্যাণে আত্মনিয়োগ করেন। তেমনই একজন আলোচিত ব্যক্তিত্ব ড. মুহাম্মদ আব্দুল মুনিম খান। আজ তার প্রথম প্রয়াণ দিবস। মাত্র ৪৭ বছর বয়সে হৃদরোগে আক্রান্ত হয়ে এই দিনে তিনি মারা যান।
বহুমুখী প্রতিভার অধিকারী ও সদা পরোপকারী অধ্যাপক ড. মুনিম খানের অসামান্য অবদান প্রতিটি ক্ষেত্রে সমুজ্জ্বল। জাতির ক্রান্তিলগ্নে যে কোনো বিষয়ভিত্তিক সমস্যায় ধর্ম ও ইসলাম সম্পর্কিত, মানবাধিকার, শিল্প ও সংস্কৃতি বা আন্তর্জাতিক যে কোনো ইস্যুতে তিনি জ্ঞানগর্ভ আলোচনা উপস্থাপনের মাধ্যমে সমাধান করতে পারতেন। তার সাক্ষাৎকার বা গবেষণামূলক অনেক প্রবন্ধ বিভিন্ন গণমাধ্যমে প্রকাশিত হয়েছে। জাতীয় ও সামাজিক সমস্যা সমাধানে নিরলস প্রচেষ্টা তিনি আজীবন অব্যাহত রেখেছেন।
তিনি এশিয়ান ইনস্টিটিউটের পরিচালক ছিলেন। ইউনিভার্সিটি অব কুমিল্লা এবং ইনস্টিটিউট অব ল্যাংগুয়েজ-এর চেয়ারম্যান ও তারা টিভি নিউজের উপদেষ্টা ছিলেন। ড. মুনিম ২০০৩ সাল থেকে নিয়মিতভাবে বাংলাদেশের বহুল প্রচারিত জাতীয় দৈনিক 'প্রথম আলো' পত্রিকার ধর্ম বিষয়ক কলাম লেখক ছিলেন। মানবতার ব্যাখ্যা, ভালোবাসায় ইসলাম, জীবনবোধে ধর্মের প্রভাব, জঙ্গিবাদ ও সন্ত্রাসবাদ ইসলামবিরোধী, ধর্মের নামে যে কোনো অপব্যবহার ও অপব্যাখ্যার বিরুদ্ধে পবিত্র কোরান ও হাদিসের আলোকে তার লেখার অবস্থান ছিল স্বচ্ছ ও সুচিন্তিত।
অধ্যাপক ড. মুনিম খান রচিত ও সম্পাদিত বইয়ের সংখ্যা ২৪টি। যার অধিকাংশই স্কুল-কলেজ ও বিশ্ববিদ্যালয়ের পাঠ্যপুস্তক। আরবি ভাষা, সাহিত্য, কাব্য, ভাষাতত্ত্ব, ইসলামের ইতিহাস, ধর্ম বিষয়ক বহু প্রবন্ধ-নিবন্ধ বিভিন্ন গবেষণামূলক জার্নালে প্রকাশিত হয়েছে। ইন্ডিপেন্ডেন্ট ইন্টার ফেইথ জার্নালে প্রকাশিত তার গবেষণামূলক ইংরেজি প্রবন্ধের সংখ্যা ৫০টি। তিনি বিভিন্ন টেলিভিশনে নিয়মিত সমসাময়িক বিষয়ে টকশো অনুষ্ঠানের সঞ্চালক ও আলোচক হিসাবে অংশগ্রহণ করেছেন।
ড. মুনিম খান বরেণ্য শিক্ষাবিদ, বহুভাষাবিদ ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের আরবি বিভাগের সাবেক চেয়ারম্যান অধ্যাপক ড. আ.ন.ম. আব্দুল মান্নান খান ও মা রেহানা আক্তারের প্রথম সন্তান। তার জন্ম ব্রাহ্মণবাড়িয়া জেলার কসবা থানার সৈয়দাবাদ গ্রামে। ইউনিভার্সিটি ল্যাবরেটরি স্কুলে শিক্ষা অজর্নকালে সকল ক্লাসে সর্ব্বোচ্চসংখ্যক নাম্বার পেয়ে প্রথম হয়ে তিনি বিনা বেতন অধ্যয়নের সুযোগ লাভ করেন। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের কলা অনুষদে বিএ অনার্স পরীক্ষায় সর্বোচ্চ নম্বর প্রাপ্তির জন্য ‘নীলকান্ত স্বর্ণপদক -১৯৯১’ লাভ করেন। তার বাবাও একই স্বর্ণপদক লাভ করেছিলেন। ড. মুনিম বিভিন্ন পর্যায়ে ১৬টি বিরল সন্মাননা পদক ও পুরস্কার লাভ করেন। তিনি মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের আমন্ত্রিত অতিথি হিসেবে ২০০৫ সালে ওয়াশিংটন ডিসি, শিকাগো ও নিউইয়র্ক সিটিতে অনুষ্ঠিত বিশ্বশান্তি প্রতিষ্ঠার জন্য ‘হিন্দু-মুসলমান-বৌদ্ধ-খ্রিস্টান’ ঐক্য প্রচেষ্টায় ধর্মীয় স্বাধীনতা বিষয়ক বিভিন্ন আন্তর্জাতিক সেমিনার সিম্পোজিয়ামে আন্তঃধর্মীয় সংলাপে মত বিনিময় করেন।
একজন সাদা মনের অসাধারণ মানুষ ছিলেন ড. মুহাম্মদ আব্দুল মুনিম খান। তার জীবনাদর্শে সবকিছুই ছিল অনুকরণীয় ও অনুসরণযোগ্য। তিনি নিজেই হয়ে উঠেছিলেন একটি ইনস্টিটিউট। একজন আদর্শ শিক্ষক, সৎ, নীতিবান, মানবিক মূল্যবোধসম্পন্ন, নিরহঙ্কারী, উদার, সদালাপী ও সদাহাস্যজ্বল মুখ এই সাদা মনের মানুষ অকালে আকস্মিকভাবে মাত্র ৪৬ বছর বয়সে চলে গেলেন। এই শিক্ষাবিদকে বাঙালি জাতি ও মুসলিম বিশ্ব আরবি ভাষা, সাহিত্য ও ইসলামী শিক্ষা বিস্তারে অসামান্য অবদানের জন্য চিরকাল গভীর শ্রদ্ধার সাথে স্মরণ করবে।
লেখক: ড. মুনিম খানের বোন
ঢাকা/তারা
রাইজিংবিডি.কম
আরো পড়ুন