ঢাকা     শুক্রবার   ১২ ডিসেম্বর ২০২৫ ||  অগ্রহায়ণ ২৭ ১৪৩২

Risingbd Online Bangla News Portal

আদিল একাই পিলখানার বাঙ্কার উড়িয়ে দিয়েছিলেন

লিনু হক || রাইজিংবিডি.কম

প্রকাশিত: ১০:২২, ১২ ডিসেম্বর ২০২৫   আপডেট: ১০:২৩, ১২ ডিসেম্বর ২০২৫
আদিল একাই পিলখানার বাঙ্কার উড়িয়ে দিয়েছিলেন

মুক্তিযোদ্ধা আদিল খান

আজিমপুর কলোনির ২৪/৩ রোডের দ্বিতল বাড়িটি ছিল আদিল খানদের বাড়ি। তার বাবার নাম আব্দুল গনি খান(বার এট ল) মায়ের নাম সেকান্দার জাহান। আদিল খান তখন প্রকৌশল বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্র। মুক্তিযুদ্ধে যোগ দেওয়ার জন্য তিনি ভারতে মেলাঘর থেকে প্রশিক্ষণ শেষ করে ঢাকায় ফিরে আসেন। এসেই যুবকদের মুক্তিযুদ্ধে যোগ দেওয়ার জন্য যোগাড় করা শুরু করেন। 

সেপ্টেম্বর মাসের মাঝামাঝি মাদারটেক লিয়াকতের চাচাতো ভাই এর বাসা থেকে নৌকাযোগে ১২ জন এর একটি দল নিয়ে রওনা হন আগরতলা মেলাঘর এর উদ্দেশ্য। তিন চারদিন পর মেঘনা নদী পাড়ি দিয়ে সিএনবি রোডে পৌঁছান আদিল। সিএনবি রোডে পৌঁছে দেখেন শতশত লোক বিভিন্ন এলাকা থেকে নৌকা নিয়ে এসে জমা হয়ে আছে। সবার নৌকার বাতি নেভানো, নদীর একটু উঁচুতে সিএনবি রোড। ভারতে যাওয়া জন্য মাত্র ১০/১২ ফুট রাস্তা- অতিক্রম করতে পারলেই পৌঁছে যাবে সীমান্তের ওপারে ভারতে। কিন্তু দুর্ভাগ্য ঘন ঘন পাকিস্তান সামরিক যান, সিএনবি রোড ধরে আসা যাওয়া করছে। লোকদের মধ্যে গুঞ্জন শুরু হয়ে গেছে, পাকিস্তানিরা খবর পেয়ে গেছে, কেউ বলছে বর্ডার বোধহয় সিল করে দিয়েছে। এ অবস্থায় কোথাও লুকিয়ে থাকার সুযোগ না পেয়ে অগত্যা তাদের ফিরতে হলো। আদিল ভাই ঢাকায় ফিরে যুবকদের মুক্তিযুদ্ধের প্রশিক্ষণ দেওয়া শুরু করেন। এরপর জনমানুষের মধ্যে মিশে একের পর এক আক্রমণ-অপারেশন চালান।

আরো পড়ুন:

১৯৭১ সালের অক্টোবর মাসের চার তারিখ দিবাগত রাত।পবিত্র শবেবরাত রাতে আদিল ভাই একাই একটি দুঃসাহসী অভিযানের সিদ্ধান্ত নিলেন। আজিমপুর কবরস্থান থেকে আজিমপুর বেবী আইসক্রিম এর মোড় পর্যন্ত রাস্তার দুপাশে ভিক্ষুক থালা হাতে বসে ছিলো দান খয়রাত পাওয়ার আশায় । লোকজন কবরস্থানমুখী- পবিত্র রজনীতে আত্মীয় স্বজনের কবর জিয়ারতের উদ্দেশ্যে। তাদের সাথে মিশে গেলেন আদিল খান।পায়জামা-পাঞ্জাবী পরে গায়ে চাদর জড়িয়ে হাতে একটি বড় ঠোঙা নিয়ে কবরস্থানে প্রবেশ করলেন। আজিমপুর কবরস্থানের পেছনে ভাঙ্গা সীমানা প্রাচীরের পাশ দিয়ে তখনকার ইপিআর (বর্তমান বিজিপি) পিলখানা হেড কোয়ার্টার এর তিন নম্বর গেইট। ঢাকা নিউ মার্কেটের দুই নম্বর গেইট মাত্র ১৩/১৪ ফুট দূরে।

হাতের ঠোঙ্গা থেকে বের করে আনলেন ব্রিটিশ মেইড ১/২ পাউন্ডের একটি মাইন। মাইনের সেফটি পিন চিকন নাইলনের রশি দিয়ে এক মাথা বাঁধা ছিল। ১৫ ফুট রশির অপর প্রান্ত হাতের কব্জিতে বেঁধে সৃষ্টিকর্তাকে স্মরণ করে ছুঁড়ে দিলেন দেয়ালের অপর দিকে পিলখানার বাঙ্কারে।

মাইনটা যখন বাঙ্কারের উপরে উঠে শূন্যে, তখন হাতের রশিতে টান পড়তেই মাইনের পিনটা খুলে গেলো।বাঙ্কারের উপরে মাইনটা ফাঁটল - প্রচন্ড শব্দ মনে হচ্ছিল আকাশ থেকে বাজ পড়ল। চারিদিকে শব্দের প্রতিধ্বনি - শোনা মাত্রই আদিল ছুটে পালালেন। উড়ে গিয়েছিলো পাক-বাহিনীর পিলখানার বাঙ্কার। 

ঢাকা/লিপি

সম্পর্কিত বিষয়:

সর্বশেষ

পাঠকপ্রিয়