ঢাকা     সোমবার   ১৫ ডিসেম্বর ২০২৫ ||  অগ্রহায়ণ ৩০ ১৪৩২

Risingbd Online Bangla News Portal

ঘূর্ণিঝড় ‘ডিটওয়াহ’র তাণ্ডবে শ্রীলঙ্কায় মৃতের সংখ্যা ৩০০ ছাড়াল

আন্তর্জাতিক ডেস্ক || রাইজিংবিডি.কম

প্রকাশিত: ১০:৫৮, ১ ডিসেম্বর ২০২৫   আপডেট: ১১:০৬, ১ ডিসেম্বর ২০২৫
ঘূর্ণিঝড় ‘ডিটওয়াহ’র তাণ্ডবে শ্রীলঙ্কায় মৃতের সংখ্যা ৩০০ ছাড়াল

শক্তিশালী ঘূর্ণিঝড় ‘ডিটওয়াহ’র প্রভাবে টানা ভারী বর্ষণ ও ভূমিধসে শ্রীলঙ্কার রাজধানী কলম্বোর নিম্নাঞ্চলসহ বিভিন্ন এলাকা প্লাবিত হয়েছে। এতে এখন পর্যন্ত ৩৩৪ জনের মৃত্যুর খবর নিশ্চিত করেছে দেশটির দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা কেন্দ্র (ডিএমসি)। নিখোঁজ রয়েছেন আরও অন্তত ৩৭০ জন।  খবর দ্য স্টেটসম্যানের।

শ্রীলঙ্কার শীর্ষস্থানীয় সংবাদমাধ্যম ডেইলি মিরর জানিয়েছে, সবচেয়ে বেশি ক্ষতিগ্রস্ত জেলা হল ক্যান্ডি, যেখানে ৮৮ জন মারা গেছেন এবং ১৫০ জন নিখোঁজ রয়েছেন। বাদুল্লায় ৭১ জন, নুওয়ারা এলিয়ায় ৬৮ জন এবং মাতালেতে ২৩ জন মারা গেছেন।

আরো পড়ুন:

ডিএমসির মতে, দক্ষিণ এশীয় দ্বীপরাষ্ট্রটির বিশাল অংশ জুড়ে প্রবল বৃষ্টিপাত এবং বন্যার কারণে প্রায় ১০ লাখ মানুষ ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। প্রায় দুই লাখ মানুষ ১,২৭৫টি আশ্রয়কেন্দ্রে আশ্রয় নিতে বাধ্য হয়েছে।

মিররের প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, ঘূর্ণিঝড়ের প্রভাবে মধ্যাঞ্চল সবচেয়ে বেশি ক্ষতিগ্রস্ত। উপড়ে পড়া গাছ ও ভূমিধসে বন্ধ হয়ে যাওয়া সড়কগুলো পরিষ্কার করতে ত্রাণকর্মীরা কাজ শুরু করায় প্রকৃত ক্ষয়ক্ষতির চিত্র ধীরে ধীরে প্রকাশ পাচ্ছে।

ডিএমসি জানিয়েছে, ঘূর্ণিঝড় মূল এলাকা থেকে সরে গেলেও উজানে ভারী বৃষ্টির কারণে নদীতীরবর্তী নিম্নাঞ্চলগুলোতে নতুন করে বন্যা দেখা দিচ্ছে।

তবে উদ্ধার কাজও চলছে সমানতালে। ২৪ হাজারের বেশি পুলিশ, সেনাবাহিনী এবং বিমান বাহিনীর সদস্য এখনো বন্যায় আটকা পড়া পরিবারগুলোতে পৌঁছানোর চেষ্টা করছেন বলে জানিয়েছে কর্তৃপক্ষ। 

শ্রীলঙ্কার প্রেসিডেন্ট অনুরা কুমার দিশানায়েকে চলমান চরম আবহাওয়া সংকটকে দেশের সবচেয়ে খারাপ প্রাকৃতিক দুর্যোগ হিসাবে বর্ণনা করেছেন ও দুর্যোগ থেকে পুনরুদ্ধারের জন্য পূর্ণ রাষ্ট্রীয় সহায়তার প্রতিশ্রুতি দিয়েছেন।

রবিবার জাতির উদ্দেশ্যে এক বিশেষ ভাষণে প্রেসিডেন্ট বলেন, দুর্যোগের সময় সরকারের তিনটি দায়িত্ব রয়েছে: তাৎক্ষণিক জরুরি অবস্থা পরিচালনা করা, স্বাভাবিকতা পুনরুদ্ধার করা এবং দেশকে আগের চেয়ে শক্তিশালী অবস্থায় পুনর্নির্মাণ করা।

তিনি বলেন, “যখন প্রাকৃতিক দুর্যোগ আঘাত হানে এবং যখন আমরা তাদের প্রভাব প্রতিরোধ করতে অক্ষম হই, তখন জরুরি পরিস্থিতি পরিচালনা, দেশকে স্বাভাবিক অবস্থায় ফিরিয়ে আনা এবং পরিস্থিতির আগের চেয়েও বেশি উন্নতি করা সরকারের দায়িত্ব। পরিস্থিতি যতই কঠিন হোক না কেন, আমরা প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ নিতে প্রতিশ্রুতিবদ্ধ।”

তিনি বলেন, বর্তমানে কার্যকর জরুরি অবস্থা কেবল দুর্যোগ ব্যবস্থাপনার মধ্যেই সীমাবদ্ধ এবং এটি নাগরিক স্বাধীনতা খর্ব করবে না। তিনি আরো বলেন, অনেক অঞ্চলে পানি সরবরাহ, বিদ্যুৎ ও যোগাযোগ নেটওয়ার্ক সহ প্রয়োজনীয় পরিষেবা পুনরুদ্ধারের জন্য জরুরি ব্যবস্থা গ্রহণ করা হচ্ছে।

প্রেসিডেন্ট বলেন, সব বাস্তুচ্যুত ব্যক্তিরা সরকারি সহায়তা পাবেন। এই জাতীয় সংকটের সময় কাউকে সহায়তা ছাড়া রাখা হবে না।

তিনি উদ্ধার ও ত্রাণ প্রচেষ্টার নেতৃত্ব দেওয়ার জন্য সশস্ত্র বাহিনীর প্রশংসা করে বলেন, সেনাবাহিনী, নৌবাহিনী এবং বিমান বাহিনীর হাজার হাজার কর্মকর্তা ক্ষতিগ্রস্ত সম্প্রদায়ের সহায়তার জন্য দিনরাত কাজ করছেন।

দিশানায়েকে আন্তর্জাতিক সংহতির জন্যও আহ্বান জানান। তিনি বলেন যে, তিনি দেশের পুনরুদ্ধার ও পুনর্গঠন প্রচেষ্টায় বন্ধুত্বপূর্ণ দেশ এবং শ্রীলঙ্কার প্রবাসীদের সমর্থন আশা করেন।

ভারত ইতিমধ্যে দুটি বিমান ভর্তি ত্রাণ সামগ্রী পাঠিয়েছে। এছাড়াও কলম্বোতে শুভেচ্ছা সফরে থাকা ভারতীয় একটি যুদ্ধজাহাজ ক্ষতিগ্রস্তদের সাহায্যের জন্য তাদের রেশন দান করেছে।

এছাড়া ভারতীয় উদ্ধারকারী দলগুলো শ্রীলঙ্কার বিমান বাহিনী, নৌবাহিনী, সেনাবাহিনী, পুলিশ এবং স্থানীয় প্রশাসনের সঙ্গে সমন্বয় করে বন্যায় ক্ষতিগ্রস্তদের সহায়তা করার জন্য কাজ করছে।

ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি শ্রীলঙ্কায় নিহতদের জন্য শোক প্রকাশ করেছেন। তিনি বলেছেন, নয়াদিল্লি আরো সাহায্য পাঠাতে প্রস্তুত।

ঢাকা/ফিরোজ

সম্পর্কিত বিষয়:

সর্বশেষ

পাঠকপ্রিয়