ঢাকা     সোমবার   ০৬ মে ২০২৪ ||  বৈশাখ ২৩ ১৪৩১

শুরুটা হতে হবে ঘর থেকেই : কামরুন নাহার রুমা

ইভা || রাইজিংবিডি.কম

প্রকাশিত: ১৮:২৮, ৭ মার্চ ২০১৪   আপডেট: ০৫:২২, ৩১ আগস্ট ২০২০
শুরুটা হতে হবে ঘর থেকেই : কামরুন নাহার রুমা

কামরুন নাহার রুমা

আমাদের সবকিছুর শুরু ঘর থেকে । আর এখান থেকেই শুরু হয় বিভাজন, নারী-পুরুষের ভেদাভেদ ও অসম বিকাশ। তাই নারীর ক্ষমতায়নের পক্ষে ঘর থেকেই সচেতনতা সৃষ্টি করা প্রয়োজন। কথাগুলো বলেছেন ড্যাফোডিল ইন্টারন্যাশনাল ইউনিভার্সিটির সাংবাদিকতা ও গণযোগাযোগ বিভাগের প্রভাষক এবং দ্য ডেইলি অবজারভার পত্রিকার খণ্ডকালীন সাংবাদিক কামরুন নাহার রুমা। ৮ মার্চ আন্তর্জাতিক নারী দিবস উপলক্ষে নারীর ক্ষমতায়ন বিষয়ে রাইজিংবিডিকে তিনি একটি সাক্ষাৎকার দেন। সাক্ষাৎকারটি নিয়েছেন রাইজিংবিডির নিজস্ব প্রতিবেদক তানজিনা ইভা।

রাইজিংবিডি : নারীদের জন্য বিশেষ দিবস ‘নারী দিবস’ পালন করা হয়। এর মাধ্যমে কি আরেকটি বিভাজন তৈরি করা হচ্ছে না?

কামরুন নাহার : বাংলাদেশের প্রেক্ষাপটে নারী যে অনেক বেশি অবহেলিত, সুবিধাবঞ্চিত নারী দিবস পালনের মাধ্যমে আসলে সেই ব্যাপারটিই আরো স্পষ্ট হয়ে ওঠে । নারীর বিভিন্ন সমস্যা নিয়ে কথা বলার এবং সেই সমস্যার সমাধানের বিভিন্ন উদ্যোগ নিয়ে এই দিনটিতে কথা বলে, স্লোগান দিয়ে নারীকে আরো প্রান্তিক পর্যায়ে ঠেলে দেওয়া হয় । এ থেকে প্রশ্ন আসাটা স্বাভাবিক, সমস্যা কি শুধু নারীর? পুরুষদের কি সমস্যা নেই? তাহলে ‘পুরুষ দিবস’ হয় না কেন? ব্যক্তিগতভাবে আমি নারী দিবসের পক্ষে না।

রাইজিংবিডি : দিবসটি নারীদের অধিকার আদায়ে কোনো ভূমিকা রাখছে কি?

কামরুন নাহার : বাস্তবতার নিরিখে বিবেচনা করলে দেখা যায়, নারীদের সুযোগ-সুবিধা নিয়ে কথা বলার একটি ভিত্তি এই দিবস। যেখান থেকে নারীরা তাদের অধিকার আদায়ে সোচ্চার হতে পারেন, শক্তি ও সাহস নিতে পারেন। কিন্তু নারীর জীবনে এত সমস্যা, যা একটি দিনে সমাধান সম্ভব নয়। প্রতিটি দিনেই নারীর উন্নয়নে কাজ করতে হবে। এই দিনকে শুধু একটি দিবস হিসেবে উদযাপন না করে নারী-পুরুষের সমতা আনতে সবাইকে একসঙ্গে কাজ করতে হবে।

রাইজিংবিডি : বর্তমানে বাংলাদেশে নারীর ক্ষমতায়ন সম্পর্কে আপনার মূল্যায়ন কী?

কামরুন নাহার : দেশের দু-একটি বড় পদে নারীদের দেখে যদি আমরা ভেবে নিই নারীর ক্ষমতায়ন হয়েছে, তাহলে আমি মনে করি তেমটি ভাবা ভুল হবে। নারী স্বাধীনতা পেয়েছে কিন্তু সেই স্বাধীনতা সীমাবদ্ধ স্বাধীনতা । গুটি কয়েক নারীর ক্ষমতায়নের মাধ্যমে দেশের সব নারীর ক্ষমতায়ন হয়েছে, কোনোমতেই এমনটি বলা যাবে না।

রাইজিংবিডি : তাহলে ক্ষমতায়নের জন্য কী করা প্রয়োজন?

কামরুন নাহার : আমাদের সবকিছুর শুরু ঘর থেকে । আর এখান থেকেই শুরু হয় বিভাজন, নারী-পুরুষের ভেদাভেদ ও অসম বিকাশ। তাই নারীর ক্ষমতায়নের পক্ষে ঘর থেকেই সচেতনতা সৃষ্টি করা প্রয়োজন। আমাদের সমাজে দেখা যায়, যখন একটি ছেলে এবং একটি মেয়েশিশু জন্মগ্রহণ করে, তখন সবকিছুতেই ছেলেশিশুটিকে প্রাধান্য দেওয়া হয়। মেয়েরা বিশ্বাস করতে থাকে, আমি আমার ভাইয়ের চেয়ে নগণ্য। ছেলেশিশুকে খেলনা হিসেবে উপহার দেওয়া হয় হেলিকপ্টার আর মেয়েকে হাঁড়িপাতিল, পুতুল । সুযোগ-সুবিধা পাওয়ার ক্ষেত্রে ছেলেশিশুটিই অগ্রাধিকার পায় আর এখান থেকেই মেয়েদের দুর্বল মানসিক গঠন শুরু হয়। তারা হীনম্মন্যতায় ভুগতে ভুগতে বড় হয়। আমার মতে, পরিবার থেকে এই বৈষম্যমূলক দৃষ্টিভঙ্গি পরিবর্তনে সবাইকে সচেতনভাবে কাজ করতে হবে। মেয়েশিশুদের বোঝাতে হবে, সে ও তার ভাই সমান মেধা আর যোগ্যতার অধিকারী । সেও চাইলে বড় হয়ে তার ভাইয়ের মতো পাইলট হতে পারবে । এ ছাড়া তৃণমূল থেকে উচ্চপর্যায়ে নীতিনির্ধারণের ক্ষেত্রে নারীর সমান অংশগ্রহণ নিশ্চিত করতে পারলে নারীর ক্ষমতায়নের পথ সুগম হবে।

রাইজিংবিডি : কর্মক্ষেত্রে নারীর ক্ষমতায়নে কী করা যেতে পারে?

কামরুন নাহার : যেকোনো কর্মক্ষেত্রে নারীর সমতায়নে প্রথমত সমান অংশগ্রহণ নিশ্চিত করতে হবে। অনেকে ধারণা পোষণ করেন, মেয়েদের দিয়ে ভালো কাজ সম্ভব নয়। দুদিন পরে তাদের বিয়ে হবে, গর্ভধারণ করবে, সংসার সামলাবে। আর এত কিছু করতে গিয়ে কাজ ক্ষতিগ্রস্ত হবে । হ্যাঁ, আমি স্বীকার করি, দেশের প্রেক্ষাপটে মেয়েদের কিছু প্রতিবন্ধকতা রয়েছে। তার মানে এই নয়, তারা ভালো ভালো কিছু করতে পারবে না। এ ক্ষেত্রে আমি মনে করি, যেকোনো প্রতিষ্ঠানে নারী কর্মীদের রেশিওটা বাড়াতে হবে। আর সেই জায়গা থেকে ক্ষমতায়নের পথটাও সুগম হবে ।

রাইজিংবিডি : এ ক্ষেত্রে পুরুষের ভূমিকা কী হতে পারে?


কামরুন নাহার : এ ক্ষেত্রে পুরুষের ভূমিকাই সবচেয়ে বেশি, যেহেতু আমাদের সমাজটা পুরুষতান্ত্রিক। পুরুষই পারে নারীকে পূর্ণ ক্ষমতায়নে সাহায্য করতে। তাকে একটি মানবিক অনুভূতি নিয়ে নারীকে বিবেচনা করতে হবে। আমাদের দেশে নারীদের গৃহস্থালিকাজের মূল্য নেই। পুরুষকে নারীর গৃহকর্মের সঙ্গী হতে হবে, যাতে নারী ঘর সামলানোর পাশাপাশি চাকরিটাও ঠিকঠাক করতে পারে ।

রাইজিংবিডি : সংসারে বা প্রতিষ্ঠানে সিদ্ধান্ত গ্রহণে নারীর ভূমিকা কতটুকু বলে আপনি মনে করেন?

কামরুন নাহার : সংসার বা প্রতিষ্ঠানের দিকে তাকালে দেখা যায়, নীতিনির্ধারণের জায়গায় রয়েছে পুরুষ। এ ক্ষেত্রে নারীদের উপস্থিতি খুবই নগণ্য। নারীদের অধিকার নিয়ে বেশি কথা বলে যারা, সেই মিডিয়ার দিকে তাকালে দেখা যায় একই অবস্থা। অন্যদিকে বলতে গেলে, দেশের তিনটি শীর্ষ স্থানে রয়েছেন তিনজন নারী। কিন্তু আমার প্রশ্ন জাগে, তারা নিজেরা কতটা সিদ্ধান্ত নিতে পারেন?

রাইজিংবিডি : ব্যস্ততার মধ্যেও রাইজিংবিডিকে সময় দেওয়ার জন্য আপনাকে ধন্যবাদ।

কামরুন নাহার : রাইজিংবিডি পরিবারকেও ধন্যবাদ।
 

 

রাইজিংবিডি / ইভা / রাসেল পারভেজ  / আবু মো.

রাইজিংবিডি.কম

আরো পড়ুন  



সর্বশেষ

পাঠকপ্রিয়