ঢাকা     রোববার   ১৪ ডিসেম্বর ২০২৫ ||  অগ্রহায়ণ ৩০ ১৪৩২

Risingbd Online Bangla News Portal

সন্তানের জন্য রিকশার প্যাডেল চাপছেন এই মা!

আহমদ নূর || রাইজিংবিডি.কম

প্রকাশিত: ০৪:৫৪, ২৩ এপ্রিল ২০২০   আপডেট: ০৫:২২, ৩১ আগস্ট ২০২০
সন্তানের জন্য রিকশার প্যাডেল চাপছেন এই মা!

দুই সন্তান রেখে বছর দু'য়েক আগে স্বামী চলে যায় আকলিমা বেগমের। রস্তায় প্লাস্টিক বোতল, ধাতব বস্তু কুড়িয়ে সেগুলো বিক্রি করে অভাব অনটনের মধ্যে কোনোমতে সংসার চলছিল তার। সব কষ্ট ভুলে দুবেলা দুমুঠো খেয়ে সন্তানদের নিয়ে দিন পার করার স্বপ্ন ছিল তার। কিন্তু সেই স্বপ্নে হানা দিলো করোনাভাইরাস। এখন কুড়ানোর মতো বর্জ্য-বোতল নেই, বিক্রির দোকানও নেই। তাই সন্তাদের মুখে আহার তুলে দিতে রিকশার প্যাডেল চাপছেন আকলিমা।

বৈশাখের উত্তপ্ত রোদে দিনভর যাত্রী টেনে সামান্য যা আয় করেন তা দিয়ে কোনোমতে সংসার চালান আকলিমা বেগম। আয় কম হলে বস্তির পাশের দোকান থেকে বাকিতে কিনেন সদাই। তারপরও সন্তানদের মুখে খাবার তুলে দিতে কাপ্যর্ণ করেন না জীবন যুদ্ধে লড়াকু এ নারী।

সন্তানদের নিয়ে আকলিমা বেগম থাকেন রাজধানীর হাজারীবাগ থানা এলাকার প্রেমতলা বস্তির ছোট্ট একটি ঘরে। বুধবার (২২ এপ্রিল) পশ্চিম ধানমন্ডির নিরিবিলি হাউজিংয়ের সামনে তার সঙ্গে কথা হয়।

আকলিমা বেগম বলেন, ‘আগে ভাঙ্গাড়ি কুড়াইতাম। অহন ভাঙ্গাড়ি পাওন যায় না। ব্যবসাও বন্ধ। আমার এক পোলা আর এক মাইয়া আছে। হেরা তো আর কিছু বুঝে না। খাওন চায়। কোনো দিন রিকশা চালাইনাই। সব বন্ধ হওনের পর কোনো উপায় না পাইয়া এখন রিকশা চালান শুরু করছি।’

আকলিমা জানান, সব বন্ধের কারণে যাত্রী পাওয়া যায় না। সকাল থেকে সন্ধ্যা পর্যন্ত রিকশা চালিয়ে ৪৫০ টাকা থেকে ৫০০ টাকা আয় হয়। ব্যাটারিচালিত রিকশা জমা দিতে হয় ২০০ টাকা। এরপর যা থাকে তা দিয়ে বাসায় খাবার কিনে নিয়ে যান। আকলিমার কথায়, কোনো মতে ডাইল-ভাত খাওয়ার উপায় হয়।

সব বন্ধের পর এখনো সরকারি বা বেসরকারি ত্রাণ পাননি আকলিমা বেগম। তিনি বলেন, ‘গরিব মানুষরে কেই দেখে না। সব মিটিং মিছিলে কিন্তু যাইতাম। এরপরও নেতারা ত্রাণ দেয় নাই। বস্তিতে দেখে দেখে কয়েকজনরে চাউল-ডাইল দিছে। কিন্তু আমাগো ত্রাণ দেয়না। অনেকেই ত্রাণ পায়নি।’

প্রেমতলা বস্তি, রায়েরবাজার বুদ্ধিজীবী বস্তির কয়েকজন বাসিন্দার সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, সেসব জায়গায় ত্রাণ পাচ্ছেনা বস্তিবাসী। শিশুরা খাবারের জন্য কান্নাকাটি করলেও মায়েরা খাবার দিতে না পারায় তাদের মারধর করে শান্ত করার চেষ্টা করছেন। স্থানীয় জনপ্রতিনিধিরা কয়েকজনকে মুখ দেখে দেখে ত্রাণ দিচ্ছে। কাজহীন সময়ে সরকারি ত্রাণ না পাওয়ায় অনেকে ক্ষোভ প্রকাশ করছেন।

প্রেমতলা বস্তির বাসিন্দা কবির হোসেন বলেন, বস্তিতে ত্রাণ নেই। আয় উপার্জনের কোনো উপায় নেই। খাবারের জন্য বাচ্চার কান্নাকটি করছে। মেরে, শাসন করে বাচ্চাদের মায়েরা শান্ত করার চেষ্টা করছেন। মোড়ে মোড়ে মানুষ ত্রাণের জন্য জটলা করছে, কিন্তু পাচ্ছে না। আমাদের দাবি হয় কাজ করতে দেন, না হলে সময় মতো ত্রাণ দেন।

রায়ের বাজার বুদ্ধিজীবী বস্তির বাসিন্দা রত্না বেগম বলেন, কমিশনাররা মুখ দেইখা চাউল-ডাইল দিচ্ছে। গত সাত দিন ধরে ভাত আর আলু সেদ্ধ করে খাচ্ছি। কিন্তু ত্রাণ পাচ্ছি না।

ত্রাণ বিতরণের বিষয়ে ঢাকা উত্তর সিটি করপোরেশনের জনসংযোগ কর্মকর্তা এ এস এম মামুন বলেন, ওয়ার্ড কাউন্সিলররা মানুষের ঘরে ঘরে ত্রাণ পৌঁছে দিচ্ছেন। আঞ্চলিক নির্বাহী কর্মকর্তারা, কেন্দ্রীয় কার্যালয়ের কর্মকর্তারা এবং আঞ্চিলিক পর্যায়ে গঠিত ত্রাণ মনিটরিং টিম নিয়মিতভাবে ত্রাণ কার্যক্রম সমন্বয় করছেন।

এ বিষয়ে ঢাকা দক্ষিণ সিটি করপোরেশন কোনো কর্মকর্তার বক্তব্য পাওয়া না গেলেও সংস্থাটির জনসংযোগ শাখা থেকে বলা হচ্ছে নিয়মিত ত্রাণ বিতরণ করা হচ্ছে। তবে, ৫৫ নম্বর ওয়ার্ড কাউন্সিলর নূরে আলম চৌধুরী বলেন, প্রয়োজনের তুলনায় কম ত্রাণ পাচ্ছি। অনেক দরিদ্র মানুষকে ত্রাণ দেওয়া যাচ্ছে না। মানুষ খারাপ অবস্থায় আছে।

 

ঢাকা/নূর/এসএম

রাইজিংবিডি.কম

সর্বশেষ

পাঠকপ্রিয়