ঢাকা     শুক্রবার   ২৬ এপ্রিল ২০২৪ ||  বৈশাখ ১৩ ১৪৩১

অনুমতি পেলে সীমিত পরিসরে চালু হবে পুঁজিবাজার

নুরুজ্জামান তানিম || রাইজিংবিডি.কম

প্রকাশিত: ১৩:৪৬, ১৬ এপ্রিল ২০২০   আপডেট: ০৫:২২, ৩১ আগস্ট ২০২০
অনুমতি পেলে সীমিত পরিসরে চালু হবে পুঁজিবাজার

দেশে করোনাভাইরাস সংক্রমণের প্রভাবে থেমে গেছে পুঁজিবাজারের সর কার্যক্রম। সরকারের সাধারণ ছুটি ঘোষণা এবং বিনিয়োগকারীসহ পুঁজিবাজার সংশ্লিষ্ট সবার স্বাস্থ্য সুরক্ষার কথা বিবেচনায় এনেই উভয় স্টক এক্সচেঞ্জ কর্তৃপক্ষ লেনদেন বন্ধ রাখার সিদ্ধান্ত নিয়েছে। তবে এ সংকটকালীন পরিস্থিতিতেও প্রায় সব দেশেই পুঁজিবাজার চালু রয়েছে।  কিন্তু দেশের পুঁজিবাজার এখনও পুরোপুরি অটোমেটেড না হওয়ায় লেনদেন চালু করা সম্ভব হচ্ছে না।

তবে করোনা পরিস্থিতি কিছুটা স্বাভাবিক হলে সরকারের অনুমতি সাপেক্ষে সীমিত পরিসরে পুঁজিবাজারে লেনদেন চালু রাখা হবে বলে সংশ্লিষ্ট সূত্রে জানা গেছে।

সীমিত পরিসরে কীভাবে পুঁজিবাজারে লেনদেন চালু করা যায় সে বিষয়ে এরইমধ্যে কাজ শুরু করেছে উভয় স্টক এক্সচেঞ্জ।  এজন্য কোন কোন বিভাগের সংশ্লিষ্টতা জরুরি তা নিয়ে আলোচনা চলছে। পাশাপাশি এ পরিস্থিতিতে লেনদেন চালু করতে গেলে কিছু বিশেষ প্রস্তুতির প্রয়োজন রয়েছে। এ মুহূর্তে উভয় স্টক এক্সচেঞ্জ কর্তৃপক্ষ সে প্রস্তুতি নিচ্ছে। যাতে পরিস্থিতি কিছুটা স্বাভাবিক হলেই সরকারসহ সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষের অনুমতি সাপেক্ষে সীমিত পরিসরে পুঁজিবাজারে লেনদেন চলু করতে পারে। তবে সীমিত পরিসরে লেনদেন চালু হলে সব ব্রোকারেজ হাউজ অংশগ্রহণ করতে পারবে কি-না তা নিয়েও স্টক এক্সচেঞ্জ কর্তৃপক্ষের শঙ্কা রয়েছে।

শিগগিরই বিশ্বের অন্যান্য দেশের মতো বাংলাদেশ সিকিউরিটিজ অ্যান্ড এক্সচেঞ্জ কমিশন (বিএসইসি), বাংলাদেশ ব্যাংক, সেন্ট্রাল ডিপোজিটরি বাংলাদেশ লিমিটেড (সিডিবিএল), সেন্ট্রাল কাউন্টারপার্টি বাংলাদেশ লিমিটেড (সিসিবিএল), ব্রোকারেজ হাউজ, মার্চেন্ট ব্যাংক, অ্যাসেট ম্যানেজমেন্ট কোম্পানি ও তালিকাভুক্ত কোম্পানিগুলোকে অটোমেটেড সিস্টেমের আওতায় নিয়ে আসা প্রয়োজন বলে মনে করেন বিনিয়োগকারী ও সংশ্লিষ্টরা। তবে দেশের পুঁজিবাজার পুরোপুরি অটোমেটেড সিস্টেমের আওতায় না আসার পেছনে স্টক এক্সচেঞ্জ ও বিএসইসির দায় রয়েছে বলে মনে করেনে তারা।

জানা গেছে, পুঁজিবাজার চালু রাখার জন্য উভয় স্টক এক্সচেঞ্জ, বিএসইসি, ব্রোকারেজ হাউজ, মার্চেন্ট ব্যাংক, সিডিবিএল, সিসিবিএল ও ব্যাংকিং কার্যক্রম চালু রাখার সম্পর্ক রয়েছে। বর্তমানে ব্যাংক বাদে পুঁজিবাজার সংশ্লিষ্ট এসব প্রতিষ্ঠান বন্ধ রয়েছে। কেবলমাত্র ব্যাংকগুলো সকাল ১০টা থেকে দুপুর ১টা পর্যন্ত সীমিত আকারে লেনদেন চলছে। এ কারণেই পুঁজিবাজারের কার্যক্রম এ মুহূর্তে চালু করা সম্ভব হচ্ছে না বলে মনে করছে পুঁজিবাজার সংশ্লিষ্টরা।

তবে অন্যান্য দেশের পুঁজিবাজার পুরোপুরি অটোমেটেড ও অনলাইনভিত্তিক। সেখানে মোবাইল অ্যাপসেই লেনদেন করা সম্ভব। অন্যান্য স্টক এক্সচেঞ্জের পুরো লেনদেন মোবাইলে হয়। সেখানে একটি ইন্টিগ্রেট সিস্টেম রয়েছে। ওই সিস্টেমের আওতায় বিএসইসি, সিডিবিএল ও সিসিবিএল সবাই সম্পৃক্ত। কিন্তু দেশের পুঁজিবাজারে এমন সিস্টেম নেই। ফলে পুঁজিবাজার সংশ্লিষ্ট কোনো একটি প্রতিষ্ঠান বন্ধ থাকলে লেনদেন চালু রাখা সম্ভব হচ্ছে না।

এছাড়া পুঁজিবাজার চালু রাখতে হলে ব্রোকারেজ হাউজগুলোয় অন্তত ৫০ শতাংশ কর্মীর উপস্থিতি থাকতেই হবে। আবার বর্তমানে ব্যাংকিং লেনদেনের সময়সীমা সীমিত করে তিন ঘণ্টা করা হয়েছে। স্বাভাবিক সময়ে পুঁজিবাজারে ৪ ঘণ্টা লেনদেন হয়। বর্তমান পরিস্থিতিতে সীমিত আকারে লেনদেন চালু করলে সেটি ২ ঘণ্টার কম হলে চলবে না।

তবে বর্তমান পরিস্থিতিতে লেনদেন বন্ধ থাকায় ব্রোকারেজ হাউজগুলোর আয়ও বন্ধ। লেনদেন যদি আরও দীর্ঘ সময়ের জন্য বন্ধ থাকে, তাহলে প্রতিষ্ঠানগুলোর লোকসান বাড়বে। তাছাড়া লেনদেন বন্ধ থাকায় অনেক বিনিয়োগকারী জরুরি প্রয়োজন হলেও শেয়ার বিক্রি করে নগদ অর্থ নিতে পারছেন না। ফলে উভয় সংকটে রয়েছেন বিনিয়োগকারী, ব্রোকারেজ হাউজ ও মার্চেন্ট ব্যাংকগুলো।

এ বিষয়ে নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক বিএসইসি’র এক ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তা রাইজিংবিডিকে বলেন, ‘মন্দা পরিস্থিতিতে নয়, করোনার প্রভাবে সরকারের নির্দেশে সাধারণ ছুটির আওতায় পুঁজিবাজার বন্ধ রয়েছে। ফলে এ পরিস্থিতিতে পুঁজিবাজার খোলার বিষয়টিও সরকারের সম্পৃক্ত।’

এ বিষয়ে ঢাকা স্টক এক্সচেঞ্জের (ডিএসই) ব্যবস্থাপনা পরিচালক হিসেবে কাজী সানাউল হক রাইজিংবিডিকে বলেন, ‘পরিস্থিতি কিছুটা স্বাভাবিক হলে পুঁজিবাজার চালু রাখার জন্য আইটি, সার্ভিল্যান্স, মনিটরিং, মার্কেট অপারেশনস ও ক্লিয়ারিং ডিপার্টমেন্ট সীমিত পরিসরে কীভাবে খোলা রাখা যায় সে বিষয়ে আলোচনা করছি। এরইমধ্যে আমরা বিষয়টি নিয়ে পরিচালনা পর্ষদে আলোচনা করছি। এমন পরিস্থিতিতে মার্কেট চালু করতে গেলে স্টক এক্সচেঞ্জের কিছু বিশেষ প্রস্তুতির প্রয়োজন রয়েছে। সরকারসহ সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষের অনুমতি পেলেই মার্কেট চলু করা সম্ভব হবে।’

এদিকে চট্টগ্রাম স্টক এক্সচেঞ্জের (সিএসই) ব্যবস্থাপনা পরিচালক মামুন-উর-রশিদ রাইজিংবিডিকে বলেন, ‘সার্বিক প্রেক্ষপটে আমাদের দেশে এ মুহূর্তে ক্যাপিটাল মার্কেট চালু করা সম্ভব হচ্ছে না। অন্যান্য দেশে ক্যাপিটাল মার্কেট যেভাবে চলে, আমাদের দেশে সেভাবে চলে না। তবে পরিস্থিতি স্বাভাবিক হলে এ বিষয়ে আমরা সিদ্ধান্ত নেবো।’

এ বিষয়ে বাংলাদেশ পুঁজিবাজার বিনিয়োগকারী ঐক্য পরিষদের সাধারণ সম্পাদক কাজী আব্দুর রাজ্জাক রাইজিংবিডিকে বলেন, ‘করোনা পরিস্থিতি মোকাবিলায় সরকারের সিদ্ধান্তের পুঁজিবাজার বন্ধ রাখা হয়েছে। তবে দীর্ঘদিন পুঁজিবাজার বন্ধ থাকলে বিনিয়োগকারীরা তাদের শেয়ার বিক্রি করতে পারছেন না। ফলে তারা ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছেন। তবে এতো দিনেও আমাদের পুঁজিবাজারে পূর্ণাঙ্গ অটোমেটেড সিস্টেম চালু না হওয়টা অত্যন্ত দুঃখজনক।’


ঢাকা/এনটি/জেডআর

রাইজিংবিডি.কম

আরো পড়ুন  



সর্বশেষ

পাঠকপ্রিয়