ঢাকা     শুক্রবার   ২৬ এপ্রিল ২০২৪ ||  বৈশাখ ১৩ ১৪৩১

শাহজালাল বিমানবন্দরের মশা নিধন করবে কে?

শিহাবুল ইসলাম || রাইজিংবিডি.কম

প্রকাশিত: ২০:০৬, ২৮ জানুয়ারি ২০২১   আপডেট: ২০:২৮, ২৮ জানুয়ারি ২০২১
শাহজালাল বিমানবন্দরের মশা নিধন করবে কে?

দেশের সবচেয়ে বড় ও ব্যস্ততম বিমানবন্দর হজরত শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দর। এখানে মশার উৎপাত এত বেশি যে বিমানবন্দরের কর্মকর্তা-কর্মচারী, যাত্রীসহ সবাই অতিষ্ঠ। মশার উপদ্রব কমাতে কিছু পদক্ষেপও নিয়েছে বেসামরিক বিমান চলাচল কর্তৃপক্ষ, তবে তা পর্যাপ্ত নয়। ফলে মশা থেকে নিস্তার মেলেনি। টার্মিনালের ভেতরে ফগার মেশিন দিয়ে মশা নিধন করার ফলে উপদ্রব কিছুটা কমলেও বাইরের দৃশ্যপট একদমই ভিন্ন।

বুধবার বিকেল থেকে রাত পর্যন্ত শাহজালাল বিমানবন্দরে দেখা যায়, ১ ও ২ নম্বর টার্মিনালের বাইরে শত শত মানুষ অপেক্ষা করছেন। তাদের মধ‌্যে কেউ প্রিয়জনকে বিদায় জানাতে এসেছেন, কেউ এসেছেন দেশের বাইরে থেকে আসা স্বজনকে স্বাগত জানাতে।

মো. শাহাবুদ্দিন মিয়া এসেছেন বিক্রমপুর থেকে। তিনি মাইক্রোবাসের চালক। তার এলাকার ছেলে সোহেল দুবাই থেকে আসবেন। তার জন্য অপেক্ষা করছিলেন গাড়ি নিয়ে। সঙ্গে সোহেলের আত্মীয়-স্বজনও আছেন। শাহাবুদ্দিন মিয়া প্রতি মাসে অন্তত ৮-১০ বার আসেন এই বিমানবন্দরে। তিনি বলেন, ‘কখনো দিনে আসি, কখনো রাতে আসি। রাতে আসলে মশার কামড় খেতে হয়। এজন্য গাড়িতে বসে থাকি। অনেক সময় গাড়ির ভেতরেও মশা ঢোকে। তখন গাড়ির ভেতরে কয়েল জ্বালাই।’

বিমানবন্দর বাসস্ট্যান্ড থেকে টার্মিনালে প্রবেশপথের বাম পাশে আছে খালি জায়গা ও একটি পুকুর। খালি জায়গায় জমে আছে পানি। পানির ওপর মশার লার্ভা স্পষ্টভাবে দেখা যায়। পুকুরও পরিষ্কার করা হয়নি অনেক দিন। দীর্ঘদিন জমে থাকা পানিতে জন্ম নিচ্ছে মশা।

বেসামরিক বিমান চলাচল কর্তৃপক্ষ (বেবিচক) মনে করে, বাইরের থেকে বিমানবন্দরের ভেতরে আসে মশা। সিটি করপোরেশন যদি বিমানবন্দরের আশপাশের ময়লা-আবর্জনা পরিষ্কার এবং মশা নিধনের উদ্যোগ নিতো তাহলে এখানে মশার উপদ্রব থাকত না।

অপরদিকে, ঢাকা উত্তর সিটি করপোরেশন (ডিএনসিসি) বলছে, বিমানবন্দর এরিয়ার ভেতরে থাকা জলাশয় ও পুকুরে ব্যাপকভাবে মশা জন্ম নিচ্ছে। পুকুরগুলোতে থাকা আবর্জনা পরিষ্কার করলে মশা কমবে। পুকুর ও জলাধার পরিষ্কারের দায়িত্ব ডিএনসিসির নয়। ডিএনসিসি শুধু পরামর্শ, কারিগরি সহযোগিতা ও ফগার মেশিন চালানোর জন্য লোকবল দেবে বেবিচক’কে। ফগার মেশিনের চালকের মজুরির দায়িত্ব বেবিচককে নিতে হবে।

হজরত শাহজালাল বিমানবন্দরে মশা নিধন করতে গত ২১ জানুয়ারি ডিএনসিসি ও বেবিচক মিলে একটি কমিটি গঠন করেছে। ওই কমিটির আহ্বায়ক করা হয়েছে বেসামরিক বিমান পরিবহন ও পর্যটন মন্ত্রণালয়ের যুগ্ম সচিব নাফিউল হাসানকে।

তিনি রাইজিংবিডিকে বলেন, ‘মশা নিধন করার কাজ শুধু আমাদের নয়। এখানে সিভিল এভিয়েশন ও সিটি করপোরেশনেরও দায়িত্ব আছে। আমাদের পক্ষ থেকে নর্দামা- জলাশয় পরিষ্কার করা হচ্ছে। লার্ভিসাইড, আডালটিসাইড ছিটানো হচ্ছে। কমিটি গঠন করার পর মন্ত্রণালয় থেকে তিনজন প্রতিনিধি এসেছিলেন। তারা কার্যক্রম দেখে গেছেন। আশপাশের এরিয়াগুলো মনিটর করা হচ্ছে। সিটি করপোরেশন থেকে ফগার মেশিন নেওয়া হয়েছে। কারিগরি সহায়তাও নেওয়া হচ্ছে।’

ডিএনসিসি’র প্রধান স্বাস্থ্য কর্মকর্তা ব্রিগেডিয়ার জেনারেলমো. জোবায়দুর রহমান রাইজিংবিডিকে বলেন, ‘সিভিল এভিয়েশনের সচিবের সঙ্গে আমরা বৈঠকে বসেছিলাম। ২৭ জানুয়ারি একটা মিটিং ছিল অনলাইনে। ২৩, ২৪, ২৫ তারিখ একটা প্রোগ্রাম করেছি। সেখানে তাদের কোন কোন জায়গায় কী কী করতে হবে, সেসব পরামর্শ দিয়েছি। যেমন বিমানবন্দর এলাকায় কচুরিপানাযুক্ত ৫৪টি পুকুর আছে। রানওয়ের পাশে যে জলাশয় ও জলাবদ্ধ এরিয়া, সেগুলো তারা পরিষ্কার করেনি। আমরা বলেছি, কচুরিপানা পরিষ্কার না করলে মশা কোনোদিনই যাবে না। এটা যদি না করেন, তাহলে সমস্যা থেকেই যাবে।’

তিনি বলেন, ‘আমি চাচ্ছি, এটার একটা পারমানেন্ট সমাধান আসুক। আবর্জনা পরিষ্কার না করলে মশা থেকে নিষ্কৃতি মিলবে না। পুকুরগুলো বিমানবন্দরের নিজস্ব সম্পদ। এর ভেতরে গিয়ে পরিষ্কার করা আমাদের দায়িত্ব না। আমরা এরকমও বলেছি যে, টেকনিক্যাল সাপোর্ট যা লাগে, দরকার হলে সেগুলো আমরা দেবো। আমাদের অ্যান্ট্রোমলোজিস্ট আছে। সে গিয়ে মশার উৎপত্তি কোথায় কোথায় থেকে হচ্ছে, সেগুলো বের করে দেবে। ফগার মেশিন চালানোর জন্য যদি লোক লাগে তা আমরা দেব। উনাদের সাইড থেকে আরও রেসপন্স করতে হবে।’

ঢাকা/এসআই/রফিক

আরো পড়ুন  



সর্বশেষ

পাঠকপ্রিয়