ঢাকা     রোববার   ১৪ ডিসেম্বর ২০২৫ ||  অগ্রহায়ণ ৩০ ১৪৩২

Risingbd Online Bangla News Portal

কুষ্টিয়ার খাজানগরেও নেই স্বস্তির বার্তা

কাঞ্চন কুমার, কুষ্টিয়া || রাইজিংবিডি.কম

প্রকাশিত: ১৬:৫৯, ২৬ নভেম্বর ২০২৪   আপডেট: ১৭:১৩, ২৬ নভেম্বর ২০২৪

দেশে চালের যোগানের জন্য পরিচিত কুষ্টিয়ার খাজানগর থেকেও মিলছে না কোনো স্বস্তির বার্তা; খোদ কুষ্টিয়াতেই বাড়তি দামে বিক্রি হচ্ছে চাল। 

খাজানগর মোকামে সব ধরনের চালের দাম কেজিতে দেড় থেকে চার টাকা পর্যন্ত বেড়েছে। একই হারে ভোক্তা পর্যায়েও বেড়েছে।

আরো পড়ুন:

চালের বাজার নিয়ন্ত্রণে সরকার আমদানি শুল্ক কমালেও সেই সুযোগ নেওয়ার আগ্রহ তেমন দেখা যায়নি ব্যবসায়ীদের মধ্যে।

২০ অক্টোবর জাতীয় রাজস্ব বোর্ড ৬২ দশমিক ৫ শতাংশ থেকে নামিয়ে ২৫ শতাংশ নির্ধারণ করেছে চাল আমদানির শুল্ক। ততে সেই সুযোগ না নিয়ে উল্টো ব্যবসায়ীরা চালের দাম বাড়িয়েছেন।

চালকল মালিকরা বলছেন, মনপ্রতি ধানের দাম বেড়েছে ৯০ থেকে ১০০ টাকা। যার কারণে চালের দাম বেড়েছে; দাম নতুন করে বৃদ্ধি পাওয়ায় ভোক্তা পর্যায়ে অসন্তোষ বেড়েছে।

কুষ্টিয়ার পৌরবাজার ঘুরে দেখা গেছে, সব ধরনের চালের দাম কেজিতে দেড় থেকে দুই টাকা করে বেড়েছে। অবশ্য কোনো কোনোটির দাম একটু কমও হয়েছে।

শাপলা ট্রেডার্সের মালিক আশরাফুল ইসলাম বলেন, গত কয়েক দিন ধরে সব ধরনের চালের দাম বেড়েছে। তার দোকানে মিনিকেট ধরনের চালের কেজি ৭০ টাকায় বিক্রি হচ্ছে; যেখানে আগে ছিল ৬৮ টাকা। কাজললতা ৬৫ টাকা, বাঁশমতি ৯১ টাকা, মোটা চাল ৫৩ টাকা, হাইব্রীড মোটা চাল ৫০ টাকা কেজিতে বিক্রি হচ্ছে। এসব চাল কেজিতে দুই টাকা করে বেড়েছে। তবে সব থেকে বেশি বেড়েছে আটাশ চালের দাম। আটাশ চাল কেজিতে ৪ টাকা বেড়েছে।
আশরাফুল ইসলাম বলেন, বর্তমানে চালের দাম বৃদ্ধির কোনো কারণ নেই। নতুন ধানের চাল বাজারে রয়েছে। এ সময় সাধারণত চালের দাম বাড়ে না।

তবে এই বিক্রেতা আগামীতে চালের দাম আরও বাড়তে পারে বলেও মনে করেন। তার দাবি, চৈত্র মাসে মিনিকেট ধরনের বা চিকন জাতীয় চাল বাজারে উঠবে। তবে সে জন্য এখনও প্রায় চার মাস অপেক্ষা করতে হবে। এই লম্বা সময়ে আরও কয়েক দফা চালের দাম বাড়তে পারে।

আরেক বিক্রেতা সুফী আল আসাদ বলেন, চালের দাম বৃদ্ধির যৌক্তিক কোনো কারণ দেখছি না। অথচ সব ধরনের চালের দাম দুই টাৃকা করে বেড়েছে। সরকার আমদানি শুল্ক কমালেও চালের দাম কমছে না। উল্টো বৃদ্ধি পেয়েছে। এ বিষয়ে সরকারের কঠোর পদক্ষেপ প্রয়োজন।

কুষ্টিয়া সদর উপজেলার আইলচারা এলাকার করাত কলের শ্রমিক আমজাদ হোসেন বলেন, চালের দাম বৃদ্ধিতে সংসার চালানোর খরচে চাপ বেড়েছে।

তিনি বলেন, এমনিতেই সব ধরনের নিত্যপণ্যের দাম আকাশছোঁয়া। তার ওপর নতুন করে চালের দাম বেড়েছে। শুনেছি নতুন সরকার চালের দাম কমাতে আমদানি শুল্ক কমিয়েছে কিন্তু তাতে কমার কোনো লক্ষণ দেখছি না।

“ল্টো নতুন করে চালের দাম বেড়েছে। তাতে সংসার চালানো দায় হয়ে পড়েছে। সেই সঙ্গে পেট্রোল, ডিজেল, সার, বীজ ও কিটনাশকের দাম বেড়েছে। সেই জন্য চালের দাম বৃদ্ধি পেয়েছে।”

ভ্যানচালক আব্দুর রাজ্জাক বলেন, “দুই সপ্তাহ পর বাজারে এসেছি চাল কিনতে। এবার এসে দেখি আগেও যে দামে চাল কিনেছি খকনও সেই দামই চলছে, কিছুটা বেড়েছেও।”

দিনমজুর সাইফুল ইসলাম বলেন, “চালের দাম বৃদ্ধি পেয়েছে। তাই আমাদের কষ্ট বেড়েছে।”

মেসার্স ডায়মন্ড ট্রেডার্সের মালিক চাল ব্যবসায়ী মামুনুল হক ডায়মন্ড বলেন, ধানের দাম বৃদ্ধির কারণে সব ধরনের চালের দাম প্রকারভেদে বস্তাপ্রতি ২০ থেকে ৪০ টাকা পর্যন্ত বেড়েছে। আবার কোনো কোনো চাল প্রকারভেদে বস্তাপ্রতি কিছুটা কমেছে।

চালকল মালিকদের ভাষ্য- ধানের দাম বেশি। মনপ্রতি সব ধরনের ধানের দাম ১০০ টাকা বেড়েছে। বর্ধিত দামে কেনা ধানে চাল উৎপাদন করলে চাল বিক্রি করতে হবে তিন-চার টাকা বেশি দামে। সে তুলনায় চালের দাম সেই হারে বাড়ানো হয়নি। কেজিতে দুই টাকা করে বাড়ানো হয়েছে।

কুষ্টিয়া চালকল মালিক সমিতির সাধারণ সম্পাদক জয়নাল আবেদীন প্রধান বলেন, বেশি দামে ধান কিনতে হচ্ছে, তাই চালের দাম কেজিতে দুই টাকা বেড়েছে। অতিবৃষ্টির কারণে চলতি আমন মৌসুমে ধানের ফলন খুব একটা ভালো হয়নি। যার কারণে চালের বাজারে আরও নেতিবাচক প্রভাব পড়বে।

চালের বাজার বৃদ্ধির কারণ আসলেই কী, তা জানতে কথা হচ্ছিল কুষ্টিয়া চালকল মালিকদের আরেক সংগঠন বাংলাদেশ অটো রাইস মিল ওনার্স অ্যাসোসিয়েশনের জেলা শাখার সাংগাঠনিক সম্পাদক ও মেসার্স মা ভান্ডার আটো রাইস মিলের মালিক মাসুদ রানার সঙ্গে।

রাইজিংবিডি ডটকমকে তিনি বলেন, “চলতি মৌসুমে চালের দাম খুব একটা বাড়ে না বরং কমে। কিন্তু এবার চালের দাম বাড়ানো হয়নি। কারণ সরকার এলসি খুলে দিয়েছে। তাই বাইরের দেশ থেকে চাল আমদানি হবে। সেই কারণে চালের দাম বাড়ানো হয়নি।

সাধারণ মানুষের অভিযোগ, সরকার চেষ্টা করলেও সিন্ডিকেটের কারণে বাড়ছে চালের দাম। তবে মিল মালিকরা সেটি খারিজ করে দিচ্ছেন।

মাসুদ রানার দাবি, চালের বাজারে কোনো সিন্ডিকেট নেই। তবে চলতি মৌসুমে ধানের উৎপাদন ভালো না হওয়ায় চালের বাজার কিছুটা বাড়বে।

ঢাকা/কাঞ্চন/রাসেল

সম্পর্কিত বিষয়:

সর্বশেষ

পাঠকপ্রিয়