ঢাকা     মঙ্গলবার   ০৭ মে ২০২৪ ||  বৈশাখ ২৪ ১৪৩১

৭৬৫ রানের পর্বতে থামলো বিরাটের ব্যাট

ক্রীড়া প্রতিবেদক, আহমেদাবাদ থেকে || রাইজিংবিডি.কম

প্রকাশিত: ১৭:১৪, ১৯ নভেম্বর ২০২৩   আপডেট: ১৭:৫৫, ১৯ নভেম্বর ২০২৩
৭৬৫ রানের পর্বতে থামলো বিরাটের ব্যাট

সেমিফাইনালেই ছাড়িয়ে গিয়েছিলেন শচীন টেন্ডুলকারকে। ৫০তম ওয়ানডে সেঞ্চুরিতে কেবল শচীনের ৪৯তম সেঞ্চুরির রেকর্ডই ভাঙেননি। বিশ্বকাপের এক আসরে সর্বোচ্চ রানের রেকর্ডেও পেছনে ফেলেছিলেন। ২০০৩ সালে শচীন ৬৭৩ রান করে পৃথিবীকে অবাক করে দিয়েছিলেন। বিশ বছর পর ভারতের তেরাঙ্গা উচিঁয়ে ধরে বিরাট ছাড়িয়ে যান ব্যাটিং ঈশ্বরকে।

৭১১ রান নিয়ে বিরাট মাঠে নেমেছিলেন ফাইনালে। নিজের ক্রিকেট আইডল থেকে মাঠে নামার আগে পান অটোগ্রাফ সম্বলিত জার্সি। যা শচীনের ক্যারিয়ারের শেষ ওয়ানডের জার্সি। নিজের শেষ ওয়ানডে বিশ্বকাপ খেলতে নেমে বিরাট নিজেকে কোথায় নিয়ে যান, রানের পর্বতমালা কতটা উচুঁ হয় সেটাই ছিল দেখার।

আহমেদাবাদে নরেন্দ্র মোদী স্টেডিয়ামে ফাইনালে অস্ট্রেলিয়ার বিপক্ষে আরেকবার হাসলো তার ব্যাট। রান দ্যুতি ছড়িয়ে পেয়েছেন আরেকটি ফিফটি। কিন্তু এবারের ইনিংসটি খুব একটি বড় হলো না। দলকে বিপদ থেকে উদ্ধার করেছিলেন। স্নায়ু স্থির রেখে এগিয়ে যাচ্ছিলেন। কিন্তু অজি অধিনায়ক প্যাট কামিন্সের এক বাউন্সারে থামল তার রানছুট। ইনসাইড এজ হয়ে বিরাট বোল্ড হলেন ৫৪ রানে।

৭৬৫ রানে থামলেন বিরাট। যেখানে তার ধারের কাছেও নেই কেউ। সুউচ্চ এই রান পর্বত পরের বিশ বছরেও কি কেউ ভাঙতে পারবে? ভাঙতে হলে নতুন কোনো বিরাটের খোঁজে থাকতে হবে ক্রিকেট বিশ্বকে!

ওয়ানডে র‌্যাংকিংয়ে চার নম্বরে থেকে বিরাটের বিশ্বকাপ সফর শুরু হয়েছিল। ঘরের মাঠে বিশ্বকাপ। বিরাট, রোহিত, রাহুলদের ওপর আকাশসম প্রত্যাশা। দলগত পারফরম্যান্সে দলকে ফাইনালে তুলে দেড়’শ কোটির প্রত্যাশা পূরণ করেছিলেন তারা। দলগত পারফরম্যান্স তখনই হয় যখন ব্যক্তিগত অর্জনগুলো যোগ হয়। বিরাট, রোহিত, সামি, সিরাজ, বুমরাহরা সেটাই করেছেন।

অস্ট্রেলিয়ার বিপক্ষে ৮৫ রানের ঝকঝকে ইনিংস দিয়ে বিরাটের বিশ্বকাপ শুরু। চেন্নাইয়ে দল যখন খাদের কিনারায় ছিল তখন ব্যাট হাতে দোর্দণ্ড প্রতাপ ছড়িয়ে মুগ্ধতা ছড়ান। পরের ম্যাচে আফগানিস্তানের বিপক্ষে অপরাজিত ৫৫। আহমেদাবাদে পাকিস্তানের বিপক্ষে ১৬ রানে থেমে যান। সেঞ্চুরির অপেক্ষায় থাকা বিরাট চতুর্থ ম্যাচে পৌঁছে যান কাঙ্খিত গন্তব্যে। পুনেতে বাংলাদেশের বিপক্ষে ১০৩ রানের নজরকাড়া ইনিংস খেলে দলকে জেতান আপন ছন্দে।

পুনে থেকে ধর্মশালা। বিরাট টেনে নেন নিজের ফর্ম। ব্যাটিং জাদু। নিউ জিল্যান্ডের বিপক্ষে জয় পাওয়া ম্যাচে মাত্র ৫ রানের জন্য সেঞ্চুরিবঞ্চিত হন। পরের ম্যাচটা কেবল তার ভালো যায়নি। দল জিতলেও বিরাট থেমে যান শূন্যতে। সেদিন অবশ্য ভারতের পুরো ব্যাটিং অর্ডারে ধস নেমেছিল। কিন্তু এরপর থেকে আর তাকে থামানো যায়নি। শ্রীলঙ্কা, দক্ষিণ আফ্রিকা, নেদারল্যান্ডস ও সেমিফাইনালে নিউ জিল্যান্ডের বিপক্ষে তার রান যথাক্রমে ৮৮, ১০১*, ৫১ ও ১১৭।

ইডেনে ১০১ রান করে শচীনের পাশে বসেছিলেন ৪৯তম সেঞ্চুরি নিয়ে। সেমিফাইনালে তিন অঙ্ক ছুঁয়ে ছাড়িয়ে যান আইডলকে। সঙ্গে বিশ্বকাপের এক আসরে সর্বোচ্চ রানের রেকর্ড নিজের করে নেন।

নীল সমুদ্রে বিরাট জয়গান গাইয়ে ভারতের ক্রিকেটের সবচেয়ে বড় ধ্রুবতারা নিজেকে নিয়ে গেলেন অনন্য এক উচ্চতায়। যেখানে পৌঁছাতে কেবল তপশ্যারই প্রয়োজন হয়। প্রয়োজন হয় এক আকাশ স্বপ্ন। সেই স্বপ্ন ছুঁতে অক্লান্ত পরিশ্রম, নিবেদনের গল্প। নিজেকে ভেঙে কঠিন ইস্পাত দৃঢ় মনোবলের তৈরি করা লম্বা সফরের।

২০১১ বিশ্বকাপে শচীনের সঙ্গে বিশ্বকাপের ট্রফিতে চুমু খেয়েছিলেন বিরাট। সেবার নিজের প্রথম বিশ্বকাপে ৯ ম্যাচে করেছিলেন ২৮২ রান। গড় রান ছিল ৩৫.২৫। ২০১৫ বিশ্বকাপে বিরাটের ক্যারিয়ারের সূর্য মধ্যগগনে। নামের প্রতি সুবিচার করে তেমন ভালো করতে পারেননি। ৮ ম্যাচে রান করেছিলেন ৩০৫। চার বছর পর তার নেতৃত্বে ভারত নামে বিশ্বকাপের মিশনে। বিরাটের ব্যাটেও রান ছিল। ৯ ম্যাচে করেছিলেন ৪৪৩ রান। গড় রান ৫৫.৩৭।

সবকিছুকে ছাড়িয়ে গেল এবারের বিশ্বকাপ। যেখানে বাঁধার শত দেয়াল ভেঙে নতুন এক পর্বতে উঠেছেন। ৩ সেঞ্চুরি, ৬ ফিফটিতে ৭৬৫ রান করে এমন এক কীর্তি গড়েছেন যেখানে পৌঁছানো অনেকটাই মিশন ইম্পসিবল! পসিবল হতেও পারে। সেজন্য কত বছরের অপেক্ষা করতে হয় সেটাই দেখার। আপাতত বিরাটের গলায় থাকুক এই রান মালা। এই উৎসব তার জন্য শত রঙ ছড়াক।

আহমেদাবাদ/ইয়াসিন/আমিনুল

আরো পড়ুন  



সর্বশেষ

পাঠকপ্রিয়