ঢাকা     সোমবার   ২২ ডিসেম্বর ২০২৫ ||  পৌষ ৮ ১৪৩২

Risingbd Online Bangla News Portal

নব্বইয়ের ঘরে মুশফিক

ক্রীড়া প্রতিবেদক || রাইজিংবিডি.কম

প্রকাশিত: ১৩:১০, ৩১ আগস্ট ২০২৪  
নব্বইয়ের ঘরে মুশফিক

তাকে নিয়ে প্রথম আশার কথাটা শুনিয়েছিলেন হাবিবুল বাশার সুমন, ‘মুশফিক কিন্তু একশ টেস্ট খেলতে পারে।’ যার নেতৃত্বে ২০০৫ সালে লর্ডসে টেস্ট অভিষেক হয়েছিল মুশফিকের। বলেছিলেন এমন একজন যিনি দেশের জার্সিতে প্রথম খেলেছিলেন পঞ্চাশতম টেস্ট। ২০০৮ সালে হাবিবুল, ২০০৯ সালে মোহাম্মদ আশরাফুলের পর মুশফিক পঞ্চাশতম টেস্ট খেলেন ২০০৬ সালে।

‘ক্রিকেটের মক্কা’ খ্যাত লর্ডসে সর্বকনিষ্ঠ টেস্ট ক্রিকেটার হিসেবে অভিষেক হয়েছিল তার। বয়স ছিল কেবল ১৭ বছর। সাদা পোশাকের ক্রিকেটের যেই রেল গাড়িতে মুশফিক চড়েছিলেন, ধীরগতির সেই বাহন এখন তাকে নিয়ে গেছে নব্বইয়ের ঘরে। বাংলাদেশের প্রথম ক্রিকেটের হিসেবে টেস্ট ক্রিকেটে নব্বইয়ের ঘর ছুঁলেন মুশফিক। পাকিস্তানের রাওয়ালপিণ্ডিতে দ্বিতীয় টেস্টটি তাকে নিয়ে গেছে সেই গন্তব্যে।

আরো পড়ুন:

বরাবরই টেস্ট ক্রিকেটের জন্য নিবেদিতপ্রাণ মুশফিক। তার মেধা, প্রজ্ঞা, নিবেদন, সততার এক দৃষ্টান্ত প্রতিষ্ঠা করেছেন। দলের আগে মাঠে এসে মুশফিকের অনুশীলনের চিত্র নতুন নয়। আবার দল মাঠ ছেড়ে চলে যাচ্ছে মুশফিক তখনও অনুশীলনে সেটাও দেখা গেছে অনেকবার। অনুশীলনে বেশি জোর দেন বলেই ব্যাটিংয়ে আত্মবিশ্বাস পান মুশফিক। সেই আত্মবিশ্বাসের জোরেই তার ব্যাটে রানের ফুলঝুরি ছোটে।

জাতীয় দলের সূচি থাকুক বা না থাকুক, মুশফিক মাঠে থাকেন। অনুশীলনে ঘণ্টার পর ঘণ্টা কাটিয়ে দেন। ফিটনেস নিয়ে প্রচুর কাজ করেন। মিরপুরের হোম অব ক্রিকেট গ্রাউন্ড শের-ই-বাংলা স্টেডিয়ামই যেন ঘরবাড়ি মুশফিকের! পরিশ্রম, একাগ্রতা, নিষ্ঠা, উদ্যম, ন্যায়নিষ্ঠা সবই মুশফিকের বিশেষণ। তিলে তিলে গড়ে তোলা দীর্ঘ ক্যারিয়ারে তিনি বাংলাদেশ ক্রিকেটে ধ্রুবতারার জায়গাটি দখল করে নিয়েছেন। বয়স আর ক্যারিয়ার বাড়ার সঙ্গে সঙ্গে সেই আলোয় এখন ঔজ্জ্বলতা বাড়ছে। নামের পাশে যুক্ত হয়েছে ‘মিস্টার ডিপেন্ডেবল।’

২০০০ সালে ভারতের বিপক্ষে ম্যাচের মধ্য দিয়ে টেস্ট ক্রিকেটে পা রাখে বাংলাদেশ। এরপর পেরিয়ে গেছে ২৪ বছর। বাংলাদেশ খেলেছে ১৪৪টি টেস্ট। কিন্তু এখনো কোনও বাংলাদেশী ক্রিকেটার ছুঁতে পারেননি ১০০তম টেস্টে মাইলফলক। নব্বইয়ের ঘরে প্রবেশ করা মুশফিকের সামনে সুযোগ রয়েছে তিন অঙ্কের মাইলফলক ছোঁয়ার। ইতিহাসের অক্ষয় কালিতে নিজের নাম তোলারও সুযোগ রয়েছে। এজন্য প্রয়োজন আরো ১০ টেস্ট।

পাকিস্তানের বিপক্ষে এই টেস্ট সিরিজ শেষে মুশফিক এই বছরই ৬ টেস্ট খেলার সুযোগ পাবেন। ভারতরে বিপক্ষে সেপ্টেম্বরেই রয়েছে দুই টেস্ট। এরপর ঘরের মাঠে দক্ষিণ আফ্রিকাকে আতিথেয়তা দেবে বাংলাদেশ। তার খেলার সুযোগ রয়েছে আরো ২ টেস্ট। বছরের শেষ দিকে বাংলাদেশ যাবে ওয়েস্ট ইন্ডিজে। সেখানে খেলবে আরো ২ টেস্ট। শতভাগ ফিট থাকলে এ বছরই মুশফিক আরো ৬ টেস্ট খেলার সুযোগ পাচ্ছেন।

তবে পরের ৪ টেস্ট খেলার জন্য তাকে অপেক্ষা করতে হবে লম্বা সময়। আইসিসির ফিউচার ট্যুর প্রোগ্রাম অনুযায়ী আগামী বছর জুন-জুলাইয়ে বাংলাদেশ শ্রীলঙ্কা সফর করবে। সেখানে ২ টেস্ট খেলবে। এরপর বছরের শেষ দিকে আয়ারল্যান্ড সফরে রয়েছে আরো ২ টেস্ট। তবে ২ টেস্ট আরো বাড়তে পারে। বাংলাদেশ জিম্বাবুয়ে ও আফগানিস্তানের বিপক্ষে ২ টেস্ট আগামী সফর শিফট করেছে। ওই ২ টেস্ট কবে হবে তা এখনও নিশ্চিত নয়। সূচি ঠিক হলে আগামী বছরই মুশফিকের শততম টেস্ট খেলার সম্ভাবনা প্রবল।

রান সংখ্যায় মুশফিক বাংলাদেশের সবার চেয়ে এগিয়ে। ৫ হাজার ৮৬৭ রান নিয়ে মুশফিক রান সংখ্যায় সবার চেয়ে এগিয়ে। বাংলাদেশের প্রথম ব্যাটসম্যান হিসেবে টেস্টে ৬ হাজার রানের মাইলফলক ছুঁতে তার প্রয়োজন ১৩৩ রান। ৩৯.১১ গড় ও ৪৮.২৯ স্ট্রাইক রেটে ৮৯ ম্যাচে ১৬৪ ইনিংসে মুশফিক এই রান করেছেন। সামনে তার বড় কিছুর হাতছানি। বাংলাদেশের প্রেক্ষাপটে এতোটা লম্বা সময় ধরে আন্তর্জাতিক মঞ্চে টিকে থাকা, পারফর্ম করা এবং রেকর্ডের মালা পরা সব কিছুই কঠিন। কঠিন এই কাজটা মুশফিক শতভাগ নিবেদন, একাগ্রতা দিয়েই করে যাচ্ছেন। সামনে তার জন‌্য আরো বড় কিছুর অপেক্ষা। 

শুরুর কথা মতোই হাবিবুল বিশ্বাস করেন মুশফিক পারবেন, ‘আশা করি মুশফিক ১০০ টেস্টও খেলতে পারে। ওর ফিটনেস, সামর্থ্য, ওর প্রতিজ্ঞা, নিবেদন…সব কিছুই ওর পক্ষে। আগের থেকে আমরা টেস্টও বেশি খেলছি। এখন সুযোগ আছে সেই রেকর্ডটা নিজের করে নেওয়ার।’ 

ঢাকা/ইয়াসিন/বিজয়

সর্বশেষ

পাঠকপ্রিয়