ঢাকা     শনিবার   ১৩ ডিসেম্বর ২০২৫ ||  অগ্রহায়ণ ২৯ ১৪৩২

Risingbd Online Bangla News Portal

কক্সবাজার সৈকতে আইসিসি ট্রফির ঝলক: সমুদ্রের সুরে ক্রিকেটের জাগরণ

তারেকুর রহমান, কক্সবাজার || রাইজিংবিডি.কম

প্রকাশিত: ১৫:০৪, ১১ ডিসেম্বর ২০২৪   আপডেট: ১৫:২৫, ১১ ডিসেম্বর ২০২৪
কক্সবাজার সৈকতে আইসিসি ট্রফির ঝলক: সমুদ্রের সুরে ক্রিকেটের জাগরণ

কক্সবাজারে প্রদর্শিত হলো আইসিসি চ্যাম্পিয়নস ট্রফি। ছবি: রাইজিংবিডি

বিশ্ব ক্রিকেটের অন্যতম মর্যাদাপূর্ণ আসর আইসিসি চ্যাম্পিয়নস ট্রফি। সোনালী প্রলেপে মোড়ানো সেই ট্রফি এবার পা রেখেছে বাংলাদেশে। বিশ্বের দীর্ঘতম সমুদ্রসৈকত কক্সবাজার চ্যাম্পিয়নস ট্রফির আলোয় হয়ে উঠেছিল ঝলমলে। সমুদ্রের নীল জলরাশির পাশে ট্রফির সোনালি আলো যেন ছাপিয়ে যাচ্ছিল স্বর্গের অপরূপ সৌন্দর্যকে।

বুধবার (১১ ডিসেম্বর) বেলা ১১টার দিকে রোদেলা আকাশ আর হালকা শীতল হাওয়ার মধ্যেই সৈকতের লাবণী পয়েন্টে ট্রফিটি প্রদর্শনীর আয়োজন করা হয়। বিকেল ৩টা পর্যন্ত বিনা টিকিটে ট্রফির সঙ্গে ছবি তোলার সুযোগ পান দর্শনার্থীরা।

আরো পড়ুন:

আইসিসির এই শিরোপা দেখতে ভিড় করেন অনেক ক্রিকেটপ্রেমী দর্শনার্থী।

আইসিসির এই শিরোপা দেখতে ভীড় করেন অনেক ক্রিকেটপ্রেমী দর্শনার্থী। তাদের আগমনে সৈকতে এক উৎসবমুখর পরিবেশ সৃষ্টি হয়। নানান বয়সের মানুষ, স্থানীয় বাসিন্দা এবং পর্যটকরা ট্রফি দেখার জন্য ছুটে আসেন। অনেকেই ট্রফির সামনে দাঁড়িয়ে ছবি তুলে জমিয়ে রেখেছেন স্মৃতির পাতায়।

বর্ডার গার্ড বাংলাদেশ (বিজিবি) পরিচালিত সীমান্ত সম্মেলন কেন্দ্র ‘উর্মি’র সামনে বালুতে ট্রফিটি প্রদর্শনের জন্য তৈরী করা হয় একটি বিশেষ মঞ্চ। সমুদ্রের শীতল বাতাস আর ঢেউয়ের অদ্ভূত মন মাতানো শব্দ মিশে এক অপূর্ব দৃশ্যের সৃষ্টি করে। অনেকের মতে, এই আয়োজন কক্সবাজারের পর্যটনে নতুন মাত্রা যোগ করেছে।

এই আয়োজনের স্বার্থে কঠোর নিরাপত্তার বলয় ছিল। নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে র‍্যাব, পুলিশ এবং গোয়েন্দা সংস্থার বিশেষ টিম মোতায়েন ছিল। ট্রফি উন্মোচনের ঘন্টা দেড়েকের মধ্যে স্থানীয় বাসিন্দা ও পর্যটকদের ভিড়ে ‘উর্মি’র সামনের অংশ উৎসবের মঞ্চে পরিণত হলেও এক ঘণ্টা পর ভিড় কমে যায়। তবে ট্রফি দেখতে এবং ছবি তুলতে পেরে উচ্ছ্বাস প্রকাশ করেন সবাই।

ট্রফি দেখতে এসে অনেকেই উচ্ছ্বাসের সঙ্গে মতামত প্রকাশ করেছেন। এক দর্শনার্থীর ভাষ্য, “ট্রফিটি শুধু একটি সোনালি কাপ নয়, এটি বিশ্ব ক্রিকেটে বাংলাদেশের সফলতার স্বপ্ন। এটি আমাদের নতুন প্রজন্মকে অনুপ্রাণিত করবে।”

সাইদুল ইসলাম আফনান নামে স্থানীয় এক তরুণ ক্রিকেটার জানালেন, “কক্সবাজার সমুদ্রসৈকতে আইসিসি ট্রফি প্রদর্শনের ব্যাপারটি আমাদের জন্য দারুণ অনুভূতি এবং অনুপ্রেরণা। এই ট্রফি দেখে মনে হয় একদিন আমরাও বাংলাদেশকে বিশ্বকাপ এনে দিতে পারব। সেই লক্ষ্যে খেলে যাওয়ার প্রেরণা পাব।”

এই আয়োজন কেবল ক্রীড়াপ্রেমীদের জন্য নয়, কক্সবাজারের পর্যটনকেও প্রাণবন্ত করেছে বলে মনে করেন সংশ্লিষ্টরা। হোটেল মোটেল ও গেস্টহাউস মালিক সমিতির সাধারণ সম্পাদক সেলিম নেওয়াজ বলেন, “সৈকতে আইসিসি ট্রফি প্রদর্শন হওয়ায় অনেকে কক্সবাজারকে গুরুত্ব সহকারে দেখছেন। ভ্রমণের জন্য ইতিবাচক জায়গা হিসেবে পর্যটকরা কক্সবাজারকে বেছে নিবেন বলে আশা রাখছি।”

কক্সবাজারে আইসিসি চ্যাম্পিয়নস ট্রফির প্রদর্শনী।

আইসিসি ট্রফি প্রদর্শন শুধুমাত্র একটি প্রদর্শনী নয়, এটি বাংলাদেশ ক্রিকেটের ভবিষ্যৎ পরিকল্পনার অংশও বটে। এই আয়োজন নতুন প্রজন্মকে ক্রীড়ার প্রতি আগ্রহী করবে এবং দেশের জন্য গৌরব বয়ে আনতে অনুপ্রাণিত করবে বলে মনে করছেন সচেতন মহল।

তবে অভিযোগও রয়েছে। আইসিসি চ্যাম্পিয়নস ট্রফি কক্সবাজারে প্রদর্শিত হবে এমন আগাম প্রচার প্রচারণা কম থাকায় প্রত্যন্ত অঞ্চল থেকে অনেক ক্রিকেটপ্রেমী তরুণ-তরুণী আসতে পারেনি বলে অনেকের অভিযোগ। একাধিক ব্যক্তি অভিযোগ করে বলেন, গ্রামের অনেকে জানে না আইসিসি ট্রফি কক্সবাজার আসবে। তাই অনেকে এটি দেখতে আসতে পারেনি।

কক্সবাজার সমুদ্রসৈকতে বৈশ্বিক এই ট্রফির উপস্থিতি সমুদ্রের ঢেউয়ের মতোই একটি স্থায়ী স্মৃতি হয়ে থাকল। ক্রিকেট আর প্রকৃতির এই অসাধারণ মেলবন্ধন বাংলাদেশকে বিশ্বদরবারে আরও একবার গর্বিত করক।

বিশ্বভ্রমণের অংশ হিসেবে পাঁচ দিনের জন্য বাংলাদেশে এসেছে এই ট্রফি। বিসিবি জানিয়েছে, ১০ ডিসেম্বর থেকে ১৩ ডিসেম্বর পর্যন্ত ট্রফিটি প্রদর্শিত হবে। কক্সবাজারের পর এবার ঢাকার বসুন্ধরা শপিং সেন্টার ও শের-ই-বাংলা স্টেডিয়ামে ট্রফিটি যথাক্রমে ১২ ও ১৩ ডিসেম্বর প্রদর্শিত হবে।

জনসাধারণের উন্মাদনা বাড়াতে রীতি অনুযায়ী টুর্নামেন্ট শুরুর আগে অংশগ্রহণকারী দেশগুলোতে নেওয়া হয় ট্রফি। পাকিস্তানের রাজধানী ইসলামাবাদ থেকে শুরু হওয়া বিশ্ব ভ্রমণে ট্রফিটি আফগানিস্তান হয়ে বাংলাদেশে এসেছে। বাংলাদেশের পর ট্রফি দক্ষিণ আফ্রিকা, অস্ট্রেলিয়া, নিউ জিল্যান্ড, ইংল্যান্ড ও ভারত ঘুরে আয়োজক পাকিস্তানে পৌঁছাবে।

২০২৫ সালে পাকিস্তানে অনুষ্ঠিত হবে আইসিসি চ্যাম্পিয়নস ট্রফির নবম আসর। এবারের আসরে স্বাগতিক পাকিস্তানসহ অংশ নেবে ভারত, অস্ট্রেলিয়া, নিউ জিল্যান্ড, ইংল্যান্ড, দক্ষিণ আফ্রিকা, আফগানিস্তান ও বাংলাদেশ।

কক্সবাজার/তারেক/বিজয়

সম্পর্কিত বিষয়:

সর্বশেষ

পাঠকপ্রিয়