৬১ রানে ৫ উইকেট হারিয়ে অস্বস্তি

স্কোর: বাংলাদেশ ৪৮৪/৯ (দ্বিতীয় দিন শেষে)
এক নজরে পুরো দিন
সেশন ১
২৭ ওভার ৯১ রান ১ উইকেট (রান রেট ৩.৩৭)
সেশন ২
১৩.২ ওভার ৪০ রান ০ উইকেট (রান রেট ৩.০০)
সেশন ৩
২০.৪ ওভার ৬১ রান ৫ উইকেট (রান রেট ২.৯৫)
মুশফিকুর রহিম প্রথমে ডাবল সেঞ্চুরি মিস করলেন। তার দেখানো পথে হেঁটে লিটন দাস মিস করলেন সেঞ্চুরি।
থিতু হওয়া দুই ব্যাটসম্যান একই রানে আউট হওয়ার পর পরের ব্যাটসম্যানরা লড়াই চালিয়ে নিতে পারেনি। ২ ঘণ্টা ১৫ মিনিট বৃষ্টিতে খেলা বন্ধ ছিল। এরপর শেষ সেশনে খেলা হলো। যেখানে ৬১ রান তুলতে ৫ উইকেট হারিয়ে চরম অস্বস্তিতে বাংলাদেশ শিবির।
৯ উইকেটে ৪৮৪ রান নিয়ে বুধবার দ্বিতীয় দিনের খেলা শেষ করেছে বাংলাদেশ। এই ইনিংসে ৫০০ কিংবা তারও বেশি করার পরিকল্পনা ছিল দলের। কিন্তু এখন ৫০০-ও হয় কিনা সেটা নিয়েই রয়েছে শঙ্কা।
দারুণভাবে ম্যাচে ফিরে শেষটা নিজেদের করে নিয়েছে শ্রীলঙ্কা। আসিথা ফার্নান্দো মুশফিকুরকে ১৬৩ রানে এলবিডব্লিউ করার পর লিটন ৯০ রানে আউট হন থারিন্দুর বলে। এরপর মিলান রাতনায়েকে একাই নেন ৩ উইকেট। তাতে ধস নামে বাংলাদেশের ব্যাটিং অর্ডারে।
জাকের আলী ও তাইজুল ইসলাম ডানহাতি পেসারের বলে বোল্ড হন। নাঈম হাসান ক্যাচ দেন উইকেটের পেছনে। হাসান মাহমুদ ও নাহিদ রানা অপরাজিত আছেন। তারা কেউই রানের খাতা খুলতে পারেনি।
হাল ছেড়ে দিলেন জাকের
লেজের ব্যাটসম্যানদের নিয়ে লড়াই চালিয়ে নেওয়ার দায়িত্ব জাকের আলী অনিকের। লোয়ার অর্ডারে নিজের কাজটা বেশ ভালোভাবেই করতে পারেন ডানহাতি ব্যাটসম্যান। কিন্তু আজ পারলেন না। পেসার মিলান রাতনায়েকের ভেতরে ঢোকানো বলে বোল্ড হয়ে সাজঘরে ফিরলেন মাত্র ৮ রানে। বাংলাদেশ হারাল সপ্তম উইকেট।
আবারো নব্বইয়ের ঘরে আউট লিটন
সেঞ্চুরির পথে একটু একটু করে এগিয়ে যাচ্ছিলেন লিটন দাস। মুশফিকুর রহিমের আউটে তার উপর চাপ পড়েছিল। সেই চাপ সামলে নিতে পারেননি। ভুল শট খেলে নব্বইয়ের ঘরে ফিরলেন এই ব্যাটসম্যান।
এ নিয়ে ক্যারিয়ারে তৃতীয়বার নব্বইয়ের ঘরে আউট হয়েছেন লিটন। ২০১৮ সালে শ্রীলঙ্কার বিপক্ষেও একবার ৯৪ রানে আউট হয়েছিলেন।
স্পিনার থারিন্দুর বল রিভার্স সুইপ করতে গিয়ে টপ এজ হয়ে উইকেটের পেছনে ক্যাচ দেন লিটন। ১২৩ বলে ১১ চার ও ১ ছক্কায় ৯০ রান করেন এই ব্যাটসম্যান। দশ ইনিংস পর ফিফটির স্বাদ পেয়েছিলেন তিনি। একটু স্থির হয়ে খেললে সেঞ্চুরিটাও হয়তো পেয়ে যেতেন।
মুশফিকুর আউট, বাংলাদেশ হারাল পঞ্চম উইকেট
বোলিংয়ের পুরস্কার পেলেন পেসার আসিথা ফার্নান্দো। ডানহাতি পেসার গতি ও সুইং দিয়ে পরীক্ষা নিচ্ছিলেন মুশফিকুর রহিমকে। সেই পরীক্ষায় মুশফিকুর এবার ধরা পড়লেন।
আসিথার ভেতরে ঢোকানো বল অনসাইডে ফ্লিক করতে চেয়েছিলেন মুশফিকুর। ডাবল সেঞ্চুরির পথে থাকা এই ব্যাটসম্যান বল মিস করেন। ব্যাট তার টো-এ আঘাত করে। আর বল সোজা তার প্যাডে।
লঙ্কানদের আবেদনে আম্পায়ার আঙুল তুলে দেন। মুশফিকুর সঙ্গে সঙ্গে রিভিউ নেন। কিন্তু তার ভাগ্য ফেরেনি। এলবিডব্লিউ হয়ে তাকে ফিরতে হয় সাজঘরে। ৩৫০ বলে ৯ বাউন্ডারিতে ১৬৩ রান করে মুশফিকুর থামলেন। ২০১৩ সালে এই মাঠে তার প্রথম ডাবল সেঞ্চুরি এসেছিল। এবারও সেই পথে হাঁটছিলেন। কিন্তু ভাগ্যকে পাশে পেলেন না।
তার আউটে ভাঙল পঞ্চম উইকেটে লিটনকে নিয়ে করা ১৪৯ রানের জুটি।
২ ঘণ্টা ১৫ মিনিট পর খেলা শুরু
বৃষ্টির কারণে ২ ঘণ্টা ১৫ মিনিট খেলা বন্ধ ছিল। বৃষ্টি থামার পরপরই খেলা শুরু করতে পেরেছেন আম্পায়াররা। স্থানীয় সময় সন্ধ্যা ৬টা পর্যন্ত খেলা চালানোর চেষ্টা করবেন আম্পায়াররা।
চা-বিরতি-ও শেষ
চা-বিরতির পর এতক্ষণে খেলা শুরু হওয়ার কথা ছিল। স্থানীয় সময় ২টা ১০ থেকে ২টা ৩০ মিনিট পর্যন্ত ছিল চা-বিরতি। কিন্তৃ বৃষ্টির কারণে এখনো পুরো মাঠ কাভার করা। খেলা শুরুর কোনো সম্ভাবনা নেই।
পরিসংখ্যান
শেষ পাঁচ বছরে গলে প্রথম ইনিংসে চারশ বেশি রান হয়েছে নয়বার। আটবারই ম্যাচ জিতেছে প্রথম ইনিংসে ব্যাটিং করা দল। একবার হারের ঘটনা ঘটেছে। আয়ারল্যান্ড ২০২৩ সালে ৪৯২ রান করেও ম্যাচ হেরেছিল।
বৃষ্টিতে খেলা বন্ধ
বৃষ্টিতে খেলা আপাতত বন্ধ রয়েছে। ৪ উইকেটে বাংলাদেশের রান ৪২৩। মুশফিকুর ১৫৯ ও লিটন ৬১ রানে অপরাজিত রয়েছেন। পঞ্চম উইকেট জুটিতে তাদের সংগ্রহ ১১৪ রান।
মুশফিকের দেড়শ, বাংলাদেশের চারশ ও লিটনের ফিফটি
মধ্যাহ্ন বিরতির পর ব্যাটিং ধারাবাহিকতা ধরে রেখেছেন লিটন। তুলে নিয়েছেন নিজের ১৮তম টেস্ট ফিফটি। দশ ইনিংস পর ফিফটির স্বাদ পেয়েছেন ডানহাতি ব্যাটসম্যান।
এর আগে বাংলাদেশ অনায়েসে পেরিয়ে যায় দলীয় ৪০০ রান। টেস্টে শ্রীলঙ্কার বিপক্ষে অষ্টমবার বাংলাদেশের রান চারশ ছাড়াল।
মুশফিকুর রহিমও দেড়শ রান ছাড়িয়ে গেছেন। টেস্ট ক্যারিয়ারে সপ্তমবার দেড়শ বা তার বেশি রানের ইনিংস খেলেছেন মুশফিকুর।
এছাড়া পঞ্চম উইকেটে মুশফিকুর ও লিটনের জুটির রানও শতরান পেরিয়ে গেছে। দলীয় ৩০৯ রানে তারা জুটি বেঁধেছিলেন।
প্রথম সেশনে বাংলাদেশের ৯১ রান, শ্রীলঙ্কার ১ উইকেট
গল টেস্টের দ্বিতীয় দিনের প্রথম সেশনে দাপট ধরে রাখল বাংলাদেশ।
আগের দিনের অপরাজিত দুই ব্যাটসম্যান নাজমুল হোসেন শান্ত ও মুশফিকুর রহিম ভালো শুরু পেয়েছিলেন। শান্ত বেশিক্ষণ টিকতে পারেননি। পাহাড়সমান জুটি ভাঙতে পেরেছে শ্রীলঙ্কা। কিন্তু নতুন ব্যাটসম্যান লিটনকে নিয়ে আবার লড়াই শুরু করেন মুশফিকুর। তাতে তরতরিয়ে বাড়ছে বাংলাদেশের রান। বড় সংগ্রহের পথে এগিয়ে যাচ্ছে অতিথিরা।
৪ উইকেটে বাংলাদেশের রান ৩৮৩। সকালের সেশনে ২৭ ওভারে ৯১ রান জমা করেছে বাংলাদেশ। মুশফিকুর ১৪১ ও লিটন ৪৩ রানে ব্যাটিং করছেন। পঞ্চম উইকেটে তাদের জুটিতে এসেছে ৭৪ রান।
লিটন ও মুশফিকুর একাধিক সুযোগ দিয়েছিলেন। দুইবার রান আউট হওয়া থেকে বেঁচে যান তারা। লিটনের একটি ক্যাচ ছেড়েছেন নিশাঙ্কা। সুযোগগুলো নিতে পারলে স্কোরবোর্ডের চিত্র অন্যরকম হতেও পারত।
থারিন্দুর বলে ১৪ রানে মিড উইকেটে ক্যাচ দিয়েছিলেন লিটন। বেঁচে যাওয়ার পর এই অফস্পিনারকে একই জায়গা দিয়ে দুটি ও পরে পয়েন্ট দিয়ে একটি চার হাঁকান। আক্রমণাত্মক ও নিজের সহজাত মনোভাবে ব্যাটিং করছেন লিটন। মুশফিক খেলছেন দেখেশুনে। তাদের দুজনের ব্যাটে বাংলাদেশ দ্বিতীয় সেশনে কতদূর যায় সেটাই দেখার।
লিটন-মুশফিকুরের জুটির ফিফটি
অধিনায়ক নাজমুল হোসেন শান্ত আউট হওয়ার পর শ্রীলঙ্কাকে একাধিক সুযোগ দিয়েছিলেন লিটন ও মুশফিকুর। কিন্তু স্বাগতিকরা সেসব নিতে পারেননি। তাতে থিতু হয়েছেন দুজনই। ব্যাটিং ধারাবাহিকতায় জুটির পঞ্চাশ রান এরই মধ্যে তুলে দিয়েছেন তারা। ৪ উইকেটে বাংলাদেশের রান ৩৭৩। জুটির রান ৬৪। মুশফিকুর ১৩৫ ও লিটন ৩৯ রানে ব্যাটিং করছেন।
পানি পান বিরতি
গলে দ্বিতীয় দিনের প্রথম ঘণ্টায় দুই দলের লড়াইয়ে ভারসাম্য ছিল। শ্রীলঙ্কা ভাঙতে পেরেছে নাজমুল হোসেন শান্ত ও মুশফিকুর রহিমের প্রতিরোধ। শান্ত দেড়শ ছোঁয়ার আগে আউট হন। মুশফিকুর নতুন ব্যাটসম্যান লিটনকে নিয়ে ইনিংস মেরামতের কাজ করছেন।
দিনের প্রথম ঘণ্টায় ১৩ ওভার খেলা হয়েছে। রান হয়েছে ৩৫। শ্রীলঙ্কা আরো একটি উইকেট পেতে পারত। পানি পানের বিরতির আগে রান নিতে গিয়ে ভুল বোঝাবুঝি হয়েছিল লিটন ও মুশফিকুরের। শ্রীলঙ্কার ফিল্ডাররা পারেননি সুযোগ কাজে লাগাতে।
পরিসংখ্যান
চতুর্থ উইকেটে দেশের বাইরে সবচেয়ে বেশি রানের জুটি গড়লেন মুশফিকুর ও শান্ত। দুজন ২৬৪ রান করেছেন। আর ২ রান করতে পারলে দেশের মাটিতে মুশফিকুর ও মুমিনুলের সর্বাধিক ২৬৬ রানের রেকর্ডটাও নিজের করে নিতে পারতেন তারা।
দেড়শ ছোঁয়া হলো না শান্তর
দ্বিতীয় দিনের সকালে শ্রীলঙ্কা ভাঙল বাংলাদেশের প্রতিরোধ। আগের ওভারে পেসার আসিথার বলে আম্পায়ার তাকে এলবিডব্লিউ দিয়েছিলেন। নাজমুল হোসেন শান্ত রিভিউ নিয়ে টিকে যান। কিন্তু বেশিক্ষণ থাকতে পারলেন না। পরের ওভারের প্রথম বলে আসিথা তুলে নেন তার উইকেট।
ডানহাতি পেসারের স্লোয়ার লেন্থ বল আগেভাগে ড্রাইভ করেছিলেন শান্ত। টাইমিং মেলাতে পারেননি। বল চলে যায় মিড অফে। সেখানে নিজের শেষ টেস্ট ম্যাচ খেলতে নামা অ্যাঞ্জেলো ম্যাথুজ দারুণ ক্যাচ নিয়ে শান্তকে আউট করেন।
বাঁহাতি ব্যাটসম্যানের দেড়শ ছোঁয়া হলো না। ২৭৯ বলে ১৪৮ রান করেছেন ১৫ চার ও ১ ছক্কায়। মুশফিকুর রহিমের সঙ্গে চতুর্থ উইকেটে তার জুটি ছিল ২৬৪ রানের। মুশফিকুরের নতুন সঙ্গী লিটন দাস।
পরিসংখ্যান
২০১৩ সালে বাংলাদেশ গলে ৬৩৮ রান করেছিল যা এখনও টেস্ট ক্রিকেটে বাংলাদেশের সর্বোচ্চ দলীয় সংগ্রহ। মুশফিকুর রহিম সেই ম্যাচে প্রথম বাংলাদেশি ব্যাটসম্যান হিসেবে টেস্টে ডাবল সেঞ্চুরি পেয়েছিলেন।
কতদূর যাবে বাংলাদেশ?
শুরুর ৩ ব্যাটসম্যান দলীয় ৪৫ রানে সাজঘরে। সেখান থেকে কতদূরই বা যেতে পারে বাংলাদেশ? আগের পাঁচ দলীয় ইনিংসে সর্বোচ্চ ৪৪৪ রান করেছিল জিম্বাবুয়ের বিপক্ষে। বাকি চারটিতে ১৯১, ২৫৫, ১৬৪ ও ২৬৮ রানে অলআউটের রেকর্ড বাংলাদেশের। তার আগের পাঁচটিতে চারটিতেই দুইশও ছুঁতে পারেনি দলীয় রান।
গলে মুশফিকুর রহিম ও নাজমুল হোসেন শান্ত যখন জুটি বাঁধলেন তখন বাজি ধরার লোক পাওয়ার কথা না। কিন্তু এই দুই ব্যাটসম্যান নিজেদের দৃঢ়চেতা মনোভাব, হার না মানা মানসিকতা, চোয়ালবদ্ধ প্রতিজ্ঞায় ও দায়িত্বশীল ব্যাটিংয়ে বাংলাদেশকে হাসালেন। উড়ালেন।
গলে গতকাল প্রথম দিন বাংলাদেশ শেষ করেছে ৩ উইকেটে ২৯২ রান নিয়ে। শান্ত ক্যারিয়ারের ষষ্ঠ ও মুশফিকুর দ্বাদশ সেঞ্চুরি তুলে নিয়েছেন। দুজনের অবিচ্ছিন্ন জুটিতে এসেছে ২৪৭ রান। মুশফিকুর ১০৫ ও শান্ত ১৩৬ রানে অপরাজিত থেকে আজ দ্বিতীয় দিনের খেলা শুরু করেছেন।
প্রশ্ন হচ্ছে, আজ কতদূর যাবে বাংলাদেশ?
ঢাকা/ইয়াসিন