ঢাকা     শুক্রবার   ২৬ এপ্রিল ২০২৪ ||  বৈশাখ ১৩ ১৪৩১

মশা থেকে বাঁচাতে ভগবানের জন্যও মশারি!

শাহেদ || রাইজিংবিডি.কম

প্রকাশিত: ০৬:১৩, ২৬ আগস্ট ২০১৬   আপডেট: ০৫:২২, ৩১ আগস্ট ২০২০
মশা থেকে বাঁচাতে ভগবানের জন্যও মশারি!

গোপালের জন্য মশারি খাট

আন্তর্জাতিক ডেস্ক : রোগ থেকে দুর্ভোগ সবইতো নশ্বর দেহের জন্য। তাই বলে ভগবানেরও রোগ ভোগের আশঙ্কা! ভারতের উত্তর প্রদেশে এখন চলছে ডেঙ্গু মৌসুম। আর আজ সেখানে চলছে জন্মাষ্টমী উৎসব। হোলি-দিওয়ালির পরে কৃষ্ণের জন্মদিন পালন এখানকার প্রধান উৎসব।

 

বাজারে নাড়ু, বালা, শৃঙ্গারের রকমারি উপকরণ বিক্রির পাশাপাশি এবার এখানে সব কিছুকে ছাপিয়ে গিয়েছে মশারি দেওয়া খাটের চাহিদা। অতিথি কৃষ্ণ রাতে বিশ্রাম করবেন, আর হুলওয়ালা এডিস-কিউলেক্স তাকে ঘিরে ভন ভন করবে, তা হয় নাকি! তাই ভক্তদের মশারির চাহিদা মেটাতে তাই হিমশিম খাচ্ছেন দোকানিরা।

 

গরম পড়তে ফি বছরই ডেঙ্গু ছড়ায় রাজধানীতে। এ বছর সঙ্গে এসেছে চিকুনগুনিয়া। গত এক সপ্তাহে চিকুনগুনিয়ায় আক্রান্ত হয়েছেন সাড়ে ৩০০ জন। অন্য বছর এই সংখ্যা থাকে ৩৫ থেকে ৪০-এর ভিতরে। আর এই ডেঙ্গু-চিকুনগুনিয়ার আতঙ্ককে হাতিয়ার করে মুনাফা লুটতে নেমে পড়েছেন ব্যবসায়ীরা। ভক্তের কানে সুড়সুড়িটা এই রকম— আপনি শোবেন মশারির নীচে,আর ভগবান এমনি! তুচ্ছ কয়েকটা মশার কারণে উনি বিরক্ত হয়ে মুখ ফেরালে কী দশা হতে পারে ভেবেছেন একবার!

 

এই ‘যুক্তি’ কী করে ফেলেন ভক্তেরা? ভগবানের বিরূপ হওয়ার ভয় তো থাকেই। তারপরেও— গোপাল হলো বাড়ির ছোট্ট ছেলেটার মতো। সে দুষ্টু নন্দলালা। খুনসুটি করে, আবার ননী-নাড়ু খায় হাত চেটে। গোপালকে স্নান করিয়ে, যত্ন করে মুছিয়ে রংচঙে নতুন পোশাক পরানো হবে জন্মদিনে। দুপুরে তার জন্য বিশেষ আহার। এর পরে রাতে বিশ্রামের সময়ে যদি মশারি ফেলা খাট হয়, মন্দ কী!

 

করোলবাগ বা চিত্তরঞ্জন পার্কে দেদার বিক্রি হচ্ছে মশারি ফেলা খাট। বাজার অনুযায়ী রয়েছে দামের ফারাকও। সমাচার বাজারে যে মশারি-খাট দেড়শো থেকে দু’শো টাকা, চিত্তরঞ্জন পার্কে সেটাই তিনশো। ছোট, বড়, মাঝারি— যেমন খাটের মাপ, সেই সাইজের মশারি। খাটের সঙ্গেই লাগানো পর্দার মতো মশারি, একটা দিক সামান্য একটু তুলে অনায়াসে গোপালকে খাটে শোয়াতে পারবেন ভক্তরা। বিক্রি হচ্ছে ইঞ্চি ছয়েকের ইলেকট্রিক ফ্যানও। গরমে আরামের পাশাপাশি গোপালের মশা-মাছিও তাড়াবে এই পাখা।

 

অবিনশ্বর হতে পারেন, তা বলে কি রোগ ভোগ ভগবানের হয় না? স্নানযাত্রার পরে পুরীর জগন্নাথদেব তো জ্বরে পড়ে হি-হি করে কাঁপতে থাকেন। পাক্কা ১৫ দিন জ্বর থাকে তাঁর। এই সময়ে তিনি যেমন ভক্তদের দর্শন দেন না, বন্ধ থাকে তার ভোগ রান্নাও। তা গোপালেরই বা ডেঙ্গু হবে না— কে বলতে পারে!

 

এই বিপণনে অবশ্য খারাপ কিছু দেখছেন না মনোবিদ অনিরুদ্ধ দেব। তার কথায়, ‘কৃষ্ণ, গণেশ বা যিশুর শিশু রূপকে সন্তানতুল্য ভাবেন ভক্তরা। ছোট বলে তাদের নিরাপত্তার দরকার পড়ে বইকী। এতে যদি ব্যবসা বাড়ে, দোষের কী?’

 

ইস্কনের বৃন্দাবন চন্দ্রোদয় মন্দিরের সাধু অর্জুননাথ দাসের কথায়, ‘ভক্তরা যদি ভগবানকে তাদের মতো করে স্বাচ্ছন্দ্য দিতে চান, দিন না। ক্ষতি কী তাতে?’

 

তবে বিজ্ঞাপন-গুরু রাম রায় বিষয়টিকে এতো সরল ভাবে দেখতে নারাজ। তার কথায়, ‘আধ্যাত্মিক হওয়া এক জিনিস, আর ধর্ম নিয়ে ব্যবসা অন্য জিনিস। ব্যবসায়ীরা যুক্তি সাজাবে, আর মানুষ তা অন্ধ ভাবে মানবে— এটা মেনে নেওয়া যায় না।’

 

গোপালের মশারির কথা শুনে হেসেছেন আর এক বিজ্ঞাপন বিশেষজ্ঞ শৌভিক মিশ্র। তার যুক্তি— মশা তো তারই সৃষ্টি। তাই মশা তাকে কামড়াবে না। মশারি কেনার টাকাটা হাসপাতালে ডেঙ্গু চিকিৎসার গবেষণায় পাঠালে গোপাল নিশ্চয় বেশি খুশি হতেন।

 

সূত্র : আনন্দবাজার

 

 

রাইজিংবিডি/ঢাকা/২৬ আগস্ট ২০১৬/শাহেদ

রাইজিংবিডি.কম

আরো পড়ুন  



সর্বশেষ

পাঠকপ্রিয়