ঢাকা     শুক্রবার   ১৯ এপ্রিল ২০২৪ ||  বৈশাখ ৬ ১৪৩১

বিষখালির গর্ভে বিলীন হতে চলেছে স্কুলসহ অনেক স্থাপনা

ঝালকাঠি সংবাদদাতা || রাইজিংবিডি.কম

প্রকাশিত: ০২:১০, ৪ জুলাই ২০২০   আপডেট: ১০:৩৯, ২৫ আগস্ট ২০২০
বিষখালির গর্ভে বিলীন হতে চলেছে স্কুলসহ অনেক স্থাপনা

ঝালকাঠির রাজাপুরে বিষখালী নদীর ভাঙন অব্যাহত রয়েছে। নদীগর্ভে বিলীন হতে চলেছে ঐতিহ্যবাহী মঠবাড়ি ইউনিয়নের বাদুরতলা মাধ্যমিক বিদ্যালয়সহ অনেক স্থাপনা। 

জোয়ারের পানি বৃদ্ধির সাথে সাথে বেড়েছে নদী ভাঙন। ইতোমধ্যে স্কুলটির কয়েকটি রুম ও বারান্দা নদীগর্ভে বিলীন হয়ে গেছে। হয়তো যেকোনো সময় হারিয়ে যাবে পুরো স্কুল এবং স্কুলের পাশে থাকা জামে মসজিদ।

এর আগে বিভিন্ন সময়ে বাদুরতলা বাজারের অর্ধশত দোকান, বসতঘর, গাছপালা কয়েকশ' একর জমি বিলীন হয়ে গেছে। ভিটা মাটি হারিয়ে অনেকে আজ পথে বসেছেন। বিদ্যালয়ের কক্ষ ভেঙে যাওয়ায় ওই ভবনটিতে অনেক আগ থেকেই ক্লাস বন্ধ করে দিয়েছেন কর্তৃপক্ষ। । 

সরেজমিন ঘুরে দেখা গেছে, পানি বেড়ে যাওয়ায় বর্ষা মৌসুমের শুরুতেই বিষখালী নদীর বিভিন্নস্থানে ভাঙন শুরু হয়েছে। তীব্র ভাঙনে বাদুরতলা লঞ্চঘাট, বাদুরতলা বাজার, বিভিন্ন ব্যবসা প্রতিষ্ঠান ও আশপাশের সড়ক এরই মধ্যে নদীগর্ভে বিলীন হয়ে গেছে। ভাঙনের ঝুঁকিতে রয়েছে শতাধিক বসতবাড়ি, একাধিক প্রাথমিক বিদ্যালয় ও বাদুরতলা জামে মসজিদ এবং বড়ইয়া বিশ্ববিদ্যালয় কলেজসহ বেশ কিছু গুরুত্বপূর্ণ স্থাপনা। 

এছাড়া বাদুরতলা-পুখরীজানা-মানকি সুন্দর সড়ক ও বাদুরতলা-চল্লিশ কাহনিয়া সড়কটিও নদীতে বিলীন হয়ে গেছে। এতে মঠবাড়ি ও বড়ইয়া ইউনিয়নের হাজারো মানুষ বিপাকে পড়েছেন। 

স্থানীয় ইউপি সদস্য দেলোয়ার খলিফা জানান, জরুরি ভিত্তিতে ভাঙন রোধ করা না গেলে অচিরেই হয়তো বাদুরতলা মাধ্যমিক বিদ্যালয়ের অস্তিত্বই হারিয়ে যাবে। 

স্থানীয় অভিভাবক ফেরদৌস হাওলাদার বলেন, ‘এই গ্রামে একটি মাত্র বিদ্যালয় যেখানে আমার সন্তানসহ কয়েকশত ছাত্রছাত্রী লেখাপড়া করে। বিদ্যালয়টি নদীতে ভেঙে গেলে দশ কিলোমিটার দূরে উপজেলা সদরের স্কুলে অনেক ছাত্রছাত্রীরই লেখাপড়া করা সম্ভব হবে না। তাই বিদ্যালয়টি রক্ষায় কার্যকর পদক্ষেপ নেওয়া একান্ত প্রয়োজন।' 

বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক আইউব আলী জানান, বিদ্যালয়টি রক্ষার জন্য একাধিকবার মাধ্যমিক শিক্ষা অফিস ও উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তাসহ ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তাদের জানানো হয়েছে। কর্তৃপক্ষ কার্যকর কোনও উদ্যোগ না নেওয়ায় বিদ্যালয়টি রক্ষা করা আর সম্ভব হবে না। এরইমধ্যে বিদ্যালয়ের পূর্ব পাশের একটি কক্ষ আসবাবপত্রসহ রাতের আঁধারে  ভেঙে নদীতে বিলীন হয়ে গেছে। তবে ইউএনও পরিদর্শন করেছেন এবং স্কুলটি অন্যত্র সরিয়ে নেয়ার আশ্বাস দিয়েছেন। 

তিনি বলেন, ‘জরুরি ভিত্তিতে ব্লক বা বড় গাছের পাইলিং না দেওয়া হলে পুরো স্কুলই বিলীন হয়ে যাবে। বর্তমানে নিরুপায় হয়ে পরিচালনা পর্ষদ স্কুলের জন্য অন্য জায়গায় জমি কেনার চেষ্টা করছেন।' 

মঠবাড়ী ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান মোস্তফা কামাল সিকদার বলেন, ‘স্কুলটি বাঁচাতে ও বিষখালীর ভাঙন বন্ধ করতে বহুবার প্রশাসনের ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তাদের দ্বারস্থ হয়েছি। তবে দুঃখের বিষয়, এখনো কার্যকর কোনও ব্যবস্থা নেওয়া হয়নি। বিদ্যালয়টি নিরাপদ স্থানে সরিয়ে নিতে জমি অধিগ্রহণের চেষ্টা করছি। তবে অর্থাভাবে তা এখনো সম্ভব হয়নি। '

রাজাপুরের ইউএনও সোহাগ হাওলাদার বলেন, ‘ভাঙন থেকে বিদ্যালয়টি রক্ষার জন্য এরই মধ্যে ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষকে অবহিত করা হয়েছে। এছাড়া প্রকৌশলী পাঠিয়ে পরিদর্শন করানো হয়েছে এবং ম্যানেজিং কমিটিকে রেজুলেশন করে ভাঙনের মুখে ভবনটি নিলাম দেওয়ার জন্য বলা হয়েছে। ভাঙা বিদ্যালয়টির নিলাম এবং বিদ্যালয়ের জন্য নতুন জায়গা খুঁজছি, জায়গা পেলেই বিদ্যালয় স্থানান্তরের কাজ শুরু করব।' 

রাজাপুর উপজেলা চেয়ারম্যান অধ্যক্ষ মনিরউজ্জামান বলেন, ‘ভাঙন রোধ ও বেড়িবাঁধ নির্মাণের জন্য কয়েক দফায় উর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষকে লিখিতভাবে অনুরোধ জানানো হয়েছে। জরুরি ভিত্তিতে সরকারের পদক্ষেপ গ্রহণ করা উচিত।'

তিনি মাননীয় প্রধানমন্ত্রী ও পানি উন্নয়ন বোর্ডসহ সংশ্লিষ্ট সকলের আশু হস্তক্ষেপ কামনা করেছেন।

 

অলোক/টিপু

রাইজিংবিডি.কম

আরো পড়ুন  



সর্বশেষ

পাঠকপ্রিয়