ঢাকা     মঙ্গলবার   ২৩ এপ্রিল ২০২৪ ||  বৈশাখ ১০ ১৪৩১

প্রকল্পের নামে পুকুরচুরি, চেয়ারম‌্যানের দাবি ‘মিথ‌্যা’ 

অরিন্দম মাহমুদ, নওগাঁ   || রাইজিংবিডি.কম

প্রকাশিত: ১৭:০৯, ১৬ মার্চ ২০২১   আপডেট: ১৭:১১, ১৬ মার্চ ২০২১
প্রকল্পের নামে পুকুরচুরি, চেয়ারম‌্যানের দাবি ‘মিথ‌্যা’ 

নওগাঁর ধামইরহাট উপজেলার আলমপুর ইউনিয়ন পরিষদ (ইউপি) চেয়ারম্যান ফজলুর রহমানের বিরুদ্ধে প্রকল্পে  দুর্নীতির অভিযোগ উঠেছে।  প্রকল্পের বরাদ্দের অর্থ বণ্টনে স্বজনপ্রীতি, সেলাই মেশিন কেনায় দুর্নীতি, পুকুরের গাইডওয়াল দেওয়ার নামে গ্রামবাসীর কাছ থেকে চাঁদা আদায়ের অভিযোগসহ বিভিন্ন অনিয়ম ও দুর্নীতির অভিযোগ দায়ের করা হয়েছে। ধামইরহাট উপজেলা পরিষদের চেয়ারম‌্যান, উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তার কাছে এই অভিযোগ করেছেন আলমপুর ইউনিয়নের ৪ নম্বর ওয়ার্ডের ইউপি সদস্য মো. রবিউল ইসলাম।   

এই প্রসঙ্গে মো. রবিউল ইসলাম বলেন, ‘ইউপি  চেয়ারম‌্যান ২০১৯-২০ অর্থবছরের জুন মাসে হোল্ডিং ট্যাক্স আদায় করার পরও চলতি বছরের জানুয়ারি মাসে কোনো আলোচনা ছাড়াই বিধি-বহির্ভূতভাবে ট্যাক্স আদায় শুরু করেন। এখন পর্যন্ত পরিষদের আয়-ব্যয়ের কোনো হিসাব ও ইউনিয়ন পরিষদ কর্তৃক ইউপি সদস্যদের কোনো সম্মানি ভাতা দেওয় হয়নি। বিষয়টি তদন্ত করে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেওয়ার জন্য প্রশাসনের সার্বিক সহযোগিতা কামনা করে প্রশাসনের কাছে অভিযোগ পত্র দায়ের করেছি। জানুয়ারি মাসের ১০ তারিখে লিখিত অভিযোগ দায়ের করার পরও উপজেলা প্রশাসনের পক্ষ থেকে এখন পর্যন্ত আইনগত কোনো ব্যবস্থা নেওয়া হয়নি।’
 
অভিযোগে বলা হয়েছে, চেয়ারম্যান মো. ফজলুর রহমান ২০১৯-২০ অর্থবছরে এলজিএসপির মোট বরাদ্দ  ২৪ লাখ হাজার সাতশত তেরো টাকা হতে প্রত্যেক সদস্যকে নিজ ওয়ার্ডে কাজ করার জন এক লাখ টাকা বরাদ্দ দেন। এছাড়া, কোনো আলোচনা ছাড়াই স্বজনপ্রীতি করে অর্থ আত্মসাতের উদ্দেশ‌্যে চেয়ারম্যান এককভাবে প্রকল্প দাখিল করেন।

বাদীর অভিযোগে আরও উল্লেখ করা হয়েছে, ২০১৯-২০২০ অর্থবছরে হতদরিদ্র নারীদের আত্ম-কর্মসংস্থানের জন্য ৪৩টি সেলাই মেশিন সরবরাহ করা হয়। যা কেনা বাবদ মোট মূল্য ৩ লাখ পঞ্চাশ হাজার টাকা দেখানো হয়েছে। প্রতিটি শেলাই মেশিনের  মূল্য ৩ হাজার টাকা বেশি দেখানো হয়েছে। এছাড়া, বীরগ্রাম দক্ষিণিপাড়া পুকুরের জন্য ঘাট নির্মাণ দেখিয়ে অর্থ আত্মসাৎ-সহ ইউপির ঘাসি পুকুর গ্রামের একটি পুকুরের গাইড ওয়াল দেওয়ার নাম করে গ্রামবাসীর কাছ থেকে ৬০ হাজার টাকা হাতিয়ে নিয়েছেন ইউপি চেয়ারম্যান মো. ফজলুর রহমান। 

এই প্রসঙ্গে ৫ নম্বর ওয়ার্ড ইউপি সদস্য আবু মুসা বলেন, ‘চেয়ারম্যানের বিষয়টি তদন্তের সময় আরও একটি বিষয় বিশেষভাবে প্রমাণিত হয়েছে। সেটি হলো, গত ১৯/২০ অর্থবছরে জলাতঙ্ক রোগের ভ্যাকসিন কেনা বাবদ একটি প্রকল্পের যে তালিকায় দেখানো হয়েছে, তাতে  ৮১ পিস ভ্যাকসিন কেনা হয়েছে।  কিন্তু বিতরণ লিস্টে ক্রমিক নম্বর ৩০ পর্যন্ত দেওয়া থাকলেও মাত্র ৩/৪ জনের নাম উল্লেখ করা হয়েছে।  এ বিষয়ে জানতে চাইলে চেয়ারম্যান বলেছেন, এগুলো নাম লেখা হয়নি। পরে লিখবেন। বাকি ৫১ পিস ভ্যাকসিন মজুদ দেখতে চাইলে তিনি একটিরও মজুদ দেখাতে পারেননি।’

ধামইরহাট উপজেলা স্বেচ্ছাসেবক লীগের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক নাজমুল ইসলাম বলেন, ‘ফজলুর রহমান পরিষদের কোনো সদস্যদের পরামর্শ নেন না। এমনকি সমাজের গুণী ব্যক্তিদের পরামর্শও নেন না। অথচ আমরাই তাকে ভোট দিয়ে চেয়ারম্যান নির্বাচিত করেছি। তার বিরুদ্ধে একটি নয়, হাজার হাজার অভিযোগ রয়েছে।  তিনি একজন সাধারণ চাতালের কর্মচারী থেকে কিভাবে কোটিপতি হলেন, কিভাবে  ইটভাটার মালিক হলেন,এসব তদন্ত হওয়া প্রয়োজন।’

কাপড় ব্যবসায়ী ওই ইউনিয়নের ঘাসিপুকুর গ্রামের বাসিন্দা ছালেমির বলেন, ‘আমার বাড়ির পাশে পুকুরের গাইড ওয়াল দেওয়ার নাম করে আমাদের কয়েজনকের  কাছ থেকে ৬০ হাজার টাকা নিয়ে কাজ করেননি চেয়ারম‌্যান। পরে জানতে পারলাম তিনি একটি প্রজেক্ট থেকে টাকা তুলে আংশিক গাইড ওয়ালের কাজ করেছেন। আমার দেওয়া ওই টাকা ফেরত চাইলে তিনি নানান টাল বাহানা করে সময় পার করছেন।’

এসব অভিযোগ সম্পূর্ণ অস্বীকার করেছেন ফজলুর রহমান। তিনি বলেন, ‘রবিউল ইসলামের অভিযোগের কোনো ভিত্তি নেই। এ বিষয়ে এলাকায় আমার বিরুদ্ধে কোনো অভিযোগ নেই। কিছু লোক আছে, তারা আমার কাছ থেকে টাকা-পয়সা সুযোগ-সুবিধা না পাওয়ায় এমন অভিযোগ করে বেড়াচ্ছে। যা ভিত্তিহীন।’

জানতে চাইলে উপজেলা প্রকৌশলী আলী হোসেন বলেন, ‘অভিযোগের কপি পেয়ে দ্রুত তদন্ত করেছি। ঘটনাস্থলে সাধারণ মানুষের সঙ্গে কথা বলে আংশিক প্রমাণ পাওয়ায় ইউএনও’র কাছে প্রতিবেদন জমা দিয়েছি।’ 

অভিযোগের বিষয়ে উপজেলা নির্বাহী অফিসার গণপতি রায় বলেন, ‘এই বিষয়ে একটি তদন্ত প্রতিবেদন পেয়েছি। এই বিষয়ে আরও একবার তদন্ত করা হবে। এরপরই প্রয়োজনীয় আইনি ব‌্যবস্থা নেওয়া হবে।’ 

অভিযোগ দায়ের প্রসঙ্গে নওগাঁর স্থানীয় সরকার বিভাগের উপ-পরিচালক শাহ নেওয়াজ বলেন, ‘এ বিষয়ে আমাদের কাছে একটি অভিযোগ এসেছে। বিষয়টি তদন্তের জন্য উপজেলায় পাঠিয়েছি।’ অভিযোগ প্রমাণিত হলে স্থানীয় সরকার বিভাগে পাঠাবেন বলেও তিনি জানান।

/এনই/ 

সম্পর্কিত বিষয়:

আরো পড়ুন  



সর্বশেষ

পাঠকপ্রিয়