ঢাকা     বুধবার   ২৪ এপ্রিল ২০২৪ ||  বৈশাখ ১১ ১৪৩১

২৫০ বছরের বিনিরাইলের মাছের মেলা

রফিক সরকার, কালীগঞ্জ (গাজীপুর) || রাইজিংবিডি.কম

প্রকাশিত: ১১:৫১, ১৫ জানুয়ারি ২০২৩   আপডেট: ১১:৫৬, ১৫ জানুয়ারি ২০২৩
২৫০ বছরের বিনিরাইলের মাছের মেলা

গাজীপুরের কালীগঞ্জ উপজেলার বিনিরাইল গ্রাম। এই গ্রামে আড়াই'শ বছর ধরে আয়োজন হচ্ছে মাছের মেলা। শুধু ঐতিহ্যের কারণেই নয়, এই মেলা হয়ে দাঁড়িয়েছে জামাইদের জন্য প্রতিযোগিতারও। কোন জামাই কত বড় মাছ কিনলেন, সেটাই হলো আসল বিষয়। প্রতিযোগিতায় নীরব অংশগ্রহণ আছে শ্বশুরদেরও।

মূলত মাঘ মাসের প্রথম দিনে বসে ঐতিহ্যবাহী মেলাটি। মূলত এটা জামাই মেলা হলেও সবার কাছে এর পরিচিতি মাছের মেলা হিসেবে। মেলাকে ঘিরে কয়েক জেলার মানুষের সমাগম হয় এখানে। আর এ দিনটির জন্য পুরো বছর জুড়ে অপেক্ষায় থাকেন স্থানীয় বাসিন্দারা।

গাজীপুর, টাঙ্গাইল, নারায়ণগঞ্জ, নরসিংদী, ভৈরব, কিশোরগঞ্জ, ময়মনসিংহ থেকে অনেক মানুষ কেবল এই মেলা উপলক্ষেই কালীগঞ্জে এসেছেন। এবারের মেলায় প্রায় ২ শতাধিক মাছ ব্যবসায়ী বাহারি মাছের পসরা সাজিয়ে বসেছেন। মেলায় মাছ ছাড়াও আসবাবপত্র, খেলনা, মিষ্টি ইত্যাদির পসরাও সাজিয়ে বসেছে দোকানিরা। মাছের মেলায় সামুদ্রিক চিতল, বাঘাড়, আইড়, বোয়াল, কালী বাউশ, পাবদা, গুলসা, গলদা চিংড়ি, বাইম, ইলিশ, কাইকলা, রূপচাঁদা মাছের পাশাপাশি স্থান পেয়েছে হরেক রকমের দেশি মাছও।

উপজেলার জাঙ্গালিয়া ইউনিয়নের জামাই ব্রাহ্মণবাড়িয়া জেলার নবীনগর এলাকার বাসিন্দা মিঠু সূত্রধর পলাশ বলেন, ‘ঐতিহ্যবাহী মাছের মেলাটি আমার দেখার খুব ইচ্ছা ছিল। শ্বশুরবাড়ি থেকে দাওয়াত পেয়ে চলে এসেছি। মেলা ঘুরে দেখবো এবং কিছু মাছ কিনে নিয়ে যাবো। ’

বিনিরাইলের মাছের মেলা নিয়ে কথা হয় মেলা সংলগ্ন বক্তারপুর ইউনিয়নের বাটিড়া গ্রামের বাসিন্দা ভাওয়াল আশরাফুলের সঙ্গে। তিনি বলেন, ‘পৌষ সংক্রান্তিতে, অর্থাৎ মাঘ মাসের প্রথম দিনে বিনিরাইলের এই মাছের মেলায় দূর-দূরান্ত থেকে মানুষ আসেন। এটি স্থানীভাবে জামাই মেলা বা মাছ মেলা নামে পরিচিত। শৈশব থেকেই এই মেলায় আসি। এখন কর্মব্যস্ত হলেও প্রতি বছর হৃদয়ের টানে, মাটির টানে মেলায় আসি।’

কিশোরগঞ্জের ভৈরব উপজেলা থেকে আসা মাছ ব্যবসায়ী প্রনয় কুমার দাস বলেন, ‘প্রায় ২৫ বছর ধরে এই মেলায় দোকান দিচ্ছি। ইতিহাস ঐতিহ্যের কারণে বিনিরাইলে কেনার চেয়ে দেখতে আসা মানুষের ভিড় এখন বেশি। তাছাড়া স্থানীয় মানুষের সাথে ভালো সম্পর্ক তৈরি হওয়াতে প্রতি বছর এ মেলায় চলে আসি। তবে বেচা-কেনাকে মুখ্য মনে করি না।’

নরসিংদী থেকে মাছ নিয়ে আসা নয়ন কুমার দাস বলেন, ‘বিনিরাইলের মাছের মেলায় প্রচুর পরিমাণে দেশি রুই, কাতল, বোয়াল, আইড়, বাঘাইর, চিতল, কালবাউশ ও রিটা মাছের সমাগম হয়েছে। এছাড়া কার্প জাতীয় নানা মাছের আমদানি হয়েছে। এক কেজি থেকে শুরু করে ২০ কেজি পর্যন্ত ওজনের  মাছ বিক্রি হচ্ছে মেলায়।’

বিনিরাইলের মাছের মেলার আয়োজক কমিটির সভাপতি ও ইউপি সদস্য কিশোর আকন্দ জানান, ‘এই মেলাটি প্রথম অনুষ্ঠিত হতো খুবই ক্ষুদ্র পরিসরে এটি অগ্রহায়ণের ধান কাটা শেষে পৌষ-সংক্রান্তি ও নবান্ন উৎসবে আয়োজন করা হতো। প্রায় ২৫০ বছর ধরে মেলাটি আয়োজন হয়ে আসছে। সময়ের সঙ্গে সঙ্গে এ মেলাটি একটি সর্বজনীন উৎসবে রূপ নিয়েছে। ’

জামালপুর ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান মো. খাইরুল আলম বলেন, ‘ব্রিটিশ শাসনামল থেকে বিনিরাইলের মাছের মেলা অনুষ্ঠিত হচ্ছে।  এই মেলা ঐতিহ্যে রূপ নিয়েছে। এ মেলা কালীগঞ্জের সবচেয়ে বড় মাছের মেলা হিসেবে স্বীকৃত। ঐতিহ্যেবাহী এই মেলায় প্রায় ৫ থেকে ৬ লাখ টাকার মাছ কেনাবেচা  হয়।’

মাসুদ

সম্পর্কিত বিষয়:

আরো পড়ুন  



সর্বশেষ

পাঠকপ্রিয়