ঢাকা     শুক্রবার   ১৭ মে ২০২৪ ||  জ্যৈষ্ঠ ৩ ১৪৩১

ঘূর্ণিঝড় হামুন: উৎকণ্ঠায় উপকূলবাসী 

মুহাম্মদ নূরুজ্জামান, খুলনা || রাইজিংবিডি.কম

প্রকাশিত: ১২:৩৪, ২৪ অক্টোবর ২০২৩   আপডেট: ১২:৩৭, ২৪ অক্টোবর ২০২৩
ঘূর্ণিঝড় হামুন: উৎকণ্ঠায় উপকূলবাসী 

বঙ্গোপসাগরে সৃষ্ট ঘূর্ণিঝড় ‘হামুন’ আরও ঘনিভূত হয়ে পরিণত হয়েছে প্রবল ঘূর্ণিঝড়ে। এতে আতঙ্কিত হয়ে পড়েছেন  খুলনা, সাতক্ষীরা ও বাগেরহাটের উপকূলীয় এলাকার লোকজন। ঝুঁকিপূর্ণ বেড়িবাঁধ নিয়েই মূলত তাদের উৎকণ্ঠা। এই তিন জেলার প্রায় ২৮ কিলোমিটার বেড়িবাঁধ ঝুঁকিপূর্ণ।

এদিকে, কয়রা উপজেলার শাকবাড়িয়া নদী তীরবর্তী হরিহরপুরসহ আশপাশের গ্রামের অনেকেই ঘরের জিনিসপত্র গোছাতে ব্যস্ত হয়ে পড়েছেন। আবহাওয়ার সতর্ক সংকেত শুনতে পেয়েই বরাবরের মতো এবারও আগাম প্রস্তুতি নিচ্ছেন সবাই।

কয়রা উপজেলার চরামুখা গ্রামের কপোতাক্ষ নদের তীরে দুই শিশুপুত্রকে নিয়ে ঝুঁপড়ি ঘরে থাকেন রোমেছা বেগম। কয়েকটি ঝড়ে বেড়িবাঁধ ভেঙে যাওয়ায় ফসলি জমি হারিয়ে তার স্বামী হযরত আলী এখন খুলনা শহরে রিকশা চালান। বসতভিটা থাকায় সন্তানদের নিয়ে এখনও গ্রামে টিকে আছেন রোমেছা। তবে এবার ঝড় এলে সেটুকুও হারানোর শঙ্কা তার।

রোমেছা বেগম বলেন, বাড়ির সামনের জমিটুকু নদী গিলেছে ৩ বছর আগে। এবারের ঝরে ঘরবাড়ি হারানোর আশঙ্কা রয়েছে।

একই গ্রামের অবসরপ্রাপ্ত স্কুল শিক্ষক তপন মণ্ডল বলেন, ২০০৭ সালে ঘূর্ণিঝড় সিডরের পর থেকে এখন পর্যন্ত নিঃস্ব হয়ে এলাকা ছেড়েছে প্রায় ৩০০ পরিবার। জমি হারিয়ে অনেকেই বাঁধের গা-ঘেঁষে বসবাস করছে। এ মুহূর্তে বড় কোনো ঝড়-জলোচ্ছ্বাস হলে এসব পরিবার নিঃস্ব হয়ে পড়বে। 

পানি উন্নয়ন বোর্ড (পাউবো) খুলনার ডিভিশন-১ এর নির্বাহী প্রকৌশলী আবদুর রহমান জানান, তাদের অধীনে ৩৮৪ কিলোমিটার বেড়িবাঁধের মধ্যে ১ কিলোমিটার অতি ঝুঁকিপূর্ণ ও ১ দশমিক ৮ কিলোমিটার ঝুঁকিপূর্ণ অবস্থায় রয়েছে। পাউবো খুলনার ডিভিশন-২ এর অধীনে কয়রা, দাকোপ, পাইকগাছা ও বটিয়াঘাটা উপজেলায় বেড়িবাঁধ রয়েছে মোট ৬৩০ কিলোমিটার। এর মধ্যে ঝুঁকিপূর্ণ ৭ কিলোমিটার।

এই ডিভিশনের নির্বাহী প্রকৌশলী আশরাফুল আলম বলেন, কিছুদিন আগে ঝুঁকিপূর্ণ ৬ কিলোমিটার বেড়িবাঁধ সংস্কার কাজ শুরু হয়। কিছু কাজ সম্পন্ন হয়েছে। অর্থ বরাদ্দ পেলে ঝুঁকিপূর্ণ ওই ৭ কিলোমিটার বেড়িবাঁধ সংস্কার হবে।

পাউবো সাতক্ষীরার ডিভিশন-১ এর নির্বাহী প্রকৌশলী মো. সালাহউদ্দিন আহমেদ জানান, তাদের আওতাধীন ৩৮০ কিলোমিটার বেড়িবাঁধের মধ্যে ৩ দশমিক ৫ কিলোমিটার ঝুঁকিপূর্ণ।

তবে সাতক্ষীরা ডিভিশন-২ এর নির্বাহী প্রকৌশলী আশিকুর রহমান জানান, তাদের আওতাধীন ২৯৩ কিলোমিটার বেড়িবাঁধে ঝুঁকিপূর্ণ কোনো অংশ নেই। পাউবোর বাগেরহাটের নির্বাহী প্রকৌশলী মো. মাসুম বিল্লাহ জানান, জেলার ৩৩৮ কিলোমিটার বেড়িবাঁধের মধ্যে ৩ কিলোমিটার বেড়িবাঁধ ঝুঁকিপূর্ণ। এছাড়া, ১২ কিলোমিটার বাঁধ নিচু। অর্থ বরাদ্দ না থাকায় তা মেরামত করা সম্ভব হয়নি। 

জেলা প্রশাসনের প্রস্তুতি: এদিকে ঘূর্ণিঝড়ের ক্ষয়ক্ষতি এড়াতে প্রাথমিক প্রস্তুতি নিতে শুরু করেছে খুলনা জেলা প্রশাসন।

জেলা প্রশাসক খন্দকার ইয়াসির আরেফীন জানান, ৪০৯টি সাইক্লোন শেল্টার প্রস্তুত রাখা হয়েছে। সংশ্লিষ্ট এলাকার উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তাসহ অন্য কর্মকর্তা ও স্বেচ্ছাসেবকদের প্রস্তুত থাকতে বলা হয়েছে। শুকনো খাবার প্রস্তুত রয়েছে। অবস্থা বুঝেই পদক্ষেপ গ্রহণ করা হবে। 

নূরুজ্জামান/ইভা 

ঘটনাপ্রবাহ

আরো পড়ুন  



সর্বশেষ

পাঠকপ্রিয়