ঢাকা     সোমবার   ১৭ জুন ২০২৪ ||  আষাঢ় ৩ ১৪৩১

কোরবানি ঈদ

ভারতীয় গরু প্রবেশের শঙ্কায় শেরপুরের খামারিরা

শেরপুর প্রতিনিধি || রাইজিংবিডি.কম

প্রকাশিত: ১৮:৩৪, ২৪ মে ২০২৪  
ভারতীয় গরু প্রবেশের শঙ্কায় শেরপুরের খামারিরা

শেরপুরের একটি গরুর খামার

কোরবানির ঈদ যতোই ঘনিয়ে আসছে ততই ব্যস্ততা বাড়ছে শেরপুরের পশু খামারিদের। হাটে নিজের পশুটিকে আকর্ষণীয় করে ‍ক্রেতাদের সামনে উপস্থাপন করতে যত্ন নিতে কোনো ঘাটতি রাখছেন না খামারিরা। প্রতিদিন নিয়ম করে গরু-মহিষকে কাঁচা সবুজ ঘাস, ভূষি, খৈল খাইয়ে মোটাতাজা করায় ব্যস্ত সময় কাটাচ্ছেন খামারি ও সেখানে কাজ করা শ্রমিকরা।

ভারত থেকে অবৈধভাবে সীমান্ত পেরিয়ে আসা গরুর বিষয়টি ভাবাচ্ছে এবছর খামারিদের। ফলে লোকসানের আশঙ্কা চেপে বসেছে খামারিদের মনে। প্রতিবেশী দেশটি থেকে যাতে কোনোভাবেই গরু আসতে না পারে সেজন্য সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষের কাছে দাবি জানিয়েছেন তারা। এছাড়া, গো-খাদ্যের দাম বৃদ্ধির বিষয়টিও ভাবাচ্ছে তাদের।  

জেলা প্রাণীসম্পদ দপ্তর সূত্রে জানা যায়, জেলার পাঁচটি উপজেলায় ছোট বড় প্রায় ১৩ হাজার ৭৩১ জন খামারি রয়েছেন। এছাড়াও, অনেক পরিবার ব্যক্তিগতভাবে গরু-মহিষ ও ছাগল পালনের সঙ্গে জড়িত। কোরবানির জন্য শেরপুর জেলায় ৫১ হাজার ২২৫টি পশুর চাহিদা থাকলেও প্রস্তুত হয়েছে ৮৩ হাজার ৮০২টি। যা চাহিদার তুলনায় প্রায় ৩২ হাজার বেশি। 

সূত্র জানায়, কোরবানি ঈদের জন্য শেরপুর জেলায় ৪০ হাজার ২৭০টি ষাঁড়, ২ হাজার ৮৬৫টি বলদ, ১৩ হাজার ৭৯৪টি গাভি, ১ হাজার ৩৮৬টি মহিষ, ২২ হাজার ৩৯টি ছাগল, ৩ হাজার ৪৪৮টি ভেড়া প্রস্তুত করা হয়েছে। এসব পশু স্থানীয় চাহিদা মিটিয়ে জেলার বাইরের হাট বাজারগুলোতেও পাঠানো হবে।

সরেজমিনে জেলার কয়েকটি খামারে গিয়ে দেখা যায়, কোরবানির জন্য প্রস্তুত করা পশু আলাদা রেখে যত্ন নিচ্ছেন খামারিরা। নিয়মিত ডাক্তারি পরীক্ষাও করানো হচ্ছে গরু-মহিষ ও ছাগলের। উপজেলা প্রাণিসম্পদ অফিস থেকেও নেওয়া হচ্ছে নিয়মিত খোঁজখবর।

শেরপুর সদর উপজেলার একটি পশুর খামারের মালিক পাপ্পু বলেন, আমরা যত্নের সঙ্গে গরু লালন পালন করি। নিজেদের খেতের কাঁচা ঘাস খাওয়ানো হয় গরুগুলোকে। এ বছর যদি ভারতীয় গরু কোনোভাবে বাজারে প্রবেশ করে, তাহলে আমাদের পরিশ্রম বৃথা যাবে। প্রশাসনের কাছে আমাদের দাবি, খামারিদের রক্ষা করতে অবৈধ গরু প্রবেশ বন্ধে তারা যেন এখন থেকেই কাজ শুরু করেন।

নালিতাবাড়ি উপজেলার খামারি বিল্লাল হোসেন বলেন, কোরবানি উপলক্ষে আমার খামারে ২০টি গরু প্রস্তুত করা হয়েছে। এসব পশুর নিয়মিত যত্ন নেওয়া হচ্ছে। কোনো পশু যাতে রোগে আক্রান্ত না হয়, সেজন্য গরুগুলোকে পরিষ্কার-পরিচ্ছন্ন রাখা হচ্ছে। গো-খাদ্যের দাম বেশি হওয়ায় গরুর পেছনে বেশি খরচ হয়েছে।  ভারতীয় গরু প্রবেশ করলে আমাদের লোকসান হবে।

শেরপুর জেলা প্রাণিসম্পদ কর্মকর্তা ডা. রেজওয়ানুল হক ভূঁইয়া বলেন, কোরবানি পশুকে অসদুপায়ে মোটাতাজা না করার জন্য আমরা বিভিন্ন এলাকায় সচেতনতামূলক ক্যাম্পেইন করেছি। তাছাড়া, ভেটেরিনারি ফার্মেসিতে নিম্নমানের ওষুধ সামগ্রী না রাখার বিষয়টি তাদারকি করা হচ্ছে। কয়েক দফায় গো-খাদ্যের দাম বাড়ায় উৎপাদন খরচ কিছুটা বেড়েছে খামারিদের। 

ভারতীয় গরু প্রবেশের বিষয়ে তিনি বলেন, আমরা ইতোমধ্যে ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তাদের বিষয়টি অবহিত করেছি। ভারতীয় গরু প্রবেশ ঠেকাতে না পারলে স্থানীয় খামারিরা ক্ষতিগ্রস্ত হবেন।

শেরপুরের পুলিশ সুপার মো. আকরামুল হোসেন বলেন, সীমান্ত আমার এড়িয়া নয়। বর্ডার অন্য সংস্থার আন্ডারে। বর্ডার ফাঁকি দিয়ে আমার এলাকায় অবৈধভাবে গরু প্রবেশ করলে আমি অবশ্যই ব্যবস্থা নেবো। এ ব্যাপারে কাউকে ছাড় দেওয়া হবে না।

তারিকুল/মাসুদ

সম্পর্কিত বিষয়:

আরো পড়ুন  



সর্বশেষ

পাঠকপ্রিয়