ঢাকা     সোমবার   ১৫ ডিসেম্বর ২০২৫ ||  অগ্রহায়ণ ৩০ ১৪৩২

Risingbd Online Bangla News Portal

চাঁদাবাজির অভিযোগ মিথ্যা বললেন যুব-ছাত্রদলের নেতারা

রাজশাহী প্রতিনিধি || রাইজিংবিডি.কম

প্রকাশিত: ১৭:১১, ২৬ জুলাই ২০২৫  
চাঁদাবাজির অভিযোগ মিথ্যা বললেন যুব-ছাত্রদলের নেতারা

চাঁদা দাবির অভিযোগে করা মামলার প্রতিবাদে শনিবার সংবাদ সম্মেলন করেন অভিযুক্তরা

রাজশাহীতে চাঁদা দাবির মামলা হওয়ার পর সংবাদ সম্মেলন করে অভিযোগ অস্বীকার করেছেন আসামিরা।

শনিবার (২৮ জুলাই) সকাল সাড়ে ১১টার দিকে ‘ভুক্তভোগী বিএনপি, অঙ্গ ও সহযোগী সংগঠনের নেতৃবৃন্দ’-এর ব্যানারে রাজশাহী জেলা ও নগর বিএনপির কার্যালয়ে সংবাদ সম্মেলনের আয়োজন করেন তারা।

আরো পড়ুন:

সংবাদ সম্মেলনে মামলার আসামি রাজশাহী জেলা যুবদলের সাবেক সভাপতি মোজাদ্দেদ জামানি সুমন, বোয়ালিয়া থানা (পশ্চিম) বিএনপির সভাপতি শামসুল ইসলাম মিলু ও রাজশাহী সরকারি সিটি কলেজ ছাত্রদলের সদস্য সচিব এমদাদুল হক লিমনসহ অন্য নেতাকর্মীরা উপস্থিত ছিলেন।

গত বুধবার রাতে ৩৬ জনের নাম উল্লেখসহ মোট ৫৬ জনের বিরুদ্ধে ২ লাখ টাকা চাঁদা দাবির অভিযোগে মামলা হয়। মামলাটি করেন মোস্তাফিজুর রহমান নামের এক ডেভেলপার ব্যবসায়ী।

মোস্তাফিজুর রহমানের অভিযোগ, ২ লাখ টাকা চাঁদার জন্য আসামিরা চাপ দিচ্ছিলেন। তারা তাকে অপহরণ করে নিয়ে গিয়ে নির্যাতন করেছে। থানায় নিয়ে চাপ দিয়ে মাত্র ২৭ লাখ টাকার বিনিময়ে শহরের প্রাণকেন্দ্রে একটি ভবনের ১৩০০ বর্গফুটের একটি ফ্ল্যাট যুবদল নেতা সুমনের নামে লিখে দিতে বায়নানামার চুক্তিপত্রে সই দিতে বাধ্য করা হয়েছে।

শহরের প্রাণকেন্দ্র ঘোড়ামারা এলাকায় ১৩০০ বর্গফুটের ফ্ল্যাটের বর্তমান বাজারমূল্য অর্ধকোটি টাকারও বেশি। পাওনা ২৭ লাখ টাকায় ওই ফ্ল্যাট নিতে সুমন বায়নানামায় স্বাক্ষর দিতে বাধ্য করেছেন বলে মোস্তাফিজুর রহমান দাবি করছেন।

সংবাদ সম্মেলনে যুবদল নেতা সুমন এই অভিযোগ অস্বীকার করেছেন। তিনি বলেছেন, ‍“উভয়ের সম্মতিতেই ডিড হয়েছে।” দুই লাখ টাকা চাঁদার জন্য অপহরণের অভিযোগও অস্বীকার করেন তিনি।

সংবাদ সম্মেলনে লিখিত বক্তব্যে বলা হয়, মোস্তাফিজুর রহমান একজন প্রতারক। তিনি রাজশাহী সিটি করপোরেশনের সাবেক মেয়র এ.এইচ.এম খায়রুজ্জামান লিটন ও তার স্ত্রী রেনীর ঘনিষ্ঠজন। কার্যক্রম নিষিদ্ধ আওয়ামী লীগের দীর্ঘদিনের আর্থিক পৃষ্ঠপোষক। মোস্তাফিজুর রহমান আমিনুল ইসলাম নামে এক ব্যক্তির কাছ থেকে ২০২৩ সালে ফ্ল্যাট বুকিংয়ের ২৭ লাখ টাকা নেন, কিন্তু দীর্ঘ দিনেও তিনি ফ্ল্যাট দেননি।

সুমন জানান, সেই টাকা ফেরত নেওয়ার জন্য তারা মোস্তাফিজুরের সঙ্গে যোগাযোগ করেছিলেন। এ বছরের শুরু থেকে জুন মাস পর্যন্ত কিস্তিতে টাকা ফেরত দেওয়ার কথা থাকলেও বিষয়টি মোস্তাফিজুর রহমান সুকৌশলে এড়িয়ে যেতে থাকেন। তাই গত ৩০ জুন বোয়ালিয়া থানায় সব পক্ষের উপস্থিতিতে একটি আপসনামা ডিড স্ট্যাম্পের মাধ্যমে স্বাক্ষরিত হয়। পুলিশি হস্তক্ষেপ ও সামাজিক চাপের মুখে মোস্তাফিজুর রহমান নিজেই একটি আপসনামা সম্পাদনে সম্মত হন।

তিনি বলেন, “যেহেতু, আমারও একটি ফ্ল্যাট কেনার প্রয়োজন ছিল, তাই পারিবারিকভাবে সিদ্ধান্ত নিয়ে আমি আমিনুল ইসলামের ফ্ল্যাটটি তার পক্ষে হয়ে কেনার সিদ্ধান্ত নেই। মোস্তাফিজুর রহমান ফ্ল্যাট হস্তান্তরের কোনো পদক্ষেপ না নিয়ে আমার ও আমার রাজনৈতিক অনেক সহকর্মীদের নাম উল্লেখ করে মিথ্যা মামলাটি দায়ের করেন। এটি সাজানো মামলা।”

সুমন দাবি করেন, ‘মোস্তাফিজুর রহমান নিজেই স্বীকার করেছেন যে, মামলাটি তিনি প্রশাসনের ‘প্রেসক্রিপশন’ অনুযায়ী দায়ের করেছেন। মহানগর বিএনপির সিনিয়র যুগ্ম আহ্বায়ক নজরুল হুদা তাকে ফোন করে এই মামলার বিষয়ে জানতে চান। এই মামলা তার ইচ্ছার বিরুদ্ধে এবং প্রশাসনের হস্তক্ষেপে ও প্রেসক্রিপশনে তিনি করতে বাধ্য হয়েছেন বলে নজরুল হুদার কাছে স্বীকার করেন মোস্তাফিজুর রহমান। এটি কেবল একটি ব্যক্তির প্রতারণা নয়, এটি প্রশাসন-সমর্থিত রাজনৈতিক প্রতিহিংসার ষড়যন্ত্র বলে এখন মনে হচ্ছে।”

প্রশাসনের ‘প্রেসক্রিপশন’ অনুযায়ী মামলা রেকর্ড করার অভিযোগ অস্বীকার করেন নগরের বোয়ালিয়া থানার ওসি মোস্তাক আহম্মেদ। তিনি বলেন, “আমরা কারও প্রেসক্রিপশন অনুযায়ী মামলা রেকর্ড করি না। বাদী যাদের বিরুদ্ধে মামলা করেন, সেটিই রেকর্ড করা হয়।”

মামলার আসামিদের সংবাদ সম্মেলনের বিষয়ে তিনি বলেন, “এটা আমার জানা নেই। কিছু ক্ষেত্রে মামলার পরই আসামি গ্রেপ্তার করা হয়, যেগুলোর ক্ষেত্রে প্রমাণ হাতেনাতেই থাকে। আর কিছু ক্ষেত্রে তদন্ত একটু করতে হয়। এই মামলাটা তদন্ত পর্যায়ে আছে। তদন্ত শেষে ব্যবস্থা নেওয়া হবে।”

ঢাকা/কেয়া/মাসুদ

সর্বশেষ

পাঠকপ্রিয়