চাঁদপুরে খসা ছাদের নিচে কোমল কুড়িদের পাঠদান
চাঁদপুর প্রতিনিধি || রাইজিংবিডি.কম
৩৪ নম্বর ভানুরপাড় সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়
ছাদের পোলেস্তারা কখনো খসে পড়ছে ফ্লোরে, কখনো শিক্ষার্থীদের মাথার ওপর। যেকোনো সময় ঘটতে পারে বড় ধরনের দুর্ঘটনা। এ শঙ্কা নিয়েই ক্লাস করছে অল্প বয়সি কোমল কুড়ির মতো শিক্ষার্থীরা।
এমন বেহাল দশা চাঁদপুরের মতলব দক্ষিণের খাদেরগাঁও ইউনিয়নের ৩৪ নম্বর ভানুরপাড় সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের। একাধিকবার আবেদনের পরও কোনো ধরনের উদ্যোগ না নেওয়ায় চরম হতাশায় বছরের পর বছর জীবনের ঝুঁকি নিয়ে বিদ্যালয়ে পাঠদান চালাচ্ছেন শিক্ষকরা।
সরেজমিনে গিয়ে জানা যায়, বিদ্যালয়ের ভবনটা পুরনো। বিভিন্ন জায়গায় ফাটল ধরেছে। আবার কিছু কিছু জায়গা খসে পড়ছে। প্রায়ই পাঠদানের সময় পলেস্তারাসহ ছাদের ঢালাই খসে পড়ে। প্রতিদিনই আতঙ্কে থাকে শিক্ষার্থীরা। জানালা, দরজাও ভেঙে গেছে প্রায়। স্কুল মাঠে পানি যেন মাছ চাষের উপযোগী।
পঞ্চম শ্রেণির শিক্ষার্থী মারজান, ইসরাত, তানহাসহ অন্যরা জানায়, তাদের বিদ্যালয়ের বিভিন্ন শ্রেণির অনেক শিক্ষার্থী আগেও ব্যথা পেয়েছে। ক্লাসের দরজা, জানালা, দেয়ালসহ বিভিন্ন অংশ ভাঙা এবং বেশকিছু জায়গায় ফাটল রয়েছে। স্কুলে একটা নতুন ভবন নির্মাণ হলে তারা নির্ভয়ে ক্লাস করতে পারতো। এখন ক্লাসে আসলেই ভয়ে ভয়ে থাকতে হয়, তাদের মাথায় যেকোনো সময় ভেঙে পড়তে পারে ছাদ।
বাংলা শিক্ষিকা হোসনেয়ারা বলেন, “আমরা যখন শ্রেণিকক্ষে পাঠদান করি, তখন আমরাই থাকি আতঙ্কে। কোন সময় জানি ছাদ ভেঙে পড়ে। বিদ্যালয়টি জরাজীর্ণ হওয়ায় শিক্ষার্থীরা আসতে চায় না। অভিভাবকরা তাদের সন্তানদের বিদ্যালয়ে পাঠিয়ে দুঃশ্চিন্তায় থাকেন। আমরাও বিদ্যালয়ে নিরাপত্তাহীনতার মধ্যে থাকি। সরকারের কাছে দাবি, আমাদের বিদ্যালয়ে একটি নতুন ভবন নির্মাণ করা হোক।”
অভিভাবক আমেনা বেগম, মহসিন হোসেন বলেন, বাচ্চারা ভয়ে যেতে চায় না স্কুলে। স্কুলের ছাদ ভেঙে প্রায় ঘটছে দুর্ঘটনা। স্কুলের সবগুলো ক্লাসরুমই ঝুঁকিপূর্ণ। বাচ্চাদের স্কুলে পাঠিয়ে আতঙ্কে থাকতে হয়। বিদ্যালয়টি দ্রুত মেরামত করার জন্য সংশ্লিষ্ট কর্মপক্ষের কাছে জোরালো দাবি জানাচ্ছি।
বিদ্যালয়ের ভারপ্রাপ্ত প্রধান শিক্ষক মনোয়ারা বেগম বলেন, “দীর্ঘদিন ধরে বিদ্যালয়টি ঝুঁকিপূর্ণ হয়ে আছে। পাঠদানের কোনো পরিবেশ নেই। দেয়ালের বিভিন্ন জায়গায় ফাটল ধরেছে, ভেঙে পড়ছে দেয়াল। বৃষ্টি হলে পানি পড়ে শিক্ষার্থীদের উপর। স্কুলের মাঠ ভরাট না থাকায় সামান্য বৃষ্টিতেই মাঠে পানি জমে যায়। স্কুলে ক্লাস চালানোর পরিবেশ নেই। ঝুঁকিপূর্ণ স্কুলে অভিভাবকরা তাদের বাচ্চাদের পাঠাতে চায় না।”
তিনি বলেন, “দরজা-জানালাগুলোও ভেঙে গেছে। তারপরও ঠিকমতো পাঠদান চালিয়ে যেতে সর্বোচ্চ চেষ্টা করে যাচ্ছি। বিদ্যালয়টি সংস্কার ও নতুন ভবন নির্মাণ করার জন্য সংশ্লিষ্ট অফিসে জানানো হয়েছে। দ্রুত ভবন মেরামত ও নতুন একটি ভবন নির্মাণ করে দেওয়ার জন্য সরকারের দৃষ্টি আকর্ষণ করছি।”
এ বিষয়ে চাঁদপুরের মতলব দক্ষিণ উপজেলা সহকারী প্রাথমিক শিক্ষা অফিসার মজিবুর রহমান বলেন, “ভানুরপাড় সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়সহ বেশ কয়েকটি বিদ্যালয়ের ভবনের জন্য আবেদন করা আছে। বরাদ্ধ পেলেই ভবন নির্মাণের কাজ শুরু হবে।”
ঢাকা/অমরেশ/মেহেদী