ঢাকা     শুক্রবার   ২৬ এপ্রিল ২০২৪ ||  বৈশাখ ১৩ ১৪৩১

মানসিক সুস্থতা কেন প্রয়োজন?

সিয়াম আহমেদ || রাইজিংবিডি.কম

প্রকাশিত: ০৪:১৯, ২০ অক্টোবর ২০১৯   আপডেট: ০৫:২২, ৩১ আগস্ট ২০২০
মানসিক সুস্থতা কেন প্রয়োজন?

আমরা সবাই কম বেশি আমাদের শরীরের সুস্থতার ব্যাপারে সচেতন। সামান্য জ্বর কিংবা সর্দিতেই ডাক্তারের কাছে ছুটোছুটি করি। নাপা, প্যারাসিটামল, অ‌্যান্টিবায়োটিক কতো রকম ঔষধ খাই। আর ডায়াবেটিস বা উচ্চ রক্তচাপ হলে তো কথাই নেই। পাড়লে নিজের বাসাতেই একটা ছোটখাটো ফার্মেসি দিয়ে দেই।

শারীরিক সুস্থতার উপসর্গগুলো আমাদের প্রাত্যহিক জীবনে অধিকতর স্পষ্টভাবে দৃশ্যমান হওয়ায় এ ব্যাপারে আমাদের একটি সুস্পষ্ট ধারণা রয়েছে। আমরা আমাদের শারীরিক সুস্থতার ব্যাপারে যতটা যত্নবান, আমাদের মানসিক সুস্থতার ব্যাপারে ততটাই অমনোযোগী। কারণ মানসিক রোগের উপসর্গগুলো অনেক ক্ষেত্রেই আমাদের বোধগম্য নয়। অথবা সম্পূর্ণ ব্যাপারটিকে আমরা ভুলভাবে ব্যাখ্যা করে থাকি। কেননা অধিকাংশ মানুষই মানসিক স্বাস্থ্যের ব্যাপারে অজ্ঞ।

আমাদের সকলেই কোনো না কোনো সময়ে সাময়িকভাবে বিপর্যয়ের সম্মুখীন হই। আমাদের ব্যক্তিগত বা কর্মজীবনের চ্যালেঞ্জগুলো মোকাবেলা করতে গিয়ে অনেক সময়ই আমরা মানসিক অবসাদগ্রস্ততা বা বিষন্নতা অনুভব করি। এক পর্যায়ে যখন আমাদের প্রাত্যহিক জীবনের স্বাভাবিক কাজকর্মগুলো বাধাগ্রস্ত হয়, তখনই আমাদের মানসিক অসুস্থতার প্রশ্নটি আসে।

বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা (WHO) এর প্রতিবেদন অনুসারে সুস্থতা হলো-মানুষের শারীরিক, মানসিক ও সামাজিক এই তিনটি অবস্থার প্রেক্ষাপটে একটি ভারসাম্যপূর্ণ ও স্বাস্থ‌্যকর সমন্বয়।

সহজ কথায়, সুস্থতা হলো শারীরিক বিভিন্ন রোগের পাশাপাশি হতাশা, বিষন্নতা, অবসাদ, মানসিক চাপ ইত্যাদি মানসিক সমস্যা থেকে মনকে মুক্ত রেখে সমাজে কোনো প্রকার সমস্যার সম্মুখীন না হয়ে বসবাস করতে পারা।

অনেক সময় মানসিক অসুস্থতা শারীরিক সুস্থতার উপর প্রত্যক্ষভাবে প্রভাব ফেলে। ফলে মনের পাশাপাশি আমাদের শরীরও অসুস্থ হয়ে পড়ে। এক্ষেত্রে অসুখটা যে শারীরিক না মানসিক তা অনেক সময়ই আমরা বুঝতে পারি না।

মানসিক সুস্থতা হলো এমন একটি ইতিবাচক মানসিক অবস্থা, যে অবস্থায় একজন মানুষ তার নিজের সক্ষমতা বুঝতে পারেন, জীবনের স্বাভাবিক চাপসমূহের সাথে নিজেকে মানিয়ে নিতে পারেন এবং উৎপাদনশীল কর্মের মাধ্যমে নিজ সম্প্রদায়ে অবদান রাখতে পারেন। মানসিক সুস্থতার নিমিত্তে আমরা আমাদের জীবনের নানাবিধ চ্যালেঞ্জ মোকাবেলা করার সক্ষমতা অর্জন করি।

মানসিক সমস্যার রূপগুলো বিভিন্নরকম হতে পারে। যেমন- অবসাদগ্রস্ততা, হতাশা, বিষন্নতা,  উদ্বিগ্নতা ইত্যাদি। এছাড়া স্কিৎজোফ্রেনিয়া, বাইপোলারের মতো সমস্যাও উল্লেখযোগ্য।

মানসিক সমস্যাগুলোর উপসর্গসমূহ চিহ্নিত করে উপযুক্ত চিকিৎসা ও কাউন্সিলিংয়ের মাধ্যমে রোগ থেকে মুক্তি পাওয়া সম্ভব। প্রয়োজনে মানসিক রোগগুলোর চিকিৎসার জন্য সাইকোথেরাপি এবং মেডিটেশনের সাহায্য নেয়া যেতে পারে।

গুরুত্বপূর্ণ মানসিক সমস্যাগুলো নিরাময়ের জন্য বিশেষজ্ঞদের সাহায্য নেয়া অত্যন্ত জরুরি। সাধারণত মানসিক সমস্যা দেখা দিলে তার সঠিক চিকিৎসা করানো হয় না। মানসিক রোগের উপসর্গগুলোকে অবহেলা করা হয়। এছাড়া অধিকাংশ সময় সমস্যাগুলোকে ভুলভাবে ব্যাখ্যা করা হয়। বিশেষ করে বাংলাদেশের গ্রামাঞ্চলগুলোতে মানসিক সুস্থতার ব্যাপারে সচেতনতা নেই বললেই চলে। ফলে যখনই কেউ মানসিকভাবে অসুস্থ হয়ে পড়েন, তখন সেটাকে জ্বীন-ভূতের আছর, জাদুটোনা ইত্যাদি কুসংস্কারমূলক অপব্যাখ্যা দেয়া হয়। রোগীকে তার রোগের সঠিক চিকিৎসা না দিয়ে বিভিন্ন কথিত কবিরাজের ঝাড়ফুঁক জাতীয় কুসংস্কারের আশ্রয় নেয়া হয়। ফলে রোগীর মানসিক অবস্থা আরো বিগড়ে যায়। একপর্যায়ে রোগীর স্বাভাবিক জীবনযাপন মারাত্মকভাবে ব্যাহত হয়।

বাংলাদেশে রাজধানী ও জেলা শহর পর্যায়ের কয়েকটি সরকারি মানসিক হাসপাতালসহ বেশ কিছু বেসরকারি এনজিও প্রতিষ্ঠান মানসিক স্বাস্থ্য নিয়ে কাজ করছে। এছাড়া জাতীয় মানসিক স্বাস্থ্য ইনস্টিটিউট দেশব্যাপী মানসিক স্বাস্থ্য বিষয়ক সচেতনা সৃষ্টির লক্ষ‌্যে কাজ করে যাচ্ছে।

কাজেই যখন আমরা অথবা আমাদের পরিবারের কোনো সদস্য, বন্ধুবান্ধব বা পরিচিত কেউ মানসিকভাবে অসুস্থ বা বিপর্যস্ত হয়ে পড়বে, তখন কোনো প্রকার কুসংস্কার বা অবহেলার বশবর্তী না হয়ে সঠিক চিকিৎসা সেবার ব্যবস্থা করতে হবে।

 

লেখক: শিক্ষার্থী, আরবী বিভাগ, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়।


ঢাবি/সিয়াম আহমেদ/হাকিম মাহি

রাইজিংবিডি.কম

আরো পড়ুন  



সর্বশেষ

পাঠকপ্রিয়