দরজায় কড়া নাড়ছে শীত
আসমাউল মুত্তাকিন || রাইজিংবিডি.কম
হেমন্তের সকাল। আকাশে ছড়িয়ে আছে হালকা কুয়াশা। হিমেল হাওয়ায় মাতাল হওয়া আবেশে স্তব্ধ চরাচর। কুয়াশার চাদরে মুড়ে যাচ্ছে আমাদের চারপাশ। কমে যাচ্ছে আমাদের দৃষ্টিসীমা। বিভিন্ন ফসল ও ঘাসের ডগায় জমে আছে মুক্তার দানার মতো চকচকে শিশির বিন্দু।
ফসলের মাঠে উঁকি দিচ্ছে সদ্য প্রস্ফুটিত নতুন বীজের নিষ্পাপ দুটো পাতা। তার মাথায় শিশির বিন্দু টুপটাপ শব্দ করে মৃদ শীতলতা ছড়িয়ে দিচ্ছে চারদিকে। গাছের মাথার উপরে জমাটবদ্ধ মেঘের আদলে প্রকৃতিকে শীতের হাতছানি দিচ্ছে হিমেল বাতাস। সময় যত বাড়ছে কুয়াশায় আবৃত ঘরের জানালা দিয়ে উঁকি মারছে মিষ্টি রোদ্দুর।
এদিকে ইট-পাথরের দেয়াল ভেদ করে শীত আসতে একটু দেরি লাগে শহরে। কিন্তু হেমন্তের এই সময়ে গ্রামীণ জনপদে টের পাওয়া যাচ্ছে শীতের আগমন। শীতকাল আসন্ন। দরজায় কড়া নাড়ছে। আর এমন সময়কে স্বাগত জানিয়ে আমাদের জাতীয় কবি কাজী নজরুল ইসলাম তার কবিতায় শীতের বার্তা এভাবে দিয়েছেন –
‘হেমন্তের ঐ শিশির নাওয়া হিমেল হাওয়া
সেই নাচনে উঠল মেতে।
টইটুম্বুর ঝিলের জলে
ফাঁটা রোদের মানিক জ্বলে
চন্দ্র ঘুমায় গগন তলে
সাদা মেঘের আঁচল পেতে।’
সকালের সোনা রঙা রোদ বাড়িয়ে দিয়েছে মাঠের-পথের উজ্জ্বলতা। গ্রামের মাঠে যতদূর চোখ যাচ্ছে শুধু সবুজ ধান। গ্রামের ঘরে ঘরে এখন চলছে নতুন ধানের উৎসব। খেজুর রস পেতে গাছিরা যার যার এলাকায় খেজুর গাছ ঝুড়ছে। গত বছরের হাঁড়ি ধুয়ে মুছে প্রস্তুত করতে এখন মহা ব্যস্ত সবাই। নানা রকম পিঠাপুলির আয়োজন চলছে কৃষকের ঘরে ঘরে।
কুয়াশাযুক্ত হিমশীতল সকালে পিঠা খেতে কার না ভালো লাগে। গ্রামে কি শহরে, সবখানে এখন চলছে পিঠা উৎসব। নতুন ধানের চালের গুঁড়ি আর খেজুর গুড় দিয়ে বানানো পিঠা ছোট-বড় সবার পছন্দ। খেজুরের গুড় আর নতুন চাল দিয়ে তৈরি হয় মজাদার পিঠাপুলি।
এগুলোর মধ্যে যেমন; ভাঁপা পিঠা, ছাঁচ পিঠা, ছিটকা পিঠা, চাঁদ পাকন পিঠা, ছিট পিঠা, পুলি পিঠা, পাতা পিঠা, পাটিসাপটা, পাকান পিঠা ইত্যাদি। সে জন্যেই পিঠাকে ঘিরে ‘পল্লী স্মৃতি’ কবিতায় বাংলাদেশের বিখ্যাত কবি বেগম সুফিয়া কামাল লিখেছেন,
‘পৌষ পার্বণে পিঠা খেতে বসি খুশীতে বিষম খেয়ে,
আরও উল্লাস বাড়িয়াছে মনে মায়ের বকুনি পেয়ে।’
এত গেল পিঠাপুলির কথা। এবার আসি শাকসবজির দিকে। শাকসবজির কথা বলতে গেলে ফুলকপি, বাঁধাকপি, ওলকপি, লালশাক, পালংশাক, মুলা, শালগম, শিম, টমেটো, পেঁয়াজ পাতা, লাউ, ব্রোকলি, মটরশুঁটি, গাজর, ধনিয়াপাতা উল্লেখযোগ্য।
নানা ধরনের বৈচিত্র্যতায় আর নতুনত্বে হেমন্তের শেষ ভাগ অন্য ঋতু থেকে আলাদা। ফ্যাশন থেকে শুরু করে নিত্যদিনের খাবার তালিকাতেও এর উপস্থিতি চোখে পড়ে। এ সময়ে খাবার তালিকাতে আসে বেশ পরিবর্তন। কেবল শাকসবজি নয় ফলের দিক থেকে হেমন্তের শেষ সময়ে দেখা মেলে নানা ধরনের মুখরোচক ফলের। এ সময়ে অন্য সময়ের তুলনায় ফলের সমারোহ থাকে অনেকাংশে বেশি।
এসময় দেখা মেলে জলপাই, আমলকি, সফেদা, কমলালেবু, ডালিমের। এ ঋতুর বিশেষ কিছু ফল হলো কামরাঙা, চালতা, নারিকেল। প্রকৃতির এই পরিবর্তন মুগ্ধ করে মানুষকে।
হেমন্তে শিউলি, কামিনী, গন্ধরাজ, মল্লিকা, ছাতিম, দেবকাঞ্চন, হিমঝুরি, রাজঅশোক ইত্যাদি নানা ধরনের ফুল ফোটে। হেমন্তের হালকা শীতের সকালে শিউলির সৌরভ বাঙালির প্রাণে আনে উৎসবের আমেজ।
কিন্তু খেটে খাওয়া সাধারণ মানুষের কাছে এই শীত বেশ কষ্টের। কারণ আমাদের দেশের অধিকাংশ মানুষ দরিদ্র। যারা খেটে খায়, যাদের সাম্যর্থ নেই শীত নিবারণে ভালো বস্ত্র কেনার। ফলে এই শীত তাদের কাছে খুবই কষ্টের। দেশের উত্তরপ্রান্তে জমতে শুরু করেছে কুয়াশা সাথে প্রচণ্ডশীত।
ঋতু হিসেবে শীতকাল শুরু না হলেও রাতের শেষভাগে এখন পাওয়া যাচ্ছে শীতের হিমেল অনুভূতি। হেমন্ত প্রায় শেষ। শীত আসছে ।আপনি প্রস্তুত তো...?
লেখক: শিক্ষার্থী, জার্নালিজম অ্যান্ড মিডিয়া স্টাডিজ বিভাগ, মানারাত ইন্টারন্যাশনাল ইউনিভার্সিটি।
মানারাত/আসমাউল মুত্তাকিন/হাকিম মাহি
রাইজিংবিডি.কম
আরো পড়ুন