ঢাকা     সোমবার   ১৫ ডিসেম্বর ২০২৫ ||  অগ্রহায়ণ ৩০ ১৪৩২

Risingbd Online Bangla News Portal

‘আমার বাবা সেরা বাবা’

আয়েশা সিদ্দিকা || রাইজিংবিডি.কম

প্রকাশিত: ১২:৩০, ২১ জুন ২০২০   আপডেট: ১০:৩৯, ২৫ আগস্ট ২০২০
‘আমার বাবা সেরা বাবা’

বাবা। দুই অক্ষরের একটি শব্দ। ছোট্ট হলেও কিন্তু এর মাহাত্ম্য বিশাল। এই দুই শব্দের মাঝেই লুকিয়ে আছে জীবনের যত রঙ, যত ভালো লাগা। বাবা শুধু একটি সম্পর্কের নাম নয়, কিংবা তিনি শুধু একজন ব্যক্তি নন। আমার কাছে বাবা হলো শান্তির পূর্ণ ঠিকানা, আস্থার আরেক নাম।

‘বাবা’ নামটা একবার উচ্চারিত হলে সবার মনেই একটা শ্রদ্ধা ভাব চলে আসে। ভালোবাসায় বুকটা ভরে যায়। প্রতিটি সন্তানের কাছেই তার বাবা ‘সুপার হিরো’ যিনি নিমিষেই সব সমস্যার সমাধান করে ফেলেন। আমার বাবাও আমার কাছে বিশ্বের সেরা বাবা, ভালো বাবা।

ছোটবেলায় শিশুদের হাতেখড়ি হয় মায়ের মাধ্যমে। মায়েরা তাদের সন্তানদের পরম মমতায় বর্ণমালার প্রতিটি অক্ষর শেখান। কিন্তু আমার ক্ষেত্রে ঘটেছে এর ব্যতিক্রম। আর এখানেই বাবার গুরুত্বটা আমার জীবনে অন্য সবার চেয়ে একটু বেশিই। কারণ মায়ের অনেক ছোটবেলায় বিয়ে হওয়ায় তিনি পড়াশুনা করতে পারেননি। ফলে আমার শিক্ষাজীবনের সূচনা বাবার হাত ধরেই।

মধ্যবিত্ত পরিবারে জন্ম। আর বাবা ছিলেন একজন কৃষক। তিনিও বেশি দূর পড়াশুনা করতে পারেননি। কেবল অষ্টম শ্রেণি পর্যন্ত পড়েছিলেন। কারণ দাদার মৃত্যুর পর সংসারের হাল তাকেই ধরতে হয়। তবে তার জীবনের একটাই লক্ষ্য ছিল, নিজে পারেননি তো কী হয়েছে, সন্তানের ঠিকই শিক্ষিত করবেন। আর এ কাজটা সফলভাবেই করেছেন তিনি।

আমার বয়স তখন ৪/৫ হবে। সে সময়, চাচাতো ভাই-বোনসহ আমরা তিনজন বাবার কাছে পড়তাম। প্রতিদিন সকালে বাবা একটা পাটকাঠি নিয়ে আমাদের পড়াতেন। আর পড়া বলতে না পারলে সবচেয়ে বেশি মার খেতাম আমি। কেন জানি তখন অন্যরা পড়া না পারলেও আমি মার খেতাম বেশি। এজন্য ভয়ে মাঝেমধ্যেই নানু বাড়ি চলে যেতাম। যাহোক, মার খাওয়ার ফল অবশ্য পরে পেয়েছিলাম। ফলস্বরূপ, আমাদের এলাকায় আমিই প্রথম ক্লাস ফাইভে বৃত্তি পেয়েছিলাম।

এখানেই শেষ নয়, আমার স্কুলজীবনেও কম কষ্ট করেননি বাবা। স্কুল শেষ করে কোচিং চলতো রাত ১০টা পর্যন্ত। তখন গ্রামে টেলিভিশন তেমন একটা সহজলভ্য ছিল না। তাই অনেক সময় কোচিং শেষ করে আমরা বাজারের এক ছাত্রীর বাসায় বসে টিভি দেখতাম। সেখান থেকে বাসায় ফিরতে ফিরতে সাড়ে ১১টার মতো বেজে যেতো। বাসায় গিয়ে ফ্রেশ হয়ে ঘুমাতে ঘুমাতে ১২টা থেকে সাড়ে ১২টা বাজতো। সকালে ঘুম থেকে উঠেই শুরু হতো আবার সেই পড়াশুনা। আমার পড়াশুনা, সংসার-সব দিকই নজর ছিল বাবার। এখানেই তার প্রতি শ্রদ্ধায় মাথা নত হয়ে আসে।

বাবার কাছ থেকে আমার পাওয়া প্রথম উপহার একটি সোনার চেইন। ক্লাস এইটে বৃত্তি পাওয়ার উপহার। বৃত্তি পাওয়ার পর খুশিতে বাবার চোখেমুখে যে আনন্দ দেখেছিলাম তা আজও ভুলতে পারিনি। সেদিন বাবার দিকে তাকিয়ে মনে হয়েছিল, এমন খুশি জীবনে তিনি আর কখনোই হননি। শুধু বাবার ইচ্ছাকে সফল করতে এসএসসিতেও এলাকায় সর্বোচ্চ রেজাল্টাই উপহার দিয়েছিলাম।

আমরা তিন ভাই-বোন। বয়সের ফারাক কম হওয়ায় প্রায় একসঙ্গেই তিনজন মানুষ হয়েছি। সবার পড়াশুনার খরচের পাশাপাশি সংসার সামলানো বাবার জন্য অনেক কষ্টের ছিল। তারপরও তিনি হাসিমুখে সব মেনে নিয়েছিলেন। পূরণ করেছেন সব চাহিদা। তবে বাবার সেই কষ্ট আজ বৃথা যায়নি। আমরা বাবার মান রেখেছি। তাকে খুশি করার সাধ্যমতো চেষ্টা করেছি। আজও করে যাচ্ছি।

বাবার কষ্টের কাছে আমাদের চেষ্টাটুকু হয়তো আজ কিছুই না। তারপরও কোনো বাবাই তো তার সন্তানের কাছ থেকে কিছু পাওয়ার আশায় কিছু করেন না। এমনকি সন্তানের কোনো আচরণে কষ্ট পেলেও কখনো তাদের অমঙ্গল কামনা করেন না। এজন্য বাবা শুধু বাবাই। তার কোনো বিশেষণ নেই। নেই কোনো তুলনা। তাইতো, যত দিন বাঁচবো শ্রদ্ধাভরে, গভীর ভালোবাসায় বাবা তোমাকে জানাই হাজারো সালাম।

লেখক: গণমাধ্যমকর্মী। 


ঢাকা/হাকিম মাহি

রাইজিংবিডি.কম

সর্বশেষ

পাঠকপ্রিয়