ঢাকা     শনিবার   ২৭ এপ্রিল ২০২৪ ||  বৈশাখ ১৪ ১৪৩১

করোনাকালীন সময়ে যুব সমাজের ভূমিকা

আজমেরী আলম নাতাশা || রাইজিংবিডি.কম

প্রকাশিত: ১০:০০, ৩০ জুন ২০২০   আপডেট: ১০:৩৯, ২৫ আগস্ট ২০২০
করোনাকালীন সময়ে যুব সমাজের ভূমিকা

করোনার করাল গ্রাসে আজ থমকে গেছে বিশ্ব, থমকে গেছে বিশ্ব অর্থনীতিও। বাংলাদেশে সর্বপ্রথম করোনা রোগী ধরা পড়ে ৮ মার্চ। সংক্রমণ রোধে ১৮ মার্চ থেকে বন্ধ ঘোষণা করা হয় বিশ্ববিদ্যালয়সহ দেশের সব শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান। সে হিসেবে এখন পযর্ন্ত ১০০ দিনেরও বেশি সময় ধরে দেশের সব শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান বন্ধ রয়েছে।

বাংলাদেশে বর্তমানে মোট জনসংখ্যার ৩০ শতাংশ যুব সমাজ, যা মোট জনসংখ্যার বিশাল একটা অংশ। কিন্তু সব প্রতিষ্ঠান বন্ধ থাকার কারণে তারা অনেকটা হেলাফেলা করে সময় পার করছে, যা অনেক সময় তাদের মানসিক স্বাস্থ্যেরও ক্ষতির কারণ হচ্ছে। এক্ষেত্রে তারা কিছু অনলাইন এবং অফলাইন ভিত্তিক কাজ করে দেশের প্রতি তাদের দায়িত্ব পালন করতে পারে। কারণ আমরা জানি ৫২’র ভাষা আন্দোলন থেকে শুরু করে পরবর্তী সব আন্দোলন-দুর্যোগের সময় প্রথম এগিয়ে এসেছে আমাদের যুব সমাজ।

করোনাভাইরাস সংকটকালীন সময়ে সবচেয়ে জরুরি বিষয় হচ্ছে সেচ্ছাসেবীমূলক কাজে নিজেকে নিয়োজিত করা। তরুণরাই পারবে এই সংকটকালে অসহায় ও আর্থিকভাবে অসচ্ছল মানুষের পাশে দাঁড়াতে। এই কোভিড-১৯ মহামারির সময়েও আমাদের যুব সমাজ পিছিয়ে নেই। বরাবরের মতো এবারও তারা এগিয়ে এসেছে এবং উল্লেখযোগ্য ভূমিকা পালন করছে, যা খুবই প্রশংসনীয়।

বাংলাদেশের মোট জনসংখ্যার এক-তৃতীয়াংশ যুবসমাজ। বাংলাদেশের যে সব তরুণ কর্মসংস্থানের মাধ্যমে অর্থনৈতিক খাতে অবদান রাখছেন তার মধ্যে কৃষিতে ২৪ শতাংশ, শিল্পতে ৩০ শতাংশ এবং সার্ভিসে রয়েছে ৪৬ শতাংশ। এর মধ্যে বেসরকারি প্রতিষ্ঠানে ২১.০৯ শতাংশ, হাউসহোল্ড এ ১৫.৫৯ শতাংশ, সরকারি প্রতিষ্ঠানে ৩.৩৮ শতাংশ, এনজিও ০.৭৬, ব্যক্তিগত পর্যায়ে ৫৮.২৪ শতাংশ এবং অন্যান্য সেক্টরে ০.৯৫ শতাংশ কর্মরত রয়েছে, যারা অর্থনীতিতে অবদান রাখছে। 

৫.৩ কোটির এই বিশাল তরুণ জনগোষ্ঠীকে দক্ষ ও প্রশিক্ষিত করে অর্থনৈতিক কর্মকাণ্ডে নিয়োজিত করাটাই এখন সবচেয়ে বড় চ্যালেঞ্জ। আমরা ও যুব সমাজ চাইলেই এই সংকোট কালীন সময়ে সমাজের ও দেশের প্রতি আমাদের ভূমিকা পালন করতে পারি।

আসুন জেনে নেই কীভাবে

১. পরিবর্তনের দূত হিসেবে কাজ করতে পারি। আমরাই সমাজ পরিবর্তনের অগ্রদূত। আমাদের হাত ধরেই আসবে পরিবর্তন।

২. সমাজে বর্তমান সময়ে কোভিট-১৯ নিয়ে প্রচলিত ভুল ও ভ্রান্তিকর তথ্যের বিরুদ্ধে কাজ করতে পারি। গুজব প্রতিহত করনে, যাতে মানুষ বিভ্রান্ত না হয়ে পরে।

৩. করোনাকালীন সময়ে দুস্থ ও অসহায় মানুষদের পাশে দাঁড়ানোর জন্য আর্থিক সহায়তার ব্যবস্থা করতে পারি, টাকা সংগ্রহ ও তা অসহায়দের মাঝে বিতরণের মাধ্যমে।

৪. সাধারণ মানুষের মাঝে সচেতনতামূলক ক্যাম্পেইন করতে পারি। যাতে করে মানুষ আরও সচেতন হতে পারে।

৫. আমরা ঘরে বসে মাস্ক এবং হ্যান্ড সেনিটাইজার, হ্যান্ডওয়াশ তৈরি করে আশেপাশের মানুষের মাঝে বিতরণ করতে পারি।

৬. এখন বিভিন্ন ধরনের অনলাইন কোর্স হচ্ছে সেসবে অংশগ্রহণ করতে পারি। এতে করে নিজের দক্ষতা বৃদ্ধি হবে এবং সামনের সময়গুলোতে নিজেকে প্রস্তুত করতে সহায়ক হবে।

৭. বিভিন্ন কিক্রেটিভ এবং ডিজাইনিং কোর্স করতে পারি, যা দক্ষতা বৃদ্ধিতে সহায়তা করবে।

৮. এখন রয়েছে উদ্যোক্তা হয়ে ওঠার দারুণ সুযোগ। বর্তমান সময়ে সবচেয়ে বড় সংকট হলো কর্মসংস্থান তৈরি করা, সেই সংকট মোকাবিলা করতে প্রয়োজন উদ্যোক্তা তৈরি করা, যা নিয়ে সরকারি বিভিন্ন উদ্যোগ এবং পরিকল্পনা ইতোমধ্যেই গ্রহণ করছে।

উদ্যোক্তা হওয়ার জন্য প্রয়োজন নতুন সৃষ্টিশীল আইডিয়া সেই আইডিয়াটাকে কীভাবে বাস্তবায়িত হবে সেটা নিয়ে পরিকল্পনা তৈরি করা। এই সকল বিষয়ে বিভিন্ন অনলাইন ভিত্তিক স্টার্টআপ অ্যান্ড এন্ট্রাপ্রেনারশিপ কোর্স রয়েছে, সেগুলোর মাধ্যমে যারা উদ্যোক্তা হতে চায়, তারা নিজেদের প্রস্তুত করতে পারি।

৯. স্বেচ্ছাসেবীমূলক কাজে নিজেকে নিয়োজিত করতে পারি। করোনাভাইরাস সংকটকালীন সময়ে সবচেয়ে জরুরি বিষয় হচ্ছে স্বেচ্ছাসেবীমূলক কাজে নিজেকে নিয়োজিত করা। তরুণরাই পারবে এই সংকটকালে অসহায় ও আর্থিকভাবে অসচ্ছল মানুষের পাশে দাঁড়াতে। এখনকার সবচেয়ে প্রয়োজনীয় বিষয় হচ্ছে কৃষকের পাশে দাঁড়ানো। নিম্ন আয়ের মানুষ যারা দেশকে বিভিন্ন সেবা প্রদান করে যাচ্ছে, তাদের পাশে দাঁড়াতে হবে এই সংকটে।

বাংলাদেশের খেটে খাওয়া মানুষের টাকায় আমাদের রাষ্ট্র পরিচালিত হচ্ছে, তাদের অর্থে আমরা পড়াশুনা করছি। এখনই সময় তাদের পাশে দাঁড়ানোর, সময় এখন আমাদের দায়িত্ব পালনের। এছাড়া আমাদের দেশে করোনায় আক্রান্তদের পাশে দাঁড়ানো, তাদের সেবা দান করা আমাদের নৈতিক দায়িত্ব।

১০. সোশ্যাল মিডিয়ার মাধ্যমে যুব সমাজ যৌথভাবে অনলাইন ভিত্তিক বা অন্যান্য অর্থনৈতিক উদ্যোগের পরিকল্পনা ও বাস্তবায়ন করতে পারে, যা সংকটকালীন ও পরবর্তী সময়ে আমাদের নিজেদেরকে স্বনির্ভর করে তুলবে ও পরবর্তীতে জাতীয় অর্থনীতির পুনরুদ্ধারে ভূমিকা রাখবে।

আমরাই জাতির আগামীর পথপ্রদর্শক, উন্নয়নের কর্ণধার ও সফলতার চাবিকাঠি, সেই তরুণদের প্রচেষ্টা যেকোনো দেশের জন্য মঙ্গল বয়ে আনবে। আর তরুণরা সফল হবে যদি তারা দৃঢ় মনোবল ধারণ করে।

তরুণদের ব্যাপারে মিশরের কবি ইবরাহীম নাজী বলেন, যখন চক্ষু ঘুমিয়ে পড়ে তখন আমরা যুবকরা ভোরে জাগা পাখির ন্যায় প্রত্যুষে জাগ্রত হয়ে ফজরকে অভ্যর্থনা জানাই। আমরা যুবকরা সবাই মিলে প্রকৃত মর্যাদা অর্জনে ঝাঁপিয়ে পড়ি। (জেনে রাখ) যে বিজয়ের জন্য সকাল সকাল ঝাঁপিয়ে পড়ে, সে বিজয় ছিনিয়ে আনে।

লেখক: শিক্ষার্থী, রাষ্ট্রবিজ্ঞান বিভাগ, জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়।

 

জবি/হাকিম মাহি

রাইজিংবিডি.কম

আরো পড়ুন  



সর্বশেষ

পাঠকপ্রিয়