ঢাকা     শুক্রবার   ২৬ এপ্রিল ২০২৪ ||  বৈশাখ ১৩ ১৪৩১

‘ফিরতে চাই আমার সুরের ক্যাম্পাসে’

মীর ইমরান আলী || রাইজিংবিডি.কম

প্রকাশিত: ১০:৩৪, ১৩ জুলাই ২০২০   আপডেট: ১০:৩৯, ২৫ আগস্ট ২০২০
‘ফিরতে চাই আমার সুরের ক্যাম্পাসে’

প্রত্যেকের কাছেই প্রিয় তার স্কুল, কলেজ কিংবা বিশ্ববিদ্যালয় ক্যাম্পাস। হোক তা টিনের চালা বা ভাঙা দরজার। হোক না তা ভাঙা জানালার। তবুও ক্যাম্পাস সবার দুর্বলতার স্থান। এইতো সেদিন। যখন দেশে করোনাভাইরাস দেখা মেলেনি। প্রতিদিন ভোর থেকে সন্ধ্যা পর্যন্ত নতুন সুরের বার্তা জানান দিতো আহ্ছানউল্লা বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয় (আবিপ্রবি) ক্যাম্পাস।

গেইট থেকে শুরু করে ক্যাম্পাসের প্রতিটি গাছ-পালা, চেয়ার, টেবিল, নতুন কিংবা পুরাতন দালানে যত্ন করে গাঁথা প্রতিটি ইট শিক্ষার পতাকা তুলে ধরে রাখতো।

আবিপ্রবিতে সপ্তাহের প্রায় প্রতিটি দিনই পাখির সুরের সাথে তাল মিলিয়ে বাজতো নানা সুর। সকাল শুরু হতো ‘আমার সোনার বাংলা, আমি তোমায় ভালোবাসি’ শব্দের সুরে। প্রতিটি ক্লাস, ক্লাসের বেঞ্চ যেন তার পূর্ণতা বহন করত।

অডিটোরিয়াম থেকে ভেসে আসতো শুদ্ধস্বর কবিতা মঞ্চের কবিতার সুর। নাট্য দলের নাটকের সংলাপের সুর। বিতর্ক মঞ্চে বিতার্কিকদের ঝাঁঝাল বক্তব্য। ক্লাস থেকে মাঠ। দালান থেকে দুর্বা ঘাস। নিয়ম থেকে অনিয়ম তুলে ধরাই ছিল সাংবাদিক সমিতির প্রতিদিনকার রুটিন। স্কাউট, ক্যাডেটদের পায়ের তীব্র শব্দে জানান দিতো উদ্যমতা। তেজ আর মহত্ত্ব। এমনই আমাদের আহ্ছানউল্লা বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়। এসব সুর থমকে আছে করোনার প্রভাবে।

শিক্ষার্থীদের আসা-যাওয়া। ক্লাস, ক্লাব গুলোর নতুন নতুন সুর থমকে গেলেও থমকে যায়নি আবিপ্রবি’র কৃষ্ণচূড়ার ফুল ফোঁটা। আকাশমনি গাছের গগণ ছুঁয়ে দাঁড়িয়ে থাকা। কোকিল ডাকার শব্দ ইত্যকার কত কি।

ক্যাম্পাসের হাওয়াভবনের ঠিক সামনে মৃত্যুর দিকে অগ্রসর হওয়া শিউলি ফুল গাছে এখন হয়তো নতুন কুঁড়ি জন্মেছে। পুষ্প কাননে হয়তো নতুন নতুন অজানা ফুলের মেলা চলছে। দুপুর হলেই হয়তো বিতর্কমঞ্চে চলে কাকের খোশগল্পের আড্ডা। ওদের বিরক্ত করার এখন কেউ নেই।

খা খা করছে চিরচেনা সেই বাদাম বিক্রির জায়গাটা। কিশোর ছেলে-মেয়েগুলো গোলাপ বা বেলি ফুলের মালা নিয়ে পুরো ক্যাম্পাস হেঁটে হেঁটে বিক্রি করে দু’বেলা দুমুঠো আহার জোগাতো। প্রায় দেখা যেতো ক্যাম্পাসের প্রথম গেটের দিকে পথ শিশুদের নিয়ে জন্মদিনের কেক কাটা হচ্ছে।

আচ্ছা শূন্য ক্যাম্পাসে এখনও কি ওরা আসে? সবসময় ব্যস্ত থাকা সি আর কী এখনো আগের মতো ব্যস্ত থাকে? আচ্ছা যে ছেলেটা প্রতিদিন সকালের ক্লাস মিস করতো আর ঘুম ঘুম চোখ নিয়ে ক্যাম্পাসে আসতো সে এখন অবশ্যই ঘুমানোর অনেক সময় পাচ্ছে! নাকি নতুন কোনো মাঠ, নতুন কোনো ঘাটের সন্ধান পেয়েছে?

কবে ফিরবো সেই চিরচেনা প্রিয় ক্যাম্পাসে! কবে আবার পাখির সুরের সাথে তাল মিলিয়ে শুদ্ধস্বর কবিতা মঞ্চের গান কিংবা বিতর্ক মঞ্চের যুক্তিনির্ভর বক্তব্যে প্রতিপক্ষকে ল্যাঙ মেরে ফেলে দেয়ার শব্দ শুনবো। কবে আবার সাংবাদিক সমিতির সেই তরুণরা মাঠে বিচরণ করবে? কবেই বা ‘আমার সোনার বাংলা, আমি তোমায় ভালোবাসি’ শব্দে মুখরিত হবে আমার ক্যাম্পাস?

এমন হাজারো প্রশ্ন আহ্ছানউল্লা বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের হাজারো শিক্ষার্থীর মনে। অপেক্ষা। একদিন সব স্বাভাবিক হয়ে যাবে। আমরা ফিরে যাবো প্রিয় আবিপ্রবি’র সুরের ক্যাম্পাসে।

লেখকঃ শিক্ষার্থী, আহ্ছানউল্লা বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়।

 

 

ঢাকা/ মাহফুজ

রাইজিংবিডি.কম

আরো পড়ুন  



সর্বশেষ

পাঠকপ্রিয়