ঢাকা     শনিবার   ২৭ এপ্রিল ২০২৪ ||  বৈশাখ ১৪ ১৪৩১

‘নতুন প্রজন্মকে স্বপ্ন দেখতে হবে’

রাশিদুল ইসলাম || রাইজিংবিডি.কম

প্রকাশিত: ১০:৪৭, ১৪ জুলাই ২০২০   আপডেট: ১০:৩৯, ২৫ আগস্ট ২০২০
‘নতুন প্রজন্মকে স্বপ্ন দেখতে হবে’

ছোটবেলায় সবারই কম-বেশি ‘আমার জীবনের লক্ষ্য’ রচনা লিখতে হয়েছে। সেই সময়টায় অনেকেই জানে না, সে কী হতে চায়। তবে সবাই স্বপ্ন দেখতো। কেউ ইঞ্জিনিয়ার, কেউ ডাক্তার, কেউবা শিক্ষক, পাইলট কিংবা অভিনেতা হওয়ার। কিন্তু ধীরে ধীরে দেখা স্বপ্নগুলো যেন ছোট হয়ে আসে।

তখন সবাই বিসিএস নামক লক্ষ্য নিয়ে এগিয়ে যায়। সবার স্বপ্ন যেন এক সুতোয় বাঁধা পড়ে। লক্ষ্য পূরণে কেউ হয় সফল। কেউ ব্যর্থ। আর এই ব্যর্থতার পেছনে একটাই কারণ- নতুন প্রজন্মের স্বপ্নের সীমাবদ্ধতা।

মনে হয়, তারা যেন স্বপ্ন দেখতে ভুলে গেছে। তারা অনেকেই মনে করে স্বপ্ন মানেই একটি নিছক কল্পনামাত্র। কিন্তু আসলে তা নয়। স্বপ্ন মানেই বাস্তব। স্বপ্ন মানেই গন্তব্য। আমি কোথায় যেতে চাই- তার নাম স্বপ্ন। আর আমাদের ছোট ছোট ভাবনা। ছোট ছোট স্বপ্ন। আর ছোট ছোট কাজের সমষ্টিই জীবন। প্রতিটি চিন্তা কিংবা প্রতিটি স্বপ্ন প্রভাবিত করে জীবনকে। তাই জীবনের লক্ষ্য পূরণে স্বপ্ন দেখতে হবে। স্বপ্নটি হতে হবে বাস্তবতার চেয়ে বড়। ছোট করে স্বপ্ন দেখাটাও অপরাধ। আপনার চিন্তা, পরিকল্পনা থেকেই আপনার বাস্তবতার শুরু। বিশ্বাস যদি হয় ইস্পাত কঠিন, সফলতা আসবেই।

এ পি জে আবদুল কালামের বিখ্যাত উক্তি- স্বপ্ন তা নয়, যা তুমি ঘুমিয়ে দেখ। স্বপ্ন সেটাই যা তোমাকে ঘুমাতে দেয় না। মানুষ তার আশার সমান সুন্দর, আর স্বপ্নের সমান বড়। আসলে স্বপ্ন ছাড়া মানুষ বাঁচতে পারে না। আর বাস্তব স্বপ্ন ও তার পেছনে পরিশ্রম কখনই ব্যর্থ হয় না। কারণ স্বপ্নকে বিশ্বাসে রূপান্তরিত করতে পারলে তা অর্জন করাও সম্ভব হয়।

আপনি কি করতে পারেন? আপনার কি করতে ভালো লাগে?  পছন্দের কি বিষয়ে পড়াশোনা করছেন? ভেবেছেন? আপনি নিজেকে পাঁচ বছর পর কোথায় দেখতে চান? সেই জায়গায় নিজেকে পাওয়ার জন্য আপনি আজ কি করেছেন? আজকের কাজ আপনাকে আগামী দিনে ভূমিকা রাখতে পারবে তো? এই বিষয়গুলো নিয়ে ভাবতে হবে। পরিকল্পনা গ্রহণ করতে হবে। নিজের গন্তব্যে পৌঁছাতে নিজেকে তৈরি করতে হবে। আর এই সবের জন্য নিজের মতো করে স্বপ্ন সাজাতে হবে।

কারণ স্বপ্নহীন মানুষ বিভ্রান্ত। জীবন নদীতে সে হয় মাঝিহীন নৌকার মত। নদীতে নৌকা যেমন এদিক সেদিক ঘুরাঘুরি করে কিন্তু তীরে ভিড়তে পারে না। তেমনি মানুষও হোঁচট খেতে খেতে এগোয় বটে তবে যেহেতু তার কোনো গন্তব্য জানা নেই তাই কোথাও পৌঁছাতে পারে না। আমাদের দেশে অধিকাংশ ক্ষেত্রেই ছেলে-মেয়েদের স্বপ্নের মৃত্যু হয় এভাবেই।

এছাড়া আমাদের সমাজে তরুণরাও যে দেশ, মানুষ ও পৃথিবী বদলে ফেলতে পারে তার প্রচার-প্রচারণা তেমন একটা নেই। ফেসবুক, টুইটার, স্ক্রাইপি, ভাইবার ব্যবহারে তরুণরা প্রজন্ম নষ্ট হয়ে যাচ্ছে বলে আমরা হা-হুতাশ করছি। কিন্তু এগুলো ব্যবহার করেই তরুণরা যে আউটসোর্সিং করছে। অনলাইন শপিংয়ের মতো নতুন ধারণা সৃষ্টি করছে। বিদেশি গবেষকদের সঙ্গে ভিডিও কনফারেন্স করে গবেষণার জ্ঞানকে আদান-প্রদান করছে, সে বিষয়গুলো নিয়ে আমরা কিছুই বলছি না। সমাজের ধ্যান-ধারণায় তরুণ প্রজন্মের স্বপ্ন যেন বাঁধা পড়ছে।

তারা স্বাধীনভাবে স্বপ্ন দেখতে পারছে না। জ্যাক মা নামটি সবাই জানি। কিন্তু তাঁর স্বপ্নের মতো সফল হয়ে ওঠার গল্প আমরা কয়জন জানি! ছোটখাটো গড়নের চীনা মানুষটি এখন প্রায় ২৩০ বিলিয়ন ডলার মূল্যমানের কোম্পানি আলিবাবার প্রতিষ্ঠাতা। কিন্তু এই অর্জন এক দিনেই গড়ে ওঠেনি। একটার পর একটা স্বপ্নের পরেই এসেছে এই সফলতা। এই ব্যর্থ মানুষটি যে ঘুরে দাঁড়ানোর দৃষ্টান্ত তৈরি করেছেন, তা আমরা তরুণদের সেভাবে বলতে পারিনি।

আমরা চাইলেই ছোট ছোট উদ্যোগ নিয়ে তরুণদের জন্য ভাবতে পারি। তাদের সফলতার আর অনুপ্রেরণার গল্প শুনিয়ে খুব সহজেই তাদের মনকে বদলে ফেলতে পারি। হয়তো এ ধরনের একটি গল্পেই বদলে যেতে পারে জীবন। আর এতে করে নতুুন স্বপ্নের খোঁজে হয়তো দেখা যাবে হতাশ একজন তরুণ আশান্বিত হয়েছে। মাদকের নেশায় বুঁদ হয়ে থাকা একটি ছেলে মাদককে ‘না’ বলেছে। জঙ্গিবাদের সঙ্গে জড়িয়ে পড়া একটি ছেলে নতুন করে জীবন গড়ার স্বপ্ন দেখছে।

কারণ স্বপ্ন দেখা ও এর পেছনে চেষ্টা কখনোই ব্যর্থ হয় না। রাইট ভাতৃদ্বয় স্বপ্ন দেখতেন এমন এক যন্ত্র বানাবেন যাতে করে আকাশে ওড়া সম্ভব। তারা তৈরি করলেন প্লেন। সভ্যতার চেহারাই পরিবর্তন হয়ে গেল তাদের এই আবিষ্কারের ফলে। মার্কনি স্বপ্ন দেখতেন, স্রষ্টার শক্তিকে জয় করে কাজে লাগাবেন। তিনি যে ভুল স্বপ্ন দেখেননি তার প্রমাণ বেতার ও টেলিভিশন আবিস্কার। বাস্তবে পরাজয় স্বীকার না করলে কেউ পরাজিত হয় না। মানুষের প্রতিটি অগ্রগতির বাস্তব হওয়ার পূর্বে তা কল্পনায় গড়ে উঠেছিল ছোট-বড় আবিস্কার। চিকিৎসার নতুন খোঁজ। ইঞ্জিনিয়ারিং-এ বিজয়। ব্যবসায় সফলতা এসবই সত্যি হয়ে ওঠার পূর্বে তা ছিল স্বপ্ন মাত্র। মানুষ স্বপ্ন দেখতে না পারলে কিছু তৈরি করতে পারত না।

আমি কোথায় পৌঁছতে চাই সে সম্বন্ধে সুস্পষ্ট ধারণা থাকা চাই। আগে আমাদের স্বপ্ন দেখতে হবে। চারপাশে ছড়িয়ে আছে সফল হওয়ার অনেক গল্প। সেগুলোকে আলিঙ্গন করে আমাদের এগিয়ে যেতে হবে। তরুণ প্রজন্মের জন্য নিজেকে প্রতিষ্ঠিত করার অনেক দ্বার উন্মুক্ত। আজ তরুণদের সামনে সফল উদ্যোক্তা হওয়ার মাধ্যমে নিজের ও পরিবারের উন্নয়ন এবং বিশ্বের বিভিন্ন আর্থসামাজিক সমস্যাগুলো দূর করার সুযোগ রয়েছে। সুযোগ আছে দক্ষ ব্যবস্থাপক হিসেবে বিভিন্ন জাতীয়, আন্তর্জাতিক প্রতিষ্ঠানগুলোকে নেতৃত্ব দেওয়ার। শ্রম বাজারে রয়েছে চাকুরির চাহিদা।

নতুন প্রজন্মকে স্বপ্নের পরিধি বাড়াতে হবে। বিজ্ঞানী আইনস্টাইন যর্থাথই বলেছেন, “জ্ঞানের চেয়েও স্বপ্ন অনেক বেশি গুরুত্বপূর্ণ”। সময় এসেছে নতুন প্রজন্মকে তাদের দায়িত্ব, কর্তব্য ও করণীয় সম্পর্কে জানার। সে অনুযায়ী প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ নেওয়ার। এখন দরকার আমাদের গতানুগতিক দৃষ্টিভঙ্গির পরিবর্তন। এ পি জে আবদুল কালামের মতো করে বলতে চাই— স্বপ্ন বাস্তবায়িত না হওয়া পর্যন্ত তোমাকে স্বপ্ন দেখতে হবে।

লেখক: শিক্ষার্থী, রাষ্ট্রবিজ্ঞান বিভাগ, ইসলামী বিশ্ববিদ্যালয়।

 

 

ইবি/মাহফুজ

রাইজিংবিডি.কম

আরো পড়ুন  



সর্বশেষ

পাঠকপ্রিয়